বাংলা

বিদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চীনা তথ্যচিত্র

CMGPublished: 2022-11-10 16:38:35
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

নভেম্বর ১০: চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের কর্ম-প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনা বক্তৃতা এবং চীনা বর্ণনা পদ্ধতির নির্মাণকে গতিশীল করা উচিত, চীনা গল্পগুলো ভালভাবে বলা উচিৎ, চীনা কণ্ঠকে ভালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া উচিৎ এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য, সুন্দর এবং সম্মানজনক চীনের চিত্র উপস্থাপন করা উচিৎ। বাস্তব জীবনের একটি ভিজুয়াল অভিব্যক্তি হিসেবে ডকুমেন্টারিগুলোর অনন্য সাংস্কৃতিক আবেদন রয়েছে। এগুলি চীনা সভ্যতার প্রচার ও প্রভাবকে উন্নত করার, চীনা সংস্কৃতি এবং সময়ের শৈলীর আন্তর্জাতিক প্রচার চালাতে এবং বিশ্বের কাছে প্রাচ্যের প্রজ্ঞার অবদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি এবং বাহক। চীনের আন্তর্জাতিক অবস্থার ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে চীনা গল্পগুলিকে ভালভাবে বলার প্রয়োজন আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই, চমৎকার তথ্যচিত্রের মাধ্যমে চীনের দীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি ও প্রযুক্তি, প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় দৈনন্দিন জীবন, চীনের মূলধারার মূল্যবোধ এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারণাকে তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক তাৎপর্য এবং দীর্ঘমেয়াদী ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।

সম্প্রতি বেইজিং পৌর সরকারের তথ্য কার্যালয়ের উদ্যোগে চীনা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় নির্মিত ধারাবাহিক ক্ষুদ্র তথ্যচিত্র ‘বেইজিংয়ের স্বাদ’ প্রকাশিত হয়। এতে বেইজিংকে কেন্দ্র করে ‘কি ধরনের একটি রাজধানী গড়ে তোলা যাবে এবং কিভাবে রাজধানী গড়ে তোলা যাবে’ এসব বিষয় তুলে ধরা হয়, যা দেশি-বিদেশি দর্শকদের মাঝে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া, শাংহাই বেতার ও টিভি কেন্দ্রের ডিজনির সঙ্গে সহযোগিতা করে নির্মিত ‘চায়না অন মুভ’ তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় সিজনের ইংরেজি সংস্করণ ডিজনি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের বেশ কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলের সাপ্তাহিক ছুটির রাতের গোল্ডেন সময়ে প্রচারিত হয়। এসব সফল উদাহরণের অভিজ্ঞতা সারংসকলণ করে দেখা যায়, তথ্যচিত্রের আন্তর্জাতিক সম্প্রচারের দক্ষতার নির্মাণকে এগিয়ে নিতে চাইলে একটি বহুমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা এবং নতুন মিডিয়ার সৃজনশীল প্রচারের উপায় ও প্ল্যাটফর্মের সমন্বয় করা উচিৎ,যাতে চীনা তথ্যচিত্রের আন্তর্জাতিক প্রচার আরও গভীর, ব্যাপক, নির্ভুল এবং কার্যকর করে গড়ে তোলা যায়।

বিংশ শতাব্দীর ৮০-এর দশক থেকে ২১ শতকের শুরু পর্যন্ত, বিশ্বের কাছে চীনা তথ্যচিত্রে বলা চীনা গল্পগুলো ইতিহাস, সংস্কৃতি, বন্যপ্রাণী এবং প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে ‘রেশম পথ’এবং ‘মহাপ্রাচীরের উপাখ্যান’-এর মত চমৎকার সব তথ্যচিত্র বিদেশে প্রচারের সুদূরপ্রসারী প্রভাব অর্জন করেছে। ২০১১ সালে সিসিটিভি ডকুমেন্টারি চ্যানেল চালু করা হয়েছিল, এবং এটি দেশে-বিদেশে তথ্যচিত্রের জন্য একটি সম্প্রচার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

চীনা তথ্যচিত্রের আন্তর্জাতিক প্রচারের সাথে জড়িত বিষয়বস্তু ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। চীনা খাদ্য ও লোকসংস্কৃতি, চীনা ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক শিল্পকলা, চীনা প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, চীনা সমাজ এবং দৈনন্দিন জীবন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ডকুমেন্টারির থিমগুলো ক্রমে সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে চীনের জাতীয় চিত্রও ক্রমশ পূর্ণ এবং প্রাণবন্ত হচ্ছে। বিদেশী দর্শকেরা যা দেখেন তা আর চীনের একটি প্রাচীন, একক, স্থির চিত্র নয়, যা শুধুমাত্র ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি এবং মহৎ ল্যান্ডস্কেপ দ্বারা নির্মিত, বরং আরও বেশি করে একটি ত্রিমাত্রিক, প্রবাহিত আধুনিক সভ্যতায় পূর্ণ চীনকে তারা দেখতে পান।

চীনা তথ্যচিত্রে জড়িত ক্ষেত্রগুলো একটি বহুমাত্রিক প্যাটার্ন উপস্থাপন করে। ধীরে ধীরে পশ্চিমা মিডিয়া দ্বারা তৈরি চীন সম্পর্কে স্টেরিওটাইপগুলো ভেঙে দেয়। বিদেশী দর্শকেরা শুধুমাত্র আধুনিক চীনের ম্যাক্রো উন্নয়ন জানতে চায় না, সাধারণ চীনাদের জীবনযাত্রার অবস্থা সম্পর্কেও কৌতূহলী।

বলা যায়, অগণিত প্রাণবন্ত এবং সূক্ষ্ম পৃথক চিত্র অবশেষে দেশের চিত্রে রূপান্তরিত হয়। যেমন, ‘চীনা পুলিশের দৈনন্দিন জীবন’ শিরোনামে এক তথ্যচিত্রে জীবন, কর্তব্য এবং আইন প্রয়োগে সাধারণ পুলিশ অফিসারদের সাধারণ গল্প শুরু হয়ে বাস্তব ও প্রাণবন্ত ভাবমূর্তির এবং এক একটি দ্রুত গতির কাহিনীর মাধ্যমে সমসাময়িক চীনা পুলিশের নিঃস্বার্থ নিষ্ঠা, উৎসর্গ এবং কঠোর পরিশ্রমকে ফুটিয়ে তুলেছে।

চীনা প্রামাণ্যচিত্রের আন্তর্জাতিক প্রচারের বিষয়টি কেবল অভ্যন্তরীণই নয়, বিশ্বের কাছে তার দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরে। মহামারী প্রাদুর্ভাবের পর চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন) ‘দ্যা লকডাউন: ওয়ান মান্থ ইন উহান’ নামক এক তথ্যচিত্র তৈরি এবং বিশ্বজুড়ে প্রচার করেছে। এ তথ্যচিত্র মোট ১ কোটি ৮০ লক্ষবার দেখা হয়েছে। তথ্যচিত্রে বিদেশী দর্শকেরা কেবল অভিন্ন উদ্বেগের সঙ্গে জড়িত গুরুতর বিষয়গুলো দেখেননি, বরং অসুবিধা ও বেদনার মুখে চীনা জনগণের সাহস ও প্রজ্ঞা দেখেছেন এবং গভীর অনুরণন এবং গভীর শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করেছেন।

তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বিদেশি দর্শকেরা জীবনকে রক্ষা করতে এবং জনগণের সুখ-শান্তির জন্য সরকারের নিরলস প্রচেষ্টাও দেখেছেন। তাই চীনা তথ্যচিত্রগুলোকে বিশ্বের মুখোমুখি হওয়া উচিত, চীনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং আধুনিক চীনা অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে, বিশ্বকে গভীর চীনা জ্ঞান প্রকাশ করা এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলতে চীনের বুদ্ধি ও চীনের পরিকল্পনা প্রদান করা উচিৎ।

গত দশ বছরে চীনা ডকুমেন্টারিগুলোর সৃজনশীল ধারণা এবং বর্ণনার পদ্ধতিগুলো দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে। অনেক শিল্পকর্মের উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং চীনা সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক যোগাযোগের প্ররোচনামূলক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। যেমন, ‘সম্মুখ সারির কণ্ঠ: দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে চীনের লড়াই’ শিরোনামের তথ্যচিত্রে বিদেশী দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের ‘লক্ষ্যযুক্ত’ দারিদ্র্য বিমোচন এবং লক্ষ্যযুক্ত দারিদ্র্য মুক্তি ব্যাপকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বিদেশী দর্শকদেরকে কাছাকাছি একটি বর্ণনামূলক পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে।

চীনা চেতনাকে মূর্ত করে এবং বিশ্বের কাছে চীনা জ্ঞান ধারণ করে এমন চমৎকার সংস্কৃতির ব্যাখ্যা ও প্রচারের জন্য চীনা তথ্যচিত্রগুলো ক্রমাগত উদ্ভাবন চালিয়ে যাচ্ছে। ‘চা: কুড়ির গল্প’ নামের তথ্যচিত্রে চাইনিজ চায়ের জটিল রোস্টিং প্রক্রিয়া উপস্থাপন করা হয় এবং চীনা চা সারা বিশ্বে শিকড় ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমিতে মিলেমিশে যাওয়ার কাহিনী তুলে ধরা হয়। ‘নিষিদ্ধ নগরীর প্রভুরা’ নামের তথ্যচিত্রে সাংস্কৃতিক নিদর্শন পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চমৎকার ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি প্রদর্শন করা হয় এবং বিদেশী তরুণদের প্রবল আগ্রহ জাগিয়েছে এ তথ্যচিত্র।

চাইনিজ ডকুমেন্টারির যেগুলো বিদেশে চীনা গল্প বলে সেগুলোতে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রবণতা দেখা গেছে। ঐতিহ্যগত ব্যাখ্যামূলক ফিচার ফিল্ম ছাড়াও, ছোট ভিডিওর মতো ফর্মও বের হয়েছে। স্বাধীন উত্পাদন এবং চীনা-বিদেশী সহ-উৎপাদনের সৃজনশীল পদ্ধতিটি দেখা দিয়েছে। সৃষ্টির মূল অংশটি মূলধারার অফিসিয়াল মিডিয়া এবং প্রযোজনা সংস্থাগুলো থেকে স্ব-মিডিয়ার ব্যক্তিগত প্রযোজনায় বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষভাবে চীনা তথ্যচিত্রের আন্তর্জাতিক প্রচার দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে ঐতিহ্যবাহী স্যাটেলাইট টিভি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সামাজিক মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে প্রসারিত হয়েছে।

লিলি/এনাম

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn