বাংলা

তানজানিয়ার কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের দশক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

CMGPublished: 2024-01-25 18:48:03
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চব্বিশ বছর বয়সী কাও সিও ইউ হচ্ছে চেচিয়াং নোর্মাল ইউনিভার্সিটি’র আন্তর্জাতিক চীনা শিক্ষা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এবং অন্য ১৩ জন সহকর্মী একসঙ্গে তানজানিয়ায় ফিরে যান এবং এক বছর ধরে দার এস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন।

চারটি ক্লাসের চীনা ভাষার ঐচ্ছিক কোর্সের শিক্ষকতা নিয়ে কাও সিও ইউ বলেন, “প্রথমদিকে আমি একটু নার্ভাস হতাম। চারটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া খুব ভারী একটি কাজ।”

তবে চীনা ভাষা শেখার প্রতি স্থানীয় যুবকদের উৎসাহ ও আগ্রহ দেখে তিনি অচিরেই খুব অনুপ্রাণিত বোধ করেন। তিনি এই আফ্রিকান তরুণদের সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করার আশা করেন।

চাং সিও চেন দার এস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন পক্ষের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে দার এস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটটি দার এস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়, চীন আন্তর্জাতিক চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এডুকেশন ফাউন্ডেশন এবং চেচিয়াং নোর্মাল ইউনিভার্সিটি’র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। গত দশ বছরে চীন থেকে একশ’ জনেরও বেশি শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবক তানজানিয়ায় এসেছেন।

হামিদা সিফ আলাউই হচ্ছেন দার এস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা গবেষণা বিভাগের একজন ছাত্রী। তিনি বলেন, আমি চীনা ভাষা পছন্দ করি এবং এটি আমার কাছে জীবনের অগ্রগতি অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। ২০১৯ সালে তিনি সফলভাবে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বৃত্তির আবেদন করেন এবং চেচিয়াং নোর্মাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করার সুযোগ পান। তিনি এটিকে তার জীবনের ‘হাইলাইটের মতো মুহূর্ত’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

বত্রিশ বছর বয়সী আশা ফাম কামিস হচ্ছেন কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের একজন দেশীয় চীনা ভাষার শিক্ষক। একজন স্থানীয় তানজানিয়ান হিসেবে তিনি মনে করেন যে, চীনা ভাষা শেখার ফলে তার জীবন বদলে গেছে। তিনি বলেন, “চাইনিজ শিখতে এবং বৃত্তি নিয়ে চীনে পড়াশোনা করতে না পারলে আমি এখনও জাঞ্জিবারে একটি ছোট নৌকায় মাছ ধরতাম।”

আশা ফাম কামিস হেসে বলেন, “আমি ইতোমধ্যেই আমার ছেলেকে চীনা ভাষা শেখাতে শুরু করেছি।”

আশা ফাম কামিস আরও বলেন, “যেহেতু তানজানিয়ায় চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে, চীনা ভাষায় দক্ষ তানজানিয়ান প্রতিভাদের চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিন চীনের বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ করে এবং চাইনিজ জানা তানজানিয়ান শিক্ষার্থীদের খুঁজে পেতে চায়।”

তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, চীনা ভাষা শেখা তানজানিয়ার তরুণদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করতে পারে, তাই চীনা শেখানোর ক্ষেত্রে তার একটি দৃঢ় দায়িত্ববোধ আছে।

দার এস সালামের রাস্তায় অনেক স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইকেল চালিয়ে নারকেল বিক্রি করেন এবং তারা যখনই কোনও এশিয়ানকে দেখেন, তারা প্রায়ই বলেন, “নি হাও।”

চাং সিওচেন বলেন, “গত দশ বছরে আমরা তানজানিয়ায় ৬০ হাজারেরও বেশি চীনা ভাষার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এসব শিক্ষার্থী যে চীনা ভাষা শিখেছে, তা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের শেখাবে, ফলে আরও বেশি সংখ্যক স্থানীয় লোক চীনা ভাষা শিখবে।”

চাং সিওচেন বলেন, বিগত ১০ বছরে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চীন ও তানজানিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় বেগবান করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইনস্টিটিউট চীনা ভাষা শেখা ছাড়াও, বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করেছে, যেমন বসন্ত উত্সবের অনুষ্ঠান, চীনা ভাষায় বক্তৃতার প্রতিযোগিতা, চীনা সিনেমার সপ্তাহ প্রভৃতি। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তানজানিয়ার জনগণ আরো গভীরভাবে চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিক উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে পারবেন।

চাং সিও চেন আরও বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নের মাধ্যমে চীনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ চীনের বিশ্ববিদ্যালয় বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার এবং চাকরির সুযোগও পেয়েছেন। এসব অভিজ্ঞতা শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের গতিপথই বদলে দেয়নি, বরং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।”

কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের তানজানিয়া পক্ষের পরিচালক আলদিন মুতেবে মনে করেন, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট তানজানিয়ার তরুণদের চীনা ভাষা শিক্ষা, চীন বিষয়ক গবেষণা, প্রতিভা প্রশিক্ষণ, স্থানীয় শিক্ষকদের কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রের উন্নতিতে দুর্দান্ত অবদান রেখেছে।

তানজানিয়ার শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী কেনেথ হোজিয়া বলেন, “কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক বিনিময় বেগবান করা এবং দু’দেশের জনগণের আদান-প্রদানকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কেবল আমাদের কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধানে সাহায্য করেনি, কৃষি ও পর্যটনের উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রের উন্নয়নকেও এগিয়ে নিয়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn