বাংলা

অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের আদ্যোপান্ত

CMGPublished: 2022-09-08 18:57:35
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

আজকে আমরা মুই নামে একজন পোলার ক্রুজ এক্সপিরিয়েন্স অফিসারের সঙ্গে পরিচিত হবো।

প্রত্যন্ত মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা হচ্ছে বিশ্বের শীতলতম, শুষ্কতম এবং বাতাসযুক্ত স্থান। অ্যান্টার্কটিকার প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকা বরফে আচ্ছাদিত। অন্যান্য মহাদেশের মতো এটিও হাজার হাজার বছর ধরে বিদ্যমান বলে বলা হয়; তবে, ১৯ শতকের আগ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা আবিষ্কৃত হয়নি।

যদিও এখানে কোন গাছ, ঝোপঝাড় এবং প্রাণী নেই, সেখানে রয়েছে দৃঢ় শ্যাওলা, লাইকেন এবং শৈবাল, সেইসাথে পেঙ্গুইন, সামুদ্রিক পাখি এবং সিলের ও দেখা মিলে সেখানে।

এখন পর্যন্ত মুই মোট ৭বার অ্যান্টার্কটিক এবং ৬বার উত্তর মেরুতে গিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের ১৫টি ক্রুজ কোম্পানি থেকে ২০টিরও বেশি বিভিন্ন ক্রুজ জাহাজে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি নিজেকে ‘পোলার ক্রুজ এক্সপিরিয়েন্স অফিসার’ হিসেবে অভিহিত করেন। এই পছন্দের জীবনযাত্রা বেছে নেওয়ার আগে, তিনি একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের কারণে তিনি পেঙ্গুইনকে ভালবেসে ফেলেন। বিশ্বজুড়ে ১৮টি প্রজাতির পেঙ্গুইন দেখার লক্ষ্য নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তার নিজস্ব অ্যান্টার্কটিক ভ্রমণ পরামর্শদাতা সংস্থা, যাতে মেরু পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট তার মতো আরও বেশি লোককে সাহায্য করতে পারেন।

২০১৬ সালে যখন তিনি প্রথমবার অ্যান্টার্কটিকায় পা রাখেন, তখন উত্তেজিত এবং হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মুই। প্রথমবারের মতো কয়েক হাজারেরও বেশি রাজা পেঙ্গুইনকে জমিতে জড়ো হয়ে খেতে দেখেছিলেন তিনি। এটি যেন বিবিসি’র ডকুমেন্টারির দৃশ্যটির সত্যিকারের পুনরুদ্ধারের মতো। প্রথমবারের মতো খালি চোখে দুর্দান্ত এ দৃশ্য দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছিল মুই। দারুণ উদ্দীপ্ত হয়ে দুদিন ঘুমাতে পারেননি তিনি।

পরবর্তীতে আরও তিনবার তিনি দ্বীপে অবতরণ করেন। মেরু হিমবাহের ল্যান্ডস্কেপ, তুষার ও বরফ ছাড়া আর যা তাকে আরও আকৃষ্ট করেছিল তা হল ঠাণ্ডা পরিবেশে প্রাণশক্তির দৃঢ়তা। অ্যান্টার্কটিকায়, পেঙ্গুইন, সিল এবং তিমির মতো প্রাণীগুলো বসবাস করে থাকে। গাছপালার বেড়ে ওঠা কঠিন, শুধুমাত্র দুই ধরণের উচ্চ গাছপালা এবং কিছু শ্যাওলা ও আদিম লাইকেন বেড়ে ওঠে সেখানে।

অনেকের সন্দেহ করেন, কেন তিনি শুধুমাত্র একবার পোলার ট্রিপের কারণে উচ্চ বেতনের চাকরি ছেড়ে দেন? এর উত্তর পেতে হলে মুই’র বড় হওয়ার অভিজ্ঞতার দিকে নজর দিতে হবে।

তিনি চীনের দক্ষিণের শ্যানসি প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। সুশিক্ষার প্রভাবে সে নীরবে ও ভালোভাবে বড় হয়েছে, কিন্তু ভালো ছেলের চামড়ার গহীনে রয়েছে অনুসন্ধানী হৃদয়। মাঝে মাঝে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পাহাড়ের বাইরের জগতকে কল্পনা করতো সে।

চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় মুই ‘মাউন্টেন অ্যান্ড ওয়াইল্ডারনেস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে এক ক্লাবে যোগদান করেন। ক্লাবে তিনি ধীরে ধীরে দেখতে পান যে তিনি বাইরে যেতে, পাহাড়ে আরোহণ, ক্যাম্পিং এবং শহর ও পাহাড়ের নানা জায়গায় যেতে পছন্দ করেন। চাকরির হঠাৎ পরিবর্তনের পর, মুই এবং তার স্ত্রী সারা বিশ্ব ভ্রমণ করেন। দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে তারা এই লক্ষ্যটি পূরণ করেছেন। কিন্তু এই ভ্রমণের শেষে সপ্তম মহাদেশ বা অ্যান্টার্কটিকা তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা সেখানে যেতে পারেনি।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তারা অ্যান্টার্কটিকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে, অবশেষে টিকিট এবং যাত্রাসহ নানা কারণে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। দেশে ফিরে যাওয়ার পর তারা কখনও ওখানে যাওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দেননি। তারা প্রায় এক বছর সময় ধরে ইন্টারনেটে নানা তথ্য খুঁজে বের করেন, জাহাজের টিকিট কিনেন এবং অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের জন্য নানা প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর তারা কোয়ার্ক কোম্পানির প্রমোদ তরীতে চড়ে ১৯ দিন পর সপ্তম মহাদেশ বা অ্যান্টার্কটিকায় পা রাখেন। এ ভ্রমণের জন্য নানা তথ্য সংগ্রহ এবং বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার অভিজ্ঞতা পরে মুই’র অ্যান্টার্কটিকা যাত্রা সংক্রান্ত প্রকল্প শুরু করার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।

সেই যাত্রার অনুভূতি নিয়ে মুই পরের কয়েক বছর অ্যান্টার্কটিকায় ১৭ বার ভ্রমণ করেছেন এবং প্রতিবারই একটি ভিন্ন অনুভূতি লাভ করেছেন। প্রতিবারই তিনি ভিন্ন প্রাণী, গাছপালা এবং প্রকৃতির অবস্থা দেখছেন। প্রতিটি ভ্রমণের সময় নানা ধরণের মজার মানুষ এবং জিনিসের মুখোমুখি হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতার কারণে তার মাথায় অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রকল্প এবং ক্রুজ অভিজ্ঞতা অফিসারের পরিকল্পনা আসে।

‘অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ’ নামের এই প্রকল্পের শুরুতে মুই এবং তার স্ত্রীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল একটি প্ল্যাটফর্ম এবং চ্যানেল তৈরি করা। তা মেরু অঞ্চল ভ্রমণকারীদের জন্য তথ্য সরবরাহ করবে। কিন্তু মজার বিষয় হল যে যতবারই অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের কথা বলেন, তত বারই মুই একটি শব্দের পুনরাবৃত্তি করেন: পেঙ্গুইন।

মুই প্রথমবার দেখেই পেঙ্গুইনকে পছন্দ করতে শুরু করেন। সর্বপ্রথম তিনি শুনেছিলেন যে নিউজিল্যান্ডের ক্যাম্প-সাইটগুলোতে পেঙ্গুইনদের দেখা মিলে। তাই মুই এবং তার সঙ্গীরা একটি সুন্দর সন্ধ্যায় নিউজিল্যান্ডের ক্যাম্প-গ্রাউন্ডে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সবাই যখন ধুয়ে মুছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাঁবুতে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন হঠাৎ এক বন্ধু দুটি ছোট নীল পেঙ্গুইন দেখতে পেলেন। তাঁবুতে সঙ্গীদের ডাকার সময় দুটি ছোট প্রাণী তাদের খুঁজে পেল। সম্ভবত এই প্রথম ছোট নীল পেঙ্গুইন মানুষ দেখেছিল। তাই তারা একটু আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। দু’টির মধ্যে একটি দৌড়ে গিয়ে পিছনে তাকালো, কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে একটি বড় গাছে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। মুই এই দৃশ্য দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন। যা মুইকে বিশ্বের ১৮টি প্রজাতির পেঙ্গুইনের দেখার ইচ্ছাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ‘অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ’ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প পাঁচ শতাধিক লোকের মেরু ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছে।

বর্তমানে বিশ্বে মোট ১৮টি পৃথক প্রজাতির পেঙ্গুইন রয়েছে। বৃহত্তম প্রজাতি হল সম্রাট পেঙ্গুইন, যার গড় উচ্চতা প্রায় ১.১ মিটার এবং ওজন ৩৫ কিলোগ্রামের বেশি। ক্ষুদ্রতম পেঙ্গুইন প্রজাতি হল ছোট্ট নীল পেঙ্গুইন (যা পরী পেঙ্গুইন নামেও পরিচিত), যা ৪০ সেমি লম্বা এবং তার ওজন এক কেজির মতো হয়। শুধুমাত্র সম্রাট পেঙ্গুইন এবং অ্যাডেলি পেঙ্গুইন কেবল মেরু অঞ্চলে বাস করে। তবে, অ্যান্টার্কটিকায়ও পেঙ্গুইনের সংখ্যা কম নয়। পক্ষীবিদদের দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ এবং অনুমান অনুসারে, অ্যান্টার্কটিকায় কোটি কোটি পেঙ্গুইন রয়েছে, যা বিশ্বের মোট পেঙ্গুইনগুলোর ৮০ শতাংশ। সতেরো বার অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত, মুই ১৫টি প্রজাতির পেঙ্গুইন দেখেছেন। যদি মহামারী না হত, তাহলে তিনি হয়তো ১৮ধরণের পেঙ্গুইনই দেখতে পারতেন।

পৃথিবীর সব জায়গায় যাওয়াই হতে পারে মুই’র সর্বোচ্চ সাধনা। মানুষের জ্ঞান একটি বৃত্তের মত। এই বৃত্তটি ক্রমাগত বয়স বৃদ্ধির সাথে তার সীমানাকে প্রসারিত করছে। অসীম সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াটি এই বিশ্বে আমাদের ক্রমাগত অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত। মুই বলেন, ‘যখন আপনি একটি লক্ষ্য অর্জন করেন, হঠাৎ অন্য একটি নতুন লক্ষ্য খুঁজে পেতে পারেন। এটিই হলো জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ, আপনি দেখতে পাবেন যে অন্বেষণ অন্তহীন। এটি আসক্তি সংগ্রহের মতোই, আপনি এটি দেখতে পাবেন যে যখন আপনি একটি লক্ষ্য পূরণ করেছেন, তখন অন্য আরও লক্ষ্য সম্পূর্ণ করতে চান।’

১৯১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মানুষ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিল।

১৯১২ সালের ১৭ জানুয়ারি স্কটের দল দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছায়।

১৯২৯ সালের ২৯ নভেম্বর মানুষ প্রথম দক্ষিণ মেরুতে উড়েছিল।

১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ মেরুতে আমুন্ডসেন স্কট বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের বর্তমানে দুটি উপায় রয়েছে: নৌকায় এবং বিমানে। বর্তমানে বিশ্বে মোট ২০টিরও বেশি ক্রুজ সংস্থা রয়েছে এবং অ্যান্টার্কটিকায় ৪০টিরও বেশি ক্রুজ জাহাজ পরিষেবা প্রদান করছে। এসব সংস্থা এবং ক্রুজ জাহাজের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে পরিচিত মুই ।

অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ বিশ্বের অন্যান্য ভ্রমণ পদ্ধতি থেকে আলাদা। ক্রুজ জাহাজ হোটেলে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি কোম্পানির আলাদা রুট, ক্রুজ সুবিধা, পরিবেশ এবং পরিষেবা রয়েছে। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকার ভূমিতে অবতরণ করার জন্য একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে, আর তা হলো: একবারে এক শ’ জনের বেশি লোক উপকূলে যেতে পারে না এবং ক্রুজ জাহাজটিকে ডক করা যায় না। ক্রুজ জাহাজ এবং উপকূলের মধ্যে একমাত্র পথ হলো নৌকায় মাত্র ১০ জন করে বহন করা। প্রতিটি ক্রুজের অনুষ্ঠান ও সময়সূচীও ভিন্ন। মুই’র প্রধান কাজ হলো, যারা অ্যান্টার্কটিকা যেতে চান, তাদের রুট এবং ক্রুজের বিষয়ে ভ্রমণ পরামর্শ এবং পরিষেবা পরামর্শ প্রদান করা।

বর্তমানে চীনে মেরু অঞ্চল ভ্রমণ তেমন জনপ্রিয় নয়। মুই’র মতে, মহামারীর প্রভাবের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের বৃদ্ধির হার কমে গেছে। তাছাড়া, একবার ভ্রমণের খরচ সর্বনিম্ন ৫০-৬০ হাজার ইউয়ান। কখনো এটা বেড়ে ৫-৬ লাখ ইউয়ানও হতে পারে। তাই বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা বেশি নয়। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকায় সারা বিশ্ব থেকে মোট ৭৪ হাজার ৩৮১ জন এসেছিলেন এবং চীনাদের সংখ্যা ছিল ৮,১৩২ জন। নিয়মিত ভ্রমণের তুলনায় অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ একেবারেই আলাদা।

বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক মেরু ভ্রমণ সংস্থা--আইএএটিও (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যান্টার্কটিক ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন)—হলো বেশ কয়েকটি পোলার ক্রুজ কোম্পানির উদ্যোগে গঠিত একটি অ্যাসোসিয়েশন। এই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্দেশ্য হলো ‘অ্যান্টার্কটিকায় নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ব্যক্তিগত ও দলীয় ভ্রমণের অনুশীলনকে সমর্থন এবং প্রচার করা’। আইএএটিওর প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ হলো অ্যান্টার্কটিকায় ঐতিহাসিক আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে এবং সেখানকার পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করার খুব একটা ব্যবস্থা নেই, যা অ্যান্টার্কটিক পর্যটনকে মূলত স্ব-নিয়ন্ত্রিত করে তুলেছে। তাই, অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্টার্কটিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট টুরিস্ট গাইড, টুরিস্ট ব্রিফিং ভিডিও, পর্যটন পরিসংখ্যান এবং অন্যান্য অ্যান্টার্কটিক পর্যটন তথ্য তৈরি করে থাকে।

অ্যান্টার্কটিকা ছাড়াও কিছু লোক উত্তর মেরুতে যায়। অবশ্যই মুই বলেন, উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর দৃশ্য সম্পূর্ণ আলাদা। অ্যান্টার্কটিকা সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত, অন্যদিকে উত্তর মেরু হল স্থল দ্বারা বেষ্টিত মহাসাগর। সবচেয়ে ভিন্ন হল উত্তর মেরুতে মানুষ বসবাস করে এবং অ্যান্টার্কটিকার মানুষেরা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক অভিযানের সদস্য বলে অনুমান করা হয়।

অ্যান্টার্কটিকার জন্য উপযুক্ত পর্যটন মৌসুম হল প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের শেষ দিক পর্যন্ত সময়। ‘আপনি যখনই অ্যান্টার্কটিকায় যান না কেন, যে নৌকায় করেই যান না কেন, যে কোনো রুটেই যান না কেন, অ্যান্টার্কটিকার ভ্রমণ একটি অবিস্মরণীয় ভ্রমণ হবে। অ্যান্টার্কটিকার ভ্রমণ প্রসঙ্গে মুই বলেন, ভ্রমণ করার আগে, আপনারা ভ্রমণপথ এবং ক্রুজ ক্লাসের বিষয়ে বিবেচনা করুন। অ্যান্টার্কটিক রুট দুই ধরনের: দক্ষিণ মেরু ভ্রমণ এবং ক্রুজ ভ্রমণ। দক্ষিণ মেরু ভ্রমণে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন এবং চিলি’র পান্টা অ্যারেনাস থেকে রওনা হওয়া লাগে। বিমানগুলো প্রধানত পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ খরচের কারণে এটি খুব কম সংখ্যক লোকের পছন্দ। আরও জনপ্রিয় উপায় হলো ক্রুজ জাহাজ। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড থেকে রওনা হওয়া ক্রুজগুলোর সুবিধা হল যে দৈত্যাকার আইসবার্গ এবং সম্রাট পেঙ্গুইনগুলি দেখা যায়, তবে অল্প ফ্লাইট, দীর্ঘ সময় এবং উচ্চ খরচের মতো উপাদানের কারণে তুলনামূলকভাবে জনপ্রিয় নয় এই পথ। আরও প্রচলিত উপায় হলো দক্ষিণ আমেরিকা (আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে) থেকে রওনা হওয়া ক্রুজ জাহাজে যাওয়া।

অ্যান্টার্কটিকা অনেক দূরে, তবে ভ্রমণ বেশি দূরে নয়। বিখ্যাত লেখক অ্যান্ডারসনের একটি বিখ্যাত বাক্য হলো: ‘আমার জন্য ভ্রমণই তারুণ্যের জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধারের উৎস।’ ভ্রমণের মাঝেই আমরা খুঁজে পেতে পারি আমাদের জীবনের অর্থ।

লিলি/এনাম

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn