বাংলা

চলচ্চিত্র থেকে বিশেষ সময় জিনিস মজুদ-সংক্রান্ত সাধারণ জ্ঞান শিখুন

CMGPublished: 2022-05-05 10:01:00
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

এখনও সারা বিশ্বে মহামারী চলছে। চীনের কয়েকটি শহরে মহামারী প্রতিরোধের জন্য অনেক লোক বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। যারা কোয়ারেন্টিনে নেই, তারাও নানা প্রস্তুতি নিয়েছেন। খাদ্যসামগ্রী মজুদ করা হলো সাম্প্রতিককালে সবার আলোচিত বিষয়।

আসলে কীভাবে খাবারদাবার মজুদ করা যায় এবং কী কী জিনিস মজুদ করা যায়, তা জানা দরকার।

‘Surviving Disaster’ নামে একটি তথ্যচিত্রে মহামারীর প্রেক্ষাপটে ‘মজুদ সংক্রান্ত’ অনেক তথ্য দেওয়া হয়েছে।

যেমন, মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এবং খুব দ্রুত বাসায় আটকে পড়ার আগে কীভাবে সুপারমার্কেটে কেনাকাটা করা যায়?

প্রথমত আপনাকে খাদ্যের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী একটি সংগ্রহের তালিকা তৈরি করতে হবে।

সবচে প্রয়োজনীয় অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট। যারা ওজন বাড়ার ভয় পান তারা এই শব্দ শুনলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু কার্বোহাইড্রেট মানবদেহে শক্তি সরবরাহের জন্য একটি অপরিহার্য জ্বালানি। সবচে সাধারণ জিনিস হল চাল ও নুডুলসের মতো প্রধান খাবার-- যা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়।

কার্বোহাইড্রেটের ক্যালোরি বেশি। বিবিসি ডকুমেন্টারি ‘দ্য সিক্রেট অফ ফুড’ অনুষ্ঠানে চালের প্রচুর শক্তি দেখানো হয়। যখন ১০ গ্রাম চাল গুঁড়ো করে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বলানো হয়, তখন বিরাট অগ্নিশিখা দেখা দেয়। এই পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, প্রায় ১০ গ্রাম কাঁচা চাল ৩৫ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করতে পারে। এক বাটি রান্না করা ভাত প্রায় দু’শ ক্যালোরির শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। তা ছাড়া, চাল দিয়ে নানা রকমের খাবার তৈরি করা যায়, যেমন রাইস ওয়াইন, রাইস পুডিং প্রভৃতি।

ময়দা আরও বহুমুখী। এটি নুডলস, স্টিমড বান, স্ন্যাকস, রুটি ও অন্যান্য সুস্বাদু খাবারে তৈরি করা যেতে পারে। এসব খাবার সংরক্ষণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। অবশ্যই কোয়ারেন্টিনের সময় সবচে মূল্যবান বাছাই হলো ময়দা।

জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও, প্রোটিন ও ফ্যাট অপরিহার্য। মাংস ও দুধ স্টক আপনার তালিকার অপরিহার্য জিনিস। অবশ্যই সম্ভব হলে আপনি এসব গ্রহণ করতে পারেন। তবে সীমিত স্টোরেজ স্পেসের ক্ষেত্রে, মজুদ করার বিষয়ে ব্যাপকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে ডিমের মর্যাদা অনেক বেশি।

এটি প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, ডিমের কুসুমে খনিজ, ভিটামিন, চর্বি ও গুড কোলেস্টেরলও রয়েছে। ময়দার সঙ্গে মিশ্রিত করে ডিম বিভিন্ন প্রধান খাবার ও স্ন্যাকস তৈরি করতে পারে। এটি বাড়ির জন্য আবশ্যক পণ্য। একইভাবে, দুধও একটি উচ্চ-দক্ষ প্রোটিন সম্পূরক এবং বহুমুখী একটি উপাদান।

হিসেব থেকে দেখা যায়, প্রায় ৯ কিলোগ্রাম চাল, ২০ লিটারের বেশি তেল এবং ১৭ কিলোগ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাবারে তিন মাস ধরে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যায়।

এখন খাবার থাকলে, কীভাবে খাওয়া যাবে? এটাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমাদের লক্ষ্য হলো মানবদেহের চাহিদা মেটানোর জন্য যতটা সম্ভব খাদ্য সামগ্রীর সংগ্রহ থেকে বুঝে-শুনে ব্যবহার করা এবং তার সময়কাল বাড়ানো। তাই প্রথমে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে অপ্রয়োজনীয় খাদ্যের বিষয়গুলো শেষ করা উচিত্। ‘খাদ্যের সত্যতা উন্মোচন’ সেই তথ্যচিত্রে কিছু যৌক্তিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়। তথ্যচিত্রের পরীক্ষায় একই ক্যালোরিযুক্ত খাবারের তিনটি গ্রুপ করা হয়।

একটি হল অধিক নুডুলসসহ উচ্চ-কার্বযুক্ত খাবার, আরেকটি হল অধিক ক্রিমসসসহ উচ্চ-চর্বিযুক্ত খাবার এবং তৃতীয়টি হলো অধিক মাংসসহ উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার।

দেখা যায়, উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময়ের জন্য মানুষকে তৃপ্ত করে।

অন্যদিকে সঠিক উপাদান নির্বাচন করলে খরচের ক্ষেত্রে তা সাশ্রয়ী হতে পারে। ছোট প্লেটে শাকসবজি ও ভাত রাখালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ কম খাবার খাওয়া যায়। পাত্রটি যত বড় হবে, আপনি নিজের অজান্তেই তত বেশি খাবেন।

বিদেশে এই পরীক্ষাটি করা হয়। সিনেমা হলে দর্শকদের এলোমেলোভাবে বড় বা ছোট প্যাকেজের পপকর্ন বিতরণ করা হয়। ফলাফল থেকে জানা যায়, বড় বা ছোট অংশ, যাই হোক, দর্শকেরা বলেন যে, তারা সব খেতে পারেন।

এখানে মস্তিষ্কে দৃষ্টিশক্তির প্রভাবের কথা উল্লেখ করতে হয়। যখন আরও বেশি খাবার আপনার সামনে থাকবে, আপনি পেট ভরে গেলেও থামতে পারবেন না। কিন্তু যখন কম খাবার থাকে, তখন মস্তিষ্ক এই সংকেত তৈরি করে যে, খাদ্য মূল্যবান, যা পূর্ণতার অনুভূতি দেয়। শুধু তাই নয়, একাগ্রতা তৃপ্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।

দৈনন্দিন জীবনে অনেক লোক ভিডিও দেখতে দেখতে খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়েছে এবং অজান্তেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেয়ে ফেলে।

সীমিত খাদ্য থাকলে ‘খাবারের উপর নজর দেওয়া’ তৃপ্তি অর্জনে সাহায্য করে এবং কম খরচে সাহায্য করে। এই বিষয়ে একটি পরীক্ষাও হয়েছে। একদল শিশু এই পরীক্ষায় অংশ নেয়।

প্রোগ্রাম গ্রুপ শিশুদের জন্য পিজ্জা এবং একটি টিভি সেট প্রস্তুত করে। টিভি অনুষ্ঠান উপভোগ না-করার চেয়ে অনুষ্ঠান উপভোগের অবস্থায় শিশুরা তিনটি পিজ্জা বেশি খেয়ে ফেলে।

দ্বিতীয়ত, নষ্ট হওয়ার কারণে খাবারের অপচয় এড়ানো উচিত্। অতিরিক্ত মজুদ করা এবং খাওয়া শেষ না করা হলো আরেকটি ভুল। অল্প ‘শেলফ লাইফের’ খাবারের জন্য আমরা সেকেন্ডারি প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে তাদের শেলফ লাইফ বাড়াতে পারি। মাশরুমের মতো ছত্রাকযুক্ত পণ্যগুলো শুকানোর পরে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে। জলের পণ্যগুলো দিয়ে কাঁকড়া, চিংড়ির কেক এবং চিংড়ির পেস্টে তৈরি করা যেতে পারে। ম্যারিনেট করা এবং রোদে শুকানোর পরে মাংসকে সসেজ, বেকন, শুকনো মাংস তৈরি করতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

যদিও শাকসবজি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, এর সমাধান করার ব্যবস্থাও আছে। ইন্সট্যান্ট নুডলসসহ ডিহাইড্রেটেড ভেজিটেবল ব্যাগটি সবাই নিশ্চয়ই দেখেছেন। টমেটো, লেটুস, জুচিনি ইত্যাদি উচ্চ জলের সবজি শুকিয়ে ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে এবং ব্যবহার করার সময় শুধুমাত্র জল দিয়ে সবজি রান্নার উপযোগী করা যেতে পারে। স্টোরেজের স্থান ব্যাপকভাবে কমে যায়। কম পানিযুক্ত সবজি, যেমন- ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি প্লাস্টিকের মোড়কে মুড়ে ফ্রিজারে দীর্ঘমেয়াদী স্টোরেজের জন্য রাখা যেতে পারে। মটরশুঁটি ও আলুর মতো সবজি কাটা, রান্না করা এবং ঠান্ডা করার পর ফ্রিজে রাখলে ভালো হয়।

প্রচুর লবণ দিয়ে ম্যারিনেট করা কার্যকরভাবে শাকসবজির জীবনকাল দীর্ঘায়িত করতে পারে। বাধা কপি থেকে আচার জাতীয় সবজি তৈরি করায় কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায়। এটি মশলা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, ঠান্ডা খাবারের মতো সাইড ডিশ হিসাবে খাওয়া যায় এবং ভাজা, সিদ্ধ, স্টিউ করা যেতে পারে।

খাবার সাশ্রয় করার সঙ্গে সঙ্গে নিজ উদ্যোগে খাবার তৈরি করা উচিত্। মহামারীর সময় হাইড্রোপনিক সবজি জনপ্রিয় হয়েছে। শ্যালট চাষ করতে চাইলে আপনার জন্য পানির বোতল এবং শিকড়সহ এক মুঠো শ্যালট প্রয়োজন। দুই ও তিন দিনের মধ্যে তাজা নতুন চারা গজাবে। অবশ্যই, অনেক মানুষ নিজেই সবজি চাষ শুরু করেছে। বাঁধাকপির কিছু প্রারম্ভিক পরিপক্ব জাত মাত্র অর্ধেক মাসে বড় হয় ও খাওয়া যায়। লেটুস, পালং শাক, কেল এবং অন্যান্য সবজিরও বড় হওয়ার জন্য মাত্র এক মাস প্রয়োজন।

বিদেশে কেউ কেউ বীজ মজুদ করেছেন। ভবিষ্যতে পারমাণবিক বিকিরণ সংকট মোকাবিলা করার জন্য সরাসরি কৃষির যুগ শুরু হতে পারে। একটি তাঁবু তৈরি করা হয়েছে, যা প্রয়োজনে সরানো যায়। একটি সবজির চালা স্থাপন করা হয়েছে। বেঁচে থাকার উত্স নিজের হাতে ধরে রাখার জন্য একটি বীজ ব্যাংকও স্থাপন করা হয়েছে বিদেশে। চারশ’ ধরনের সবজির বীজ, দুইশ’ ধরনের আলুর বীজ, তিনশ’ ধরনের কুমড়ার বীজ এবং সাতশ’ ধরনের মশলার বীজ আছে তাদের বীজ ব্যাংকে।

মজুদ করার সুবিধা মানে কিন্তু খাবার নিশ্চিত করা নয়।

যখন উপকরণের সরবরাহ কম থাকে, তখন মজুদের ‘জিনিস বিনিময়’ করা এবং কাজে লাগানো যেতে পারে।

মহামারীতে বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কফি, কোলা, তামাক ও অ্যালকোহল খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মহামারীর কারণে অনেক নাগরিক ‘বেঁচে থাকা’ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আসলে বিদেশে অনেকের জিনিসপত্র জমা করার অভ্যাস আছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ মহাপ্রলয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ বিষয়ে অনেক তথ্যও পাওয়া যায়। যেমন, একজন ৩৮ বছর বয়সী বিদেশি নারী ভূগর্ভস্থ দুর্গ তৈরি করেছেন এবং পরবর্তী দুই বছরের জন্য খাবার ও যুদ্ধের অস্ত্র মজুদ করেছেন। কিছু লোক বিমান দুর্ঘটনার ভয়ে গর্ত খনন করেছে এবং ভূগর্ভে বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় তৈরি করেছে। গুহায় তিন বা চার বছর ধরে খাবার সংরক্ষণ করা হয় এবং চার হাজার লিটারেরও বেশি পানি রাখা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার মহাপ্রলয়ের জন্য জনগণকে প্রস্তুতি নেওয়ার উত্সাহ দিয়েছে। কোনো কোনো লোক ২০০৮ সালে আর্থিক সংকট শুরু হলে নিজেকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। তারা বোমাহামলার হুমকির মোকাবিলা করতে পাহাড়ে বাড়িঘর তৈরি করেন এবং অনেক চাল ও চিনি মজুদ করেন। কমপক্ষে ৪ বছরের জন্য সবকিছু মজুদ করেছেন তারা।

সাধারণ মানুষ ছাড়া, বিশ্বের ধনকুবেররাও মজুদ করতে পছন্দ করেন। বিল গেইটস সংক্রামক রোগসহ অন্যান্য মহামারীর ভয়ে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করেন।

তাই তিনি একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছেন এবং বেঁচে থাকার প্রচুর উপকরণও সংগ্রহ করেছেন।

পর্যাপ্ত জীবন উপকরণের সরবরাহ হলো নিরাপত্তাবোধের উৎস।

আশা করি, মহামারী দ্রুত শেষ হবে। আজকের অনুষ্ঠান শোনার পর বিভিন্ন খাবারের বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষ সময় জিনিস মজুদ-সংক্রান্ত একটি সাধারণ ধারণা পেয়েছেন আশা করি। লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn