বাংলা

মুল ভূভাগে হংকং চলচ্চিত্রের একীভূত হওয়ার পথ

CMGPublished: 2022-07-09 17:00:17
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বিংশ শতাব্দীতে চীনা ভাষার চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ হিসেবে হংকং চলচ্চিত্রগুলো তাদের সোনালি বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে এবং বেশিরভাগ চলচ্চিত্র-প্রেমীদের প্রশংসা পেয়েছে। মাতৃভূমিতে ফিরে আসার ২৫ বছরে হংকংয়ের অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা মূল ভূখণ্ডের সংস্কৃতির সঙ্গে একীভূত হয়েছেন এবং মূলভূখণ্ডের বাজারে আরো বেশি শৈল্পিক সম্ভাবনা অনুসন্ধান করেছেন।

‘মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং একীকরণ প্রক্রিয়াতে হংকংয়ের চলচ্চিত্রগুলো একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের শিল্পকর্মের জাতীয় সচেতনতাও আরও বৈশিষ্ট্যময় হয়ে উঠেছে। হংকং ফেডারেশন অফ লিটারারি অ্যান্ড আর্ট সার্কেলসের চেয়ারম্যান মা ফেংকুও বলেন যে, হংকং এবং মূল ভূখণ্ডের চলচ্চিত্র শিল্পে একমুখী প্রচার থেকে ইন্টারেক্টিভ ইন্টিগ্রেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারপরে যৌথভাবে চীনা চলচ্চিত্রগুলোকে আরও ভালোভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বিংশ শতাব্দীর ৭০ ও ৮০’র দশকে চলচ্চিত্র প্রতিভা, সাংস্কৃতিক সহনশীলতা এবং বৈচিত্র্যের ঘনত্ব এবং বিশাল এশীয় চলচ্চিত্র বাজারের কল্যাণে হংকংয়ের চলচ্চিত্রগুলো আউটপুট, বক্স অফিস, গুণমান এবং শৈল্পিকতার খাতে আশ্চর্যজনক অলৌকিক ঘটনা তৈরি করেছিল এবং ‘ওরিয়েন্টাল হলিউড’ খ্যাতি অর্জন করেছিল।

হংকংয়ের অভিনেতা রেন তা হুয়া বা ইয়াম তাত ওয়াহ বলেন, বিংশ শতাব্দীর ৭০ এবং ৮০’র দশকে হংকংয়ের চলচ্চিত্রের উপাদান সমৃদ্ধ ছিল এবং সৃজনশীল প্রতিভাগুলো একের পর এক দেখা গিয়েছিল। তারা চলচ্চিত্র নিয়ে গতিশীল ও আকর্ষণীয় শুটিং করতে সক্ষম হন।

৯০’র দশকে হংকংয়ের চলচ্চিত্র বাজার এবং শিল্পখাত অবনতি হচ্ছিলো। আর্থিক সংকট এবং শিল্পের অভ্যন্তরীণ সমস্যাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সামনে হংকংয়ের চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা ৮০’র দশকের ২০ হাজার থেকে ২০০৩ সালের ৫ হাজারের কমে নেমে আসে।

মা ফোং কুও বলেন, ১৯৯৭ সালে হংকং মাতৃভূমিতে ফিরে আসে এবং এতে মুল ভূভাগ ও হংকংয়ের চলচ্চিত্র শিল্পের বিনিময়ের বাস্তব ভিত্তি সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো হংকং চলচ্চিত্র নির্মাতা ধাপে ধাপে বুঝতে পারেন যে, উন্নয়নের নতুন সুযোগ খুঁজতে হলে মুলভূভাগের বাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

২০০৩ সালে ‘মেইনল্যান্ড ও হংকংয়ের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ আর্থ-বাণিজ্যিক অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপনের ব্যবস্থা’ স্বাক্ষরের ফলে হংকংয়ের চলচ্চিত্রগুলো মূল ভূখণ্ডের বাজারে প্রবেশের জন্য একটি ‘নতুন চালিকাশক্তি’ দেওয়া হয়। হংকংয়ে চলচ্চিত্রে সম্পৃক্ত একদল মানুষ মুলভূভাগে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান করা শুরু করেন।

দৃষ্টির ক্ষেত্র যত বড়, ফিল্ম প্যাটার্ন তত বড়। হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা থিয়েন ছি ওয়েন বলেন, ‘মূল ভূখণ্ডের চলচ্চিত্রের বিকাশ সর্বোত্তম যুগের সূচনা করছে। দ্রুত বিকাশমান চলচ্চিত্র শিল্প এবং সমৃদ্ধ সামাজিক বিষয়বস্তু হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চেষ্টা এবং চ্যালেঞ্জের সুযোগ দিয়েছে।’ অগ্রগতি অনুসরণ করা এবং দেশের উন্নয়নে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আরও বেশি করার জায়গা থাকবে।

মূল ভূখণ্ডের কোম্পানি এবং প্রযোজকদের সঙ্গে হংকং পরিচালকদের সহযোগিতায় তৈরি মুলধারার ফিল্মগুলো হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সৃজনশীলতার মডেল। হংকং-এর সফল বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের উপাদান গ্রহণ করে ফিল্ম প্রোডাকশন ‘চীনা গল্প’ বলার কার্যক্রম আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।

‘The Taking of Tiger Mountain’, ‘The Bravest’, ‘The Captain’ এবং ‘The Battle at Lake Changjin’সহ নানা চলচ্চিত্র থেকে সহজেই দেখা যায় যে, হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতারা নিজ নিজ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকীকরণের পদ্ধতিতে মুলধারার চলচ্চিত্রগুলো আরো আকর্ষণীয় করতে পারেন।

হংকংয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক লিন ছাও সিয়েন বা ড্যান্তে ল্যাম বলেন, ‘চীনা গল্প বলা আমাকে কৃতিত্বের অনুভূতি এবং সুখের অনুভূতি দিতে পারে।’ ‘Operation Mekong’, ‘OPERATION RED SEA’ এবং ‘The Battle at Lake Changjin’সহ এসব উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনী দেশের উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে সৃষ্টি করা হয়েছে। মন দিয়ে ইতিহাস জানার চেষ্টা করলে দারুণভাবে মুগ্ধ হবেন। ফলে তীব্র দায়িত্ববোধ ও রচনার ইচ্ছা সৃষ্টি হবে।

হংকং ফেডারেশন অফ লিটারারি অ্যান্ড আর্ট সার্কেলসের চেয়ারম্যান মা ফেংকুও বলেন, ‘হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতারা মুলভূভাগে ভালোভাবে কিছু করতে পারার প্রধান কারণ পুরোপুরি হংকংয়ের চলচ্চিত্র শিল্পের সুবিধা ছাড়াও, হংকং চলচ্চিত্র নির্মাতারা মুল ভূভাগের মুল সুর এবং মূল্যবোধের স্বীকৃতি দেওয়া।’

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন হামলা প্রতিরোধ ও কোরিয়াকে সাহায্য দানের যুদ্ধ সংক্রান্ত ‘The Battle at Lake Changjin’ মুভি হংকংয়ে মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার প্রথম দিনে প্রায় ৪০টি প্রেক্ষাগৃহে মোট ১৪৯বার তা প্রদর্শিত হয়। কোনো কোনো সময় তার টিকিট পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা থিয়েন ছি ওয়েন বলেন, ‘The Battle at Lake Changjin’ মুভি হংকংয়ে প্রদর্শনের পর থেকে দেখা যায়, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মাতৃভূমি প্রসঙ্গে হংকংবাসীর জানাশোনার ইচ্ছা বেড়ে যাচ্ছে। বিষয়বস্তুগত পণ্য হিসেবে চলচ্চিত্র ভবিষ্যতে হংকং এবং মুলভূভাগের স্বদেশবাসীদের ভাবানুভূতির বিনিময় বেগবান করতে সক্ষম এবং হংকংবাসীদের দেশ সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

জাতীয় ১৪তম পাঁচসালা পরিকল্পনায় হংকংকে চীন এবং বিদেশের সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়। এটি হংকংয়ে সাংস্কৃতিক বিকাশের বর্তমান চাহিদাগুলোর প্রতি দেশের ইতিবাচক জবাব দেওয়ার প্রতিক্রিয়া। হংকংয়ে 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থার’ অনন্য সুবিধা পালন করা এবং হংকং ও মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় অব্যাহত রাখা উচিত্। যা হংকং এবং মুল ভূভাগের চলচ্চিত্র ও টিভি মহলের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য নিঃসন্দেহে শক্তিশালী চালিকাশক্তি প্রদান করে।

আঞ্চলিক সংহতি চাইলে সংস্কৃতিকে প্রথম অবস্থানে রাখা উচিত। কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলে ফিল্ম শিল্পের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সুবিধা রয়েছে। বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলের শহরগুলো লিংনান সাংস্কৃতিক বৃত্তের অন্তর্গত এবং ভাষা, সংস্কৃতি এবং রীতিনীতির দিক থেকে কাছাকাছি।

কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চল নির্মাণের ক্রমাগত অগ্রগতির সাথে সাথে সংস্কৃতিকে সামগ্রিক উন্নয়নের একটি লিঙ্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তম উপসাগরীয় অঞ্চল উন্নয়নের পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে বলা হয়, হংকংয়ে ফিল্ম এবং টেলিভিশন প্রতিভাদের সুবিধাগুলোকে পুরোপুরিভাবে পালন করে কুয়াংতোং, হংকং এবং ম্যাকাও-এর ফিল্ম এবং টেলিভিশন সহযোগিতার সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, চলচ্চিত্র খাতের বিনিয়োগের সহযোগিতা ও প্রতিভাদের বিনিময় জোরদার করা উচিত্।

বিখ্যাত অভিনেতা রেন তা হুয়া বলেন, হংকং এবং মুল ভূভাগের চলচ্চিত্র ও টিভি শিল্পে প্রতিভার বিনিময় ও সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বিশাল মাতৃভূমিতে আরো বেশি ভালোমানের শিল্পকর্ম দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চীনা মুভির আরো ভালো অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn