বাংলা

গ্রামীণ পুনরুত্থান ক্যামেরায় ধারণ করেন লু হাই তোং

cmgPublished: 2023-01-05 17:02:13
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

শীতকালে প্রচণ্ড বাতাস বইছে। চীনের হ্যবেই প্রদেশের হানতান শহরের শে জেলায় ৪৬ বছর বয়সী ফটোগ্রাফার লু হাই তোং ঠাণ্ডা আহবাওয়া উপেক্ষা করে ক্যামেরা নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি থেকে বের হন।

তিনি বলেন, চমত্কার আহবাওয়া তোমাকে অপেক্ষা করতে পারে না। তাই এক মিনিট এমকি এক সেকেন্ডও মিস করতে চাই না। দেখুন, সকালের আলোতে গ্রাম, সোপানযুক্ত ক্ষেত্র এবং রাস্তা, কত সুন্দর লাগে। শে জেলার ওয়াং চিন চুয়াং সোপানযুক্ত ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে লু হাই তোং শীতকালীন পাহাড়ি গ্রামের সুন্দর দৃশ্য রেকর্ড করতে ড্রোনের ক্যামেরা বোতামটি আলতো করে টিপেন।

লু হাই তোং মনে করেন, কেবল রাস্তায় আপনি সুন্দর দৃশ্যের সম্মুখীন হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০২ সালে পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এসব গ্রামের ছবি তোলা শুরু করি। বিশ বছরের মধ্যে আমি থাইহাং পর্বতমালার গভীরে অবস্থিত শতাধিক গ্রামে ভ্রমণ করেছি এবং গ্রামীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রতিফলিত করে এক লাখেরও বেশি ছবি তুলেছি।’

লু হাইতোং বলেন, তিনি নস্টালজিয়াকে নিজের উপায়ে মনে রাখতে চেয়েছিলেন এবং গ্রামীণ ফটোগ্রাফারের দৃষ্টিকোণ থেকে থাইহাং মাউন্টেন ভিলেজে পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়াকে রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংক্ষিপ্ত ভিডিওগুলোর জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলকে রেকর্ড করার পদ্ধতি পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে তিনি তার প্রথম ড্রোন পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে শুরু করেন। এভাবে এক একটি ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রাম তার কাজের সাথে সাথে ইন্টারনেটে বিখ্যাত হয়ে উঠে।

শে জেলার কেং ল্য থানার তাই ওয়া গ্রাম হলো একটি ঐতিহ্যবাহী ‘পাথরের গ্রাম’। গ্রামের বাড়িঘর প্রায় সবই পাথরের তৈরি, সহজ ও প্রাকৃতিক।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘পাথরের রাজ্যে ধীর জীবন—তাই ওয়া গ্রাম’ নামে লু হাই তোংয়ের সৃষ্ট ভিডিও ইন্টারনেট প্লাটফর্মে নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারপর তা ওয়া গ্রামে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। আগে এমন একটি ছোট গ্রামের কথা কেউ জানতো না, এখন এটি দর্শনীয় এক স্থানে পরিণত হয়েছে।

২০১৯ সালের পহেলা মে ছুটি এবং জাতীয় দিবসের ছুটির সময় বিভিন্ন স্থান থেকে তা ওয়া গ্রামে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায় এবং গ্রামের ফার্মহাউস ইনে ভিড় লেগে ছিলো। ২০১৯ সালে তা ওয়া গ্রামে পর্যটনের মোট আয় ২০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। পর্যটন শিল্পের ওপর ভিত্তি করে ১২৫ জন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন এবং গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ৬ হাজার ইউয়ান বেড়েছে।

তা ওয়া গ্রামকে ক্যামেরায় ধারণ করতে লু হাই তোং ৩ বছর সময় ব্যবহার করেছেন। তিনি যথাক্রমে ১৫০ বার গ্রামে গিয়েছেন, বসন্তকাল, গরমকাল, শরত্কাল এবং শীতকাল, যাই হোক, লোকেরা তার ছায়া দেখতে পারেন। তা ওয়া গ্রামের মতো আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম গ্রামীণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পর্যটন বিকাশ শুরু করে এবং জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে।

ছিংচাং নদীর পাশে অবস্থিত চুয়াং শাং গ্রামের ছবিগুলো হলো লু হাই তোংয়ের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পকর্ম। রেপসিড ফুলের সোনালী সাগর, সুন্দর ধানের ক্ষেতের চিত্রকর্ম, বিস্তীর্ণ ছিংচাং নদী ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড পার্ক...এখানে লু হাই তোং তার নিজস্ব ফটোগ্রাফিক কৌশল ব্যবহার করে সারা বছর ধরে রাজকীয় দৃশ্য ধারণ করেছেন। বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা আকৃষ্ট হয়ে ধান ক্ষেতের চিত্র দেখতে এবং বিশেষ সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে এখানে এসেছেন।

আস্তে আস্তে লু হাই তোং গ্রামবাসীদের ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দশাধিক কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে গ্রামে ছবি তোলার জন্য মাঝেমাঝে তাকে খাওয়ানোর আমন্ত্রণ জানান গ্রামবাসীরা। শে জেলার চুয়াং শাং গ্রামের সিপিসি’র শাখা সম্পাদক লিউ ফাং মিং বলেন, ‘হাই তোং আমাদের গ্রামের প্রচারকারী। তার জন্য গ্রামের পর্যটন আরো ভালো হয়ে যাচ্ছে।’

আজ বেশ কয়েক বছর উন্নয়নের পর চুয়াংশাং গ্রাম একটি পর্যটন গ্রামে পরিণত হয়েছে, যা আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের সাথে একটি ‘কৃষি পর্যটন শিল্প করিডোর’-এ সংযুক্ত হয়েছে। এখানে শুধুমাত্র ঠাণ্ডা পানির মাছ চাষ এবং সবজির চাষসহ শিল্পই নয়, বরং ফার্মহাউস ইন ও দর্শনীয় পার্কসহ অবসর কৃষির বিভিন্ন ধরণের নতুন ফর্মও রয়েছে, যাতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং তৃতীয় শিল্পগুলোর সমন্বিত বিকাশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

গত ২০ বছরে লু হাই তোং-এর শুটিং সরঞ্জাম ফিল্ম ক্যামেরা থেকে সিঙ্গাল ল্যান্স রিফ্লেক্স বা এসএলআর ক্যামেরা এবং ড্রোনে পরিবর্তন হয়েছে। তার লেন্সে ছোট পাহাড়ি গ্রাম আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে এবং গ্রামবাসীদের জীবন আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে।

একজন স্থানীয় ফটোগ্রাফার হিসেবে এখন তৌইন নামে নতুন মিডিয়ার ফ্লাটফর্মে লু হাই তোংয়ের দুই লাখেরও বেশি ভক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি শৈশব থেকেই থাইহাং পর্বতমালায় বড় হয়েছি এবং আমার শিকড় এখানে রয়েছে। আমি আমার নিজের লেন্স দিয়ে এটি রেকর্ড করতে ইচ্ছুক, যাতে আরও বেশি লোক এই জমির প্রেমে পড়ে।’লিলি/এনাম/রুবি

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn