'সবুজ মাঠ' নামে প্রামাণ্যচিত্রের থিমসংয়ের জন্মস্থান: সিনচিয়াংয়ের কোকোদালা
২৬ মে:১৯৫৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ১০ম বার্ষিকী উদযাপনের উপহার হিসেবে 'সবুজ মাঠ' নামে এক প্রামাণ্যচিত্রের কাজ শুরু হয়। চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণের কাজ সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি কাউন্টি-স্তরের শহর কোকোদালাতে শুরু হয়।
সেই সময় দশ হাজারেরও বেশি মানুষ ওখানে মরুভূমি পুনরুদ্ধারের কাজ করতেন। একদিন সন্ধ্যায় প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক চাং চিয়া ই ও সুরকার থিয়েন ক্য ঘোড়ার পিঠে চড়ে তৃণভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ ‘দুতার’ দিয়ে বাজানো সুরেলা সুর তাদের কানে ভেসে আসে। ঘোড়া চালিয়ে তারা দু’জন সুরের দিকে এগিয়ে যান। তখন তারা দেখেন যে, সূর্যাস্তের নীচে একদল যুবক তাদের শিকারকে ঘিরে বনফায়াররে গ্রিল করছিল; আর তাদের মধ্যে একজন তরুণ দুতার বাজিয়ে গান গাইছিল।
পরিচালক চাং চিয়া ই তাকে জিজ্ঞাস করলেন, তোমরা কি গাইছ?
উত্তরে তরুণ বলেন, আমরা মনের কথা, শ্রম, ভালোবাসা ও কোকোদালার আগামীকাল গাইছি।
যে দুজন শিল্পী গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তারা সাথে সাথে সুরটি লিখে নেন। তারা গানের কথায় তাল মেলান এবং পুনরায় গানটি তৈরি করেন। সেই রাতে, কোকোদালা থেকে এক প্রাণময় গানের ধারা প্রবাহিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি সারা দেশে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে ‘প্রেইরি নাইট’ নামের সেই গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
গানের কথাগুলো এমন, ‘সুন্দর রাত এত প্রশান্ত যে, তৃণভূমিতে শুধু আমার দুতারের সুর শোনা যায়। আমি দূরের মেয়েটিকে চিঠি লিখতে চাই, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চিঠি ডেলিভারি দেওয়ার কোনো পোস্টম্যান নেই ...’
‘ওরিয়েন্টাল সেরেনাড’ হিসেবে পরিচিত এই গানটি শুধু সুরই সুন্দর নয়, বরং এর কাব্যিক ছন্দও উৎকৃষ্ট মানের। এতে তৃণভূমির রাতের সৌন্দর্য, যুবক-যুবতীর মধুর ভালবাসা এবং ভবিষ্যতের প্রতি মানুষের প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে।
৬০ বছর ধরে এই গানটি অসংখ্য চীনা মানুষকে মুগ্ধ করে আসছে।
এই গানের সুর প্রথম যেখানে শোনা যায়, সেখানকার অবস্থা কেমন? আজকের অনুষ্ঠানে এই সুরের জন্মস্থান, অর্থাত্ সিনচিয়াংয়ের কোকোদালা শহরে যাবো।
কোকোদালা শব্দটি কাজাখ ও মঙ্গোলিয়ান ভাষার সংমিশ্রণ, মানে ‘সবুজ মাঠ’। এটি একটি জাদুকরী ভূমি। দু’হাজারেরও বেশি সময় ধরে ওই জায়গা চীনের বিভিন্ন জাতির জনগণের জীবনযাপন ও বিনিময়ের জায়গা হয়ে উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন জাতির মানুষের সীমান্ত নির্মাণ এবং সীমানা রক্ষা করার মনোমুগ্ধকর গল্প পাওয়া যায়।
ছয় দশক পর বর্তমানে কোকোদালার ভূমিতে নতুন যুগের বসন্ত বাতাস অনুভব করা যায়।
স্বচ্ছ পানি ও নীল আকাশের মধ্যে কোকোদালা যেন সুন্দর একটি বড় বাগান। রাতে, ইলি নদীর ধারে ওয়াংহ্য প্যাভিলিয়ন, নদীর জলে উজ্জ্বল আলোর প্রতিফলন এবং কোকোদালার নতুন শহর জলের পাশে দেখা যায়- উজ্জ্বলতা যেন উপচে পড়ছে।
‘প্রেইরি নাইট’ গানে বলা হয় যে, চিঠি ডেলিভারি করার জন্য কোন পোস্টম্যান নেই... এই অবস্থা অনেক আগেই দূর হয়েছে। এখন কোকোদালাতে শুধু পোস্টাল রুটগুলোই বাধাহীন নয়, সব এক্সপ্রেস ডেলিভারি পরিষেবাগুলো যে কোনও সময় আসে এবং ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে।
ভূমি পুনরুদ্ধারের যুগে, জায়গাটি আগাছা ও ইঁদুরের গর্তে পূর্ণ ছিল। কেন ‘প্রেইরি নাইট’ গানে বলা হয় যে, চিঠি ডেলিভারি করার জন্য কোন পোস্টম্যান নেই। কারণ, সবচে কাছের ডাক অফিসটিও কোকোদালা থেকে প্রায় কয়েক ডজন কিলোমিটার দূরে ছিল।
৯৩ বছর বয়সী ইয়েন সিন ছিউ কোকোদালার ভূমি পুনরুদ্ধার কাজে অংশ নেন। তার মতো অসংখ্য মানুষের পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কোকোদালার অনুর্বর ও জনশূন্য পুরানো রূপ পরিবর্তিত হয়েছে।
বর্তমানে কোকোদালা হচ্ছে শস্য ও তেল উৎপাদন, ভুট্টা বীজ উৎপাদন ও পশুপালনের কেন্দ্র। এটি দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মশলা বা ল্যাভেন্ডার উৎপাদন ঘাঁটি। লিলি/তৌহিদ