বাংলা

সি’আনের অধিবাসী এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর গল্প

CMGPublished: 2022-11-17 13:23:56
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

দেব রাতুরি নামের একজন ভারতীয় লোকআঠারো বছর আগে রাতুরি কুংফু চলচ্চিত্র দেখতে চীনে এসেছিলেন এবং বর্তমানে চীনে তিনি ৮টি রেস্তোরাঁর মালিক হয়েছেন। তিনি সুস্বাদু খাবারকে বাহক বানিয়ে চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বিনিময়ের সেতু নির্মাণ করেছেন। তিনি চীনের সুযোগ এবং উন্নয়নও অনুভব করছেন।

‘আগে আমি চীনে ৬ মাস থাকতে চেয়েছিলাম এবং কিছু কুংফু শিখতে চেয়েছিলাম। কারণ আমি ভাবতাম যে এখানকার প্রত্যেক মানুষ কুংফু চর্চা করতে পারেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিত বিষয় হল আমি এখানে টানা ১৮ বছর ধরে আছি এবং আমি চীনকে ভালোবেসে ফেলেছি।’

২০০৫ সালে দেব চীনে এসেছেন এবং তিনি চীনের অনেক শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন। চীনের প্রাণবন্ত শক্তি ও উন্নয়নের আকর্ষণীয় শক্তিতে আকৃষ্ট হন তিনি। ২০১৩ সালে তিনি সি আন শহরে নিজের প্রথম ভারতীয় রেস্তোরাঁ পরিচালনা শুরু করেন। কয়েক বছরে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় অনেক আয় করেন।

‘প্রথমে আমি অনেক বিজ্ঞাপন দিয়েছি--যেমন, টিভিতে বা ইন্টারনেটে বলেছি সি আন একটি আন্তর্জাতিক শহর। এখানে আপনার পছন্দের খাবার পেতে পারেন। তবে, এখন সবার স্বাদও অনেক আন্তর্জাতিক। আমাদের বেশি বিজ্ঞাপন দেয়ার দরকার নেই। এখন আমি সি’আন শহরে ৫টি ভারতীয় রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছি। আরও ৩টি চীনা খাবারের রেস্তোরাঁও রয়েছে আমার।’

রাতুরি মনে করেন, চীনের ভালো ও সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ তাকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। যেমন, রেস্তোরাঁ খোলার শুরুতে তিনি শিল্প সি’আন শহরের সুবিধা উপভোগ করেছেন। মহামারীর সময় স্থানীয় সরকার তার রেস্তোরাঁর ভাড়া এবং সম্পত্তি খরচ মওকুফ করেছে।

‘চীনে আসার পর আমি খুব ভালোভাবে কাজ করেছি। সবাই তোমাকে সাহায্য ও সমর্থন করলে তুমি ব্যর্থ হবে না। তাই আমি সব সময় আমার পরিচিত বিদেশি বন্ধুদের বলি, তোমরা শিল্প স্থাপন করতে চাইলে সি’আনে আসতে পার। সি’আনে শিল্প শুরু করলে তুমি সফল হবে।’

রাতুরির শিল্প সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের উন্মুক্ততা ও উন্নয়ন থেকে উপকৃত হয়েছে। ভারতীয় খাবার রান্না করার সময় মশলা ব্যবহার করতে হয়। আগে তার রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত মশলার অধিকাংশই ভারত থেকে আমদানি করতে হত এবং পরিবহন ফি অনেক বেশি ছিল। তবে, এখন চীনে আমদানি সম্প্রসারণের সাথে সাথে অধিক থেকে অধিকতর বিদেশি খাবারের উপকরণও চীনাদের টেবিলে দেখা যায়। ফলে রাতুরি সি’আন শহরের বাজারে খাঁটি ভারতীয় মশলা খুঁজে পান, যা তার রেস্তোরাঁ পরিচালনার খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাতুরি বলেন,

‘আমাদের ভারতীয় মশলার অনেক উপাদানই এখানে কেনা যেত না। তবে, এখন কারি মশলার ১৫টি উপাদানের মধ্যে কমপক্ষে ৮টি এখানে পাওয়া যায়। ফলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়েছে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে ইন্টারনেটের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। যা রাতুরির জীবনে সুবিধা বয়ে আনা ছাড়াও তার শিল্পের উন্নয়নে কল্যাণ বয়ে এনেছে। বাসায় বসে তিনি অন্য জায়গায় নতুন রেস্তোরাঁ খোলার খোঁজ-খবর নিতে পারেন। অনলাইনে পার্সেল অর্ডার করা যায়। মহামারীর সময়েও রেস্তোরাঁ ব্যবসায় খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

‘চীনের ইন্টারনেটের উন্নয়ন খুব দ্রুত হয়েছে। এখন আমি সবকিছুই সেলফোনে কিনতে পারি। তা পরের দিন বাসায় চলে আসে। সেলফোনে সব আছে--আপনি কোথায় যেতে চান, কি খেতে চান-তার সবই। এটি খুব সুবিধাজনক।’

রাতুরি এবং তার পরিবার সি’আন শহরে প্রায় ১০ বছর ধরে বাস করছেন। তিনি সব সময় নিজেকে পুরোনো ‘সি’আনবাসী’ মনে করেন। দশ বছর আগে চীনে এবং সি’আনে থাকা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

‘আমি মনে করি, একজন বিদেশিকে চীন সম্পর্কে জানতে চাইলে অবশ্যই সি’আন শহর থেকে শুরু করতে হবে। কারণ এটি হল রেশম পথের সূচনা-বিন্দু। এটি সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং ঐতিহাসিক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। আমি মনে করি, সি’আনবাসী খুব ভালো। তাই আমি এখান থেকে সরে যেতে চাই না।’

রাতুরির সন্তানরা সি’আন শহরে জন্মগ্রহণ করেছে এবং বড় হয়েছে। বর্তমানে তারা সি’আন শহরের প্রাথমিক স্কুলে পড়ছে। রাতুরি বলেন, তার সন্তানরাও তার মতো চীনকে ‘নিজের বাসা’ মনে করে।

তিনি বলেন,

‘গতবার আমি তাদেরকে নিয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। তারপর তারা আমাকে বলল, বাবা, আমরা বাসায় ফিরতে চাই। আমি তাদেরকে বললাম, ভারত তোমাদের বাসা। তারা বললো, না, সি’আন আমাদের বাসা। এখন আমার দুই সন্তান চীনা শিশুদের সঙ্গে সি’আন শহরের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তারা পুরোপুরি পুরোনো সি’আনবাসী হয়ে উঠেছে।’

রাতুরির কাছে আরও গৌরবের ব্যাপার হলো: চীনে নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে তার ‘কুংফু চলচ্চিত্রের স্বপ্নও’ বাস্তবায়িত হয়েছে। তার অভিনীত ২০টিরও বেশি চীনা চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের অনেকগুলোই কুংফু ফিল্ম।

রাতুরি বলেন, তিনি ভারত ও চীনের যোগাযোগ ও বিনিময়ের সেতু হতে চান। ফলে দু’দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা ও মৈত্রী গভীরতর হবে। চীনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি আশাবাদী।

রাতুরি বলেন,

‘আপনি দেখুন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের খুব ভালো উন্নয়ন হচ্ছে। আমি তার ভবিষ্যৎ দেখতে পারি। আগে আমি অনেক দেশে ঘুরেছি। তবে, আমি চীনে থাকতে চাই।’

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn