বাংলা

১২ বছর লেন্স দিয়ে প্রকৃত ফুকুশিমাকে রেকর্ড করেন টোডা

CMGPublished: 2023-03-23 14:47:27
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

২০১১ সালের ১১ মার্চ পূর্ব জাপানে ভূমিকম্পের পর থেকে ফটোগ্রাফার টোডা শিনহাইড, যিনি নিজেও একজন ফুকুশিমার বাসিন্দা, ফুকুশিমার বিপর্যয়-কবলিত এলাকার ছবি তোলায় দিকে মনোনিবেশ করেছেন। তিনি ভবিষ্যতের একদিনে ফুকুশিমার বাসিন্দাদের আবার শান্তিপূর্ণ জীবনে ফিরে যাওয়ার সাক্ষ্য বহন করতে এবং ছবি তোলার আশা পোষণ করেন। তবে ফুকুশিমার পারমাণবিক দূষিত পানি নিষ্কাশন সংক্রান্ত খবর বের হলে তিনি অনুভব করেছেন যে তার আশা পূরণ হওয়া কঠিন।

চলতি বছর ৭৫ বছর বয়সী টোডা শিনহাইড ফুকুশিমা প্রিফেকচারের মিহারু টাউনে বসবাস করছেন। তিনি মূলত একজন প্রতিকৃতি ফটোগ্রাফার ছিলেন। ওই ভূমিকম্পের পর তিনি ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার বিপর্যয়ের এলাকায় তার ক্যামেরা ফোকাস করা শুরু করেছিলেন। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। তিনি বলেছিলেন যে ‘ভূমিকম্পের পর দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় তার দেখা একটি ছোট্ট মেয়ের কথা তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘সেই সময় প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির একটি ছোট্ট মেয়ে আমার কাছে এসেছিল, এবং সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, দাদা, আমি কি বড় হয়ে পাত্রী হতে পারি? আমি তখন তাকে কীভাবে উত্তর দেব তা জানতাম না। প্রায় ৩০ সেকেন্ডের জন্য নীরব ছিলাম এবং অবশেষে আমি যা বললেন তা হল ‘দুঃখিত’।

এর পর টোডা শিনহাইড আর সেই ছোট্ট মেয়েটিকে দেখেননি, তবে তিনি একটি ইচ্ছা করেছিলেন: মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার দুর্যোগ এলাকায় প্রতিদিনের পরিবর্তনগুলো রেকর্ড করা। গত ১০ বছরে তিনি পারমাণবিক দুর্যোগ-কবলিত এলাকায় শত বার গিয়েছেন এবং কয়েক শ’ ছবি তুলেছেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি যখন প্রথমে দুর্গত এলাকায় গিয়েছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে অতীতের কোলাহলপূর্ণ রাস্তাগুলো ‘ভূতের শহরে’ পরিণত হয়েছিল এবং তিনি খুব হতবাক হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি পারমাণবিক বিপর্যয়-কবলিত অঞ্চলে প্রথমবার নির্জন রাস্তা দেখে আমি হতবাক হয়েছিলাম। শুধু বাতাসের শব্দ এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শাটারের শব্দ শুনেছি। আমি যখন চোখ বন্ধ করলাম, তখন মনে হচ্ছিলো বাতাস বইতে পারে এমন দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিলাম।

এখন তিনি প্রায়ই পুরো জাপান জুড়ে বক্তৃতা এবং ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, যাতে জনসাধারণের কাছে দুর্গত এলাকার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরা যায়। দুর্গত এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী জীবন তাকে স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। তিনি বলেন, ফুকুশিমার অনেক জায়গায় বিকিরণের মাত্রা এখনও বেশি। এই পরিস্থিতিতে জাপান সরকার তাড়াহুড়া করে আশ্রয়স্থলের অবরোধ তুলে নিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চায়, তা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন।

টোডা শিনহাইড বলেন, ‘এমনকি এখনও ফুকুশিমার কিছু জায়গা আছে যেখানে বিকিরণ স্তর প্রতিঘণ্টায় ১০ মাইক্রোসিয়েভার্টে পৌঁছেছে, এবং গড় বিকিরণ স্তর প্রতিঘণ্টায় ৬ মাইক্রোসিয়েভার্টে সর্বত্র দেখা যায়। তবে জাপানের গণমাধ্যম কখনও এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। কয়েক দশক পর স্থানীয় জনগণ মনের শান্তি নিয়ে সেখানে আবার বসবাস করা পর্যন্ত দুর্গত এলাকার প্রকৃত পুনরুজ্জীবন শুরু করা উচিৎ, সেই সময় সত্যিকার পুনরুজ্জীবন হবে বলে আমি মনে করি।

জাপান সরকার এবং টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির সাগরে পারমাণবিক দূষিত পানি নিষ্কাশনের সিদ্ধান্তে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হন। তিনি মনে করেন যে একবার পারমাণবিক দূষিত পানি সমুদ্রে নিঃসৃত হলে-তা অনিবার্যভাবে স্থানীয় মৎস্য, কৃষি এবং পশুপালনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করবে।

তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক দূষিত পানির তথাকথিত তরলীকরণ আসলে কথার নাটক মাত্র, কারণ বিষাক্ত জিনিস পাতলা করার পরও বিষাক্তই থেকে যায়। পারমাণবিক দূষণকারী সমুদ্রের জলের সাথে প্রবাহিত হবে এবং সমগ্র বিশ্বের মহাসাগরগুলো দূষিত হবে।’

ভবিষ্যতে টোডা ফুকুশিমার একবিন্দু পরিবর্তন রেকর্ড করা চালিয়ে যেতে পারেন। দূষিত পানি সাগরে ফেলার পর ফুকুশিমাবাসীর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন কি পূরণ হবে? তিনি বলেন, তিনি ফুকুশিমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই হতাশ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn