বাংলা

অভাবী মানুষদের ‘উষ্ণ বাড়ি’ চেচিয়াংয়ের ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’

CMGPublished: 2023-10-19 15:17:08
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হুচৌ শহরের আনচি জেলায় এমন এক ধরনের সুপারমার্কেট রয়েছে, যেগুলো সাধারণ গ্রাহকদের জন্য কেনাকাটা করা এবং দাতব্য কর্মকাণ্ড চালানোর স্থান অন্যদিকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য উষ্ণ ‘বাড়ি’। স্থানীয় নাগরিকরা এই ধরনের সুপারমার্কেটকে ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

এখন একসঙ্গে আনচি জেলার ‘দাতব্য সুপারমার্কেটে’ ঘুরে বেড়াবো।

‘দাতব্য সুপারমার্কেটের’ প্রধান দোকানে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ৪০০ বর্গমিটারেরও বেশি আয়তনের সুপারমার্কেটে চাল, তেল, লবণ, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা আছে এবং সুপার মার্কেটের দাতব্য বিক্রয় এলাকার কোণে প্রায় নতুন পোশাক সুন্দরভাবে ঝুলিয়ে রাখা আছে।

চিয়াং চোংপিং টানা ৫ বছর ধরে আনচি জেলায় চাকরি করেন। তার ও স্ত্রীর মাসিক আয় স্থিতিশীল নয় এবং তাদের দু’জন সন্তানের লালন-পালন করতে হয়। সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর চিয়াং চোং পিং দম্পতি ‘দাতব্য সুপারমার্কেটের’ দেওয়া শপিং কার্ড পেয়েছেন এবং সুপারমার্কেটের বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছেন।

রোগে আক্রান্ত সিয়ে কুই লান আনজি জেলার একটি নিম্ন-আয়ের পরিবারের সদস্য। গত বছরের নভেম্বর মাসে আনচি জেলায় ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনি এবং জেলার আরও ৫ হাজারেরও বেশি নিম্ন-আয়ের পরিবার বিনামূল্যে সুপারমার্কেট থেকে দেওয়া পাঁচ শ’ ইউয়ান মূল্যের একটি লাল কার্ড এবং পাঁচ শ’ ইউয়ান মূল্যের আরেকটি সবুজ কার্ড পেয়েছেন।

সিয়ে কুই লান বলেন, ‘লাল কার্ড দিয়ে সুপারমার্কেটে চাল, ডাল ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারি এবং সবুজ কার্ড নিয়ে অনুদান হিসাবে দয়ালু মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া জিনিসপত্র কিনতে পারি।’

‘সুপারমার্কেটের সব পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যের। জেলার যে কেউ এ সুপারমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসতে পারে। একমাত্র পার্থক্য হলো সাধারণ নাগরিকদের কেনাকাটায় ভর্তুকি থাকে না।

সুপারমার্কেটের কর্মী তাই ইউন বলেন, “যদি আপনার সত্যিকার অসুবিধা থাকে, পকেটে একটি টাকাও না থাকে, তাহলে আমাদের সাথে নিবন্ধন করার পর আপনি বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে পারেন।”

আনজি জেলার সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর পরিচালক চিয়াং পিং বলেন, আনজি জেলায় বর্তমানে ৫টি জেলা বা থানা পর্যায়ের ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’ এবং ১৫টি গ্রাম-স্তরের ‘দাতব্য ছোট সুপারমার্কেট’ রয়েছে, যেগুলো জেলাজুড়ে ১০ হাজারেরও বেশি অভাবী মানুষকে সেবা দিচ্ছে। এর জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে গোটা জেলার ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’-এ প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৮শ জনের বেশি লোক আসে এবং প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ইউয়ান মূল্যের পণ্য বিক্রি হয়।

‘দাতব্য সুপারমার্কেট’ ‘দাতব্য সংস্থা প্লাস সাশ্রয়ী মূল্যের সুপারমার্কেট’ ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ দাতব্য সহায়তা সুনির্দিষ্ট ও টেকসই হয়েছে। সুপারমার্কেটের সকল মুনাফা সুপারমার্কেটের দৈনন্দিন কাজে ব্যয় করা হয়। আনজি জেলার চ্যারিটি ফেডারেশনের মহাপরিচালক লু উই মিন বলেন, গত বছরে সুপারমার্কেট প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১২ লাখ ইউয়ান মূল্যের সামগ্রী তারা অনুদান হিসাবে পেয়েছেন।

সুপারমার্কেটের কর্মী তাই ইউন বলেন, ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’ প্রতিষ্ঠার পর অনেক সরকারি বিভাগ অফিসের জিনিসপত্র কেনার জন্য এ সুপারমার্কেটকে বেছে নেয় এবং সবাই দাতব্যকে সমর্থন করার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিচ্ছে।

জানা গেছে, আনচি ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’ জেলার সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর উদ্যোগে পরিচালিত হয় এবং জেলার চ্যারিটি ফেডারেশন ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগসহ অন্যান্য বিভাগের অংশগ্রহণে চালানো হয়। অভাবী গোষ্ঠীগুলোকে ‘দাতব্য সুপারমার্কেটে’ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে সক্ষম করার জন্য আনচি জেলা প্রতি বছর ৮০ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ করে অভাবী গোষ্ঠীগুলোকে সাহায্য করার জন্য।

আনজি জেলার সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর পরিচালক চিয়াং পিং বলেন, “আমরা ‘দাতব্য সুপারমার্কেট'-এর কার্যকরিতা আরও উন্নত করব ও পূর্ণাঙ্গ করে তুলবো, এবং ‘দাতব্য সুপারমার্কেট’কে একটি ব্যাপক ও সার্বিক দাতব্য পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো, যা দাতব্য তহবিল সংগ্রহ, সামাজিক সহায়তা, স্বেচ্ছাসেবক পরিষেবা, বিশেষ পণ্য বিক্রয়, দাতব্য সংস্কৃতি এবং অন্যান্য ফাংশনগুলোকে একীভূত করবে। যারা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের আরও ভালবাসা ও সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করবো আমরা।”

লিলি/রহমান

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn