বাংলা

বিদেশিরা কেন চীনে আসতে চান?

CMGPublished: 2023-05-25 16:14:03
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বিদেশিরা কেন চীনে আসতে চান?এ নিয়ে আপনি কখনও কি চিন্তা করেছেন? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো, কেমন?

তবে, প্রথমে অন্য একটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করব। আন্তর্জাতিক সমাজ মানে কি?পণ্ডিতগণের মতে, যখন বেশ কিছু দেশ বুঝতে পারে যে তাদের অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধ আছে, তারা সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলে এবং একটি সাধারণ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তখন তারা একটি সমাজ গঠন করে। একেই মোটা দাগে ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ বলা হয়।

এর বিপরীতে, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলকভাবে সহজ। দেশের বাইরের বিশ্বকে সাধারণত ‘আন্তর্জাতিক সমাজের’ আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্পষ্টতই, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ দেশের বাইরে সীমাবদ্ধ। এটি ‘আমাদের চারপাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ ধারণাটির তাত্ত্বিক অভিনবত্ব এবং ব্যবহারিক মূল্যকে তুলে ধরে। বিশাল বাহ্যিক বিশ্ব এবং জটিল একাডেমিক ধারণার তুলনায় ‘আমাদের চারপাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ বলতে সাধারণত ‘আমাদের চারপাশে’ বিদেশি গোষ্ঠীকে বোঝায়। তাদের সঙ্গে আমাদের অফলাইনে সরাসরি যোগাযোগ এবং অনলাইন ‘ভার্চুয়াল যোগাযোগ’ রয়েছে।

এই দৃষ্টিভঙ্গি ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ ধারণাটিকে সহজ করে তোলে। ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ আসলে একটি বিমূর্ত গোষ্ঠী নয়, যার সাধারণ মানুষের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই। একে অনেক দূরে বলে মনে হলেও এর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে।

বৈদেশিক উন্মুক্ততা ও আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানের ক্রমাগত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ‘আমাদের চারপাশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ অধিক থেকে অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে এবং সাধারণ চীনা জনগণের সাথে আরও বেশি সংযোগ স্থাপন করেছে। তারা আমাদের সহকর্মী, প্রতিবেশী, শিক্ষক, ছাত্র ও বন্ধু হতে পারে এবং কেউ কেউ আমাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও স্থাপন করেছে এবং পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠেছে।

‘ছোট পণ্যের রাজধানী’ অর্থাৎ ই’উকে একটি উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। কারণ বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন রঙের, দেশের, জাতির, সংস্কৃতির এবং ধর্মবিশ্বাসের লোকেরা এখানে গাড়ি, বাড়ি কিনতে, বিয়ে করতে, বসতি স্থাপন করতে এবং সন্তান ধারণ করতে এসেছেন। এই বছরের শুরু থেকে ই’উ শহরের বিদেশি বাসিন্দাদের সংখ্যা ১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে, যা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের স্তরে ফিরে এসেছে। এই সংখ্যা এখনও বেড়ে চলেছে।

কাসেন হলেন একজন ইয়েমেনি ছাত্র। তিনি বণিকদের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ছোটবেলা থেকেই তার পরিবারের সাথে নিজের জন্মস্থান এবং ই’উয়ের মধ্যে যাতায়াত করতেন। এখন তিনি ই’উ শহরে ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স অধ্যয়ন করছেন এবং লাইভ সম্প্রচারসহ উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে চীনা পণ্য ও সংস্কৃতি প্রচার করার পরিকল্পনা করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি চীনে বড় হওয়া একজন বিদেশি। আমি চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং কিছু অবদান রাখতে চাই।’ কাসেনের বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিক অনুভূতি ‘চারপাশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ অস্তিত্বের জানান দেয়।

বর্তমানে চীনের উপর ভিত্তি করে চীনা সভ্যতার গল্প বলা এবং বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্য, সুন্দর এবং সম্মানজনক চীনের চিত্র উপস্থাপন করা আমাদের জন্য একটি কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অবশ্যই গভীরভাবে বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও কার্যক্রম চালু করার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের আদান-প্রদান এবং জনগণের বন্ধনকে উন্নত, বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের বৃত্তকে প্রসারিত করতে হবে।

আসলে আমাদের চারপাশের ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ সমাজ আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে বিদেশি বন্ধুরা আমাদের পাশে আছেন এবং ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ আমাদের পাশে বিরাজ করছে। তারা চীনে কর্মরত আছেন এবং লেখাপড়া করছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, চীন সরকার এবং চীনা জনগণের প্রতি তাদের মতামত ও মূল্যায়ন সব সময়ই আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলছে। তাদের মুখে বলা কথা চীনকে প্রাণবন্ত এবং বাস্তববাদী করছে এবং তাদের কথায় অনন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি রয়েছে। বলা যায়, পাশের আন্তর্জাতিক সমাজ হলো চীনা গল্পের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী।

নোইয়াং লুওনা টানা ৪১ বছর ধরে চীনে বাস করছেন। তিনি এখন শাংহাই শহরে জীবনযাপন করছেন। তার বাসা হোংছিও রাস্তায় অবস্থিত এবং হোংছিও রাস্তাকে ‘ছোট জাতিসংঘ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ওখানে ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের লোকেরা বাস করছেন এবং সেখানকার চীনের মূল-ভূভাগের বাইরে থেকে আসা লোকদের অনুপাত ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

লুওনা সক্রিয়ভাবে নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করেন এবং চীনের আইন প্রণয়নকারী বিভাগ তার বেশ কয়েকটি প্রস্তাব ও মতামত গ্রহণ এবং আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

তার আহ্বানে আশেপাশের আরও বেশি বিদেশি বাসিন্দা কমিউনিটির উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছেন। তারা বহু বছর ধরে চীনে বাস করেন এবং চীনের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের প্রক্রিয়ার সাক্ষী এবং এতে অংশগ্রহণও করেছেন। তারা ‘চীনা গল্পের’ অংশগ্রহণকারী, শুধু সাক্ষী নন। তাই তাদের বলা চীনা গল্প আরও সত্যিকার এবং মনোমুগ্ধকর হবে।

তা ছাড়া, ‘আশেপাশের আন্তর্জাতিক সমাজ’ হলো চীনা গল্পের শক্তিশালী প্রচারক। সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম এন ব্রাউন বহুবার চীনের অনেক জায়গা ভ্রমণ করেছেন। ‘চীনের ৮০ হাজার কিলোমিটারের যাত্রা’ শিরোনামের বইটিতে ২০ জন পরিশ্রমী চীনা জনগণের গল্প তুলে ধরা হয়।

মার্কিন কৌতুক অভিনেতা জেসি আপেল চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হাস্যরস নিয়ে গবেষণা করতে চীনে এসেছেন এবং ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র কমেডি কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি নিজের চীনে থাকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোতে চীনের চায়নিজ শেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তা ছাড়া, রাজ গালোর নামে একজন বিদেশি ইন্টারনেট সেলেব্রিটি দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের রাস্তায় ঘুরে সাধারণ চীনাদের সাক্ষাৎকার নেন।

মার্ক লেভিনে যুক্তরাষ্ট্রের লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে চীনা গল্প বলেন। এসব লোক চীনা গল্পের শক্তিশালী প্রচারক।

অবশ্যই ‘আন্তর্জাতিক সমাজের’ একটি অংশ হিসেবে ‘পাশের আন্তর্জাতিক সমাজ’ অথবা বিদেশি বন্ধুদের আমাদের সঙ্গে বিনিময়ের প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক। তবে যত বেশি দ্বন্দ্ব থাকবে, তত বেশি প্রচেষ্টা এবং সংলাপের প্রয়োজন হবে।

চীনারা ‘বৈচিত্র্য থাকলেও সম্প্রীতি বাস্তবায়ন করার’ ধারণা পোষণ করেন। বিভিন্ন সভ্যতার পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সুরেলা সহাবস্থানের প্রচারের পক্ষে থাকে। ফলে সভ্যতার বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষা বিভিন্ন দেশের মানুষের মৈত্রীর সেতু, মানবজাতির অগ্রগতিকে এগিয়ে যাওয়ার চালিকা শক্তি এবং বৈশ্বিক শান্তি রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হবে।

তাই ‘আশেপাশের আন্তর্জাতিক সমাজের’ সঙ্গে যোগাযোগের সময় সরাসরি সমস্যা ও দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হতে হবে। এই গ্রুপটিকে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ, প্রাণবন্ত এবং কার্যকর বহনকারী ও বিনিময়কারী এবং মতৈক্যের নির্মাতা হিসেবে নেওয়া উচিৎ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn