বাংলা

লিউ রুন নামে একজন চীনা বিউটি ব্লগার

CMGPublished: 2022-07-21 10:21:16
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘একজন গ্রামীণ বিউটি ব্লগার, সব গ্রামবাসীকে সুন্দর করতে বদ্ধপরিকর।’ এটা হল বিলিবিলি নামে চীনের এক জনপ্রিয় ভিডিও ওয়েবসাইটে ২৫ বছর বয়সী লিউ রুনের পরিচয়।

তিনি বলেন, তার পিছনে কোনো পেশাদার দল নেই, তিনি একা। তিনি আশা করেন, নেটিজেনরা বিষয়টি সহনশীলভাবে দেখবে, তিনি কীভাবে নিজের হাতে মেকআপ করে এক-একজন গ্রামবাসীকে সুন্দর করে তুলেছেন।

বর্তমানে বিলিবিলি ওয়েবসাইটে লিউ রুনের মোট এক লাখ ৩৯ হাজার ভক্ত-অনুরাগী আছেন এবং ৭ লাখ ৫৩ হাজার লাইক পেয়েছেন তিনি। এখন এই পরিমাণ আরও বাড়ছে।

লিউ রুনের জন্মস্থান নেই চিয়াং শহরের চি চোং জেলার কুই দ্য থানা। এখানকার লোকসংখ্যা ৩০ হাজারেরও কম। প্রতিদিন সকালে বিছানা থেকে উঠে সবজি বাজার ও চুল কাটার সেলুনে যাওয়ার সময় বা এক্সপ্রেস কুড়ানের পথে তিনি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন—মেকআপ দিয়ে পরিবর্তনের জন্য কে উপযুক্ত।

তিনি বলেন, আসলে আমাদের গ্রামের অনেক বোন ও খালা খুব সুন্দর। কিন্তু তারা তা টের পাননি। তার কাজ হল যারা ‘নিজেদের সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে পারেন নি, তাদেরকে বাছাই করে ছবি তোলা এবং ভিডিও বানানো।

শুরুতে গ্রামবাসীরা লিউ রুনের আচরণে খুব বিস্মিত হয়েছিল এবং তার কথা ও কাজ বুঝতে পারে নি। খামার করতে এবং সন্তানদের যত্ন নেওয়ার কাজে সবাই অনেক ব্যস্ত।

তুমি লেখাপড়া শেষ করার পর গ্রামে ফিরে এ রকম কাজ কেন করো, তোমার কোনো উদ্দেশ্য আছে কি? প্রসাধনী বিক্রি করতে চাও? সবার সন্দেহ ও সহযোগিতা করতে অনিচ্ছা দেখালেও লিউ রুন নিরুৎসাহিত হননি। তিনি মনে করেন, ‘মেকআপ খুব ব্যক্তিগত বিষয়। আমি যদি অন্যদের অসন্তুষ্ট করি- তাহলে আমি এই কাজের অর্থ হারাবো।’

লিউ রুন, মানুষের অনুভূতি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, কিছু খালা মুখে ‘না না’ করে, কিন্তু তিনি প্রসাধনীর বিষয়ে কৌতূহলী; অথবা লজ্জা পেয়ে বলেন, ‘আমি সুন্দর না’, এমন কথা শুনে লিউ রুন খালাকে ছবি বা ভিডিও শুটিং করার অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করেন। গ্রামের জায়গা বড় নয় এবং বন্ধুদের কথা শোনার পর নতুন বন্ধু খুঁজে পাওয়া যায়, ফলে চিত্রগ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে অপরিচিতদের আস্থার সংকট কেটে যায়।

ছবি তোলার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়ার পর কীভাবে ‘মেকআপ দেওয়া হবে- তা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মেকআপ দেওয়ার আগে লিউ রুন বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিত্ব, মুখের বৈশিষ্ট্য ও রুচি অনুযায়ী গঠনমূলক প্রস্তাব দেন। তারপর তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আসলে অনেকেই জানে না যে, তারা কোন ধরনের মেকআপ পছন্দ করে। এই সময় আমি তাদেরকে একাধিক প্রস্তাব দেই। তারা বেছে নিতে পারেন, উভয় পক্ষের চাহিদা অনুযায়ী সামঞ্জস্য তৈরি করবো এবং মেকআপ খুঁজে বের করবো, যে ব্যক্তির ছবি তোলা হচ্ছে তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা খুঁজবো।’

যাই হোক, লিউ রুনের মেকআপ প্রয়োগে তার নিজস্ব কেন্দ্রীয় ধারণা আছে, তা হলো মেকআপ করার আগে এবং পরে পার্থক্য যত বেশি হবে ততই ভালো।

যেমন, গ্রামের দুই ভাইবোন, যারা সবজির বাজারে হাঁস বিক্রি করে। বড় বোন মোটা, নিটোল ও চতুর। লিউ রুন অনুভব করেন যে, তার বড় বোনকে থাং রাজবংশের মহিলাদের ছবির মতো সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই তিনি এই বোনের হালকা উইলো ভ্রু আঁকেন, হালকা লাল চোখের ছায়া, কপালে লাল পাপড়ি, লাল চেরি ঠোঁট, ঠোঁটের উভয় পাশে ডিম্পল এবং থাং রাজবংশের অনন্য বান ও চুলের পিন দিয়ে সাজান।

লিউ রুন বলেন, গ্রামের নারীরা সাধারণত লাজুক হয়। অনেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেকআপ পরেন এবং মেকআপ বা অন্যান্য মন্তব্যের প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকাশ করার জন্য খুব কমই শব্দ ব্যবহার করেন। তাদের মেকআপ করার পর কিছু লোক বেশ উত্তেজিত হয় এবং আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে; কিছু লোক তাদের মোবাইল ফোনে সেলফি তোলে এবং দ্রুত ফটো ও ছোট ভিডিওগুলো উইচ্যাট মোমেন্টে পোস্ট করে। তাদের আচরণে আপনি দেখতে পাবেন- আসলে সবার মধ্যে সুন্দর হৃদয় আছে।

ফাউন্ডেশন, ভ্রু পেন্সিল, মাসকারা, আইশ্যাডো প্যালেট, প্রাইমার, কনসিলার... লিউ রুনের ড্রেসিং রুমের ছোট গুদামে হাজার হাজার প্রসাধনী রয়েছে এবং ৬০০টিরও বেশি লিপস্টিক রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রসাধনী ব্র্যান্ড তাকে উপহার দিয়েছে এবং কিছু তিনি নিজে কিনেছেন।

প্রকৃতপক্ষে লিউ রুন একজন গ্রামীণ মেকআপ ব্লগার হিসেবে তার মা’র কাছ থেকে উত্সাহ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মা পরিবারের জন্য নিজেকে উত্সর্গ করেছেন এবং কঠোর পরিশ্রম করছেন। তাঁর নিজেকে সাজানোর সময় নেই। কিন্তু লিউ রুন দেখেন যে, তার মা প্রসাধনী এবং ত্বকের যত্নের পণ্যগুলো খুব কৌতূহলের সঙ্গে দেখেন। তাই তিনি তার মাকে মেকআপ দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেন। তার মা এটা খুব পছন্দ করেন এবং তাঁর বন্ধুদেরকে দেখান। তাই লিউ রুন ভেবেছিলেন, মেকআপ প্রয়োগের মাধ্যমে গ্রামের নারীরা নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।

লিউ রুন ছেংতু শহরে ফটোগ্রাফার, শিক্ষক ও সেলসম্যান হিসেবে কাজ করেছেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও শ্যুটিং করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে তিনি জন্মস্থানে ফিরে আসেন। এখন লিউ রুন ইন্টারনেটে পণ্য বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি, নারীরা শুধু কন্যা, স্ত্রী, মা ও দাদি-নানির পরিচয়ের মানুষ নয়; বরং, তাদের নিজেদেরও পরিচয় আছে। প্রত্যেকেরই সৌন্দর্য অর্জনের সাহস ও সুযোগ রয়েছে। নিজেকে অনেক ভালবাসতে ভুলবেন না।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn