গ্রামীণ প্রজেকশনিস্ট: ‘আলোছায়ার’ শিল্প গ্রামাঞ্চল আলোকিত করবে
চেং ফোং , তিনিই হেইলোংচিয়াং প্রদেশের মুতানচিয়াং শহরের গ্রামীণ ডিজিটাল সিনেমা লাইন লিমিটেডের একজন প্রজেকশনিস্ট। তিনি একটি সুপরিচিত মুখ, একের পর এক গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে অসংখ্যবার যাতায়াত করেছেন তিনি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে জনকল্যাণমূলক চলচ্চিত্র দেখানোই ছিল তার প্রধান কাজ।
তিনি ও তার ৯০ জনেরও বেশি সহকর্মী মুতানচিয়াং শহরের ৫৬টি থানা ও জেলার ৮৮৭টি প্রশাসনিক গ্রামে গ্রামীণ ডিজিটাল চলচ্চিত্র বিতরণ এবং প্রজেকশন নিয়ে কাজ করেছেন।
চেংফোং বলেন, গ্রামের যে কোনো একটি খোলা জায়গা আমাদের কাজ করার জায়গা হতে পারে। দর্শক মাত্র একজন হলেও আমাদের অবশ্যই সিনেমা দেখানোর প্রতি জোর দিতে হবে এবং গ্রামাঞ্চলে ‘আলো-ছায়ার’ শিল্প নিয়ে যেতে হবে।
বিংশ শতাব্দীর ৯০’র দশকে স্কুলজীবন শেষ করার পর তিনি শহরের থিয়েটারে একজন প্রজেকশনিস্ট হিসেবে মুতানচিয়াং শহরের একটি থিয়েটারে চাকরি করা শুরু করেন।
২০০৭ সালে মুতানচিয়াং শহরকে গ্রামীণ চলচ্চিত্রের ডিজিটাল প্রজেকশনের একটি পরীক্ষামূলক শহর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এরপর মুতানচিয়াং শহরের গ্রামীণ ডিজিটাল সিনেমা লাইন লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। চেংফোংয়ের কাজ আগের চেয়ে পরিবর্তন হয়েছে। তিনি একজন গ্রামীণ ভ্রাম্যমাণ প্রজেকশনিস্ট হয়ে উঠেছেন।
চেংফোং বলেন, তখন আশেপাশের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন তাকে গ্রামাঞ্চলে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কারণ, গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ খারাপ এবং সেখানে চলচ্চিত্র দেখানো অনেক কষ্টকর কাজ। তবে তিনি সে কথা শোনেন নি এবং মনের জোরে এই কাজে লেগে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি প্রয়োজন। গ্রামীণ চলচ্চিত্র প্রজেকশনের কাজ কেবল সিনেমা দেখানোই নয়, গ্রামীণ এলাকায় আধ্যাত্মিক সভ্যতার নির্মাণ শক্তিশালী করা।’ গ্রামীণ এলাকায় অল্প কিছু সিনেমা হল ছিল এবং সেই সময় গ্রামবাসীরা সারা বছর একটি সিনেমাও দেখতে পারত না।
এভাবেই চেংফোং গ্রামীণ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ প্রজেকশনিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, তিনি মুতানচিয়াং শহরের অধীনে প্রায় সবগুলো থানা ও জেলায় গিয়েছেন। তিনি মনে করতে পারেন যে, কোন গ্রামে ভালো স্ক্রিনিংয়ের অবস্থা আছে, কোন রাস্তার কোন অংশে খাড়া ঢালু এবং কোন রাস্তাগুলো এলোমেলো-অগোছালো।
মুতানচিয়াং শহরের ভৌগোলিক অবস্থাও সুবিধার নয়। দশ ভাগের নয় ভাগই হলো পাহাড় ও নদী। বাকি এক ভাগ হলো সমতল জমি। সেখানে পাহাড়ি অঞ্চল ও নদীর সংখ্যা বেশি। পাহাড়ি অঞ্চলে পৌঁছাতে হলে আগের সারা দিন ধরে গাড়ি চালাতে হয়। সময় সাশ্রয়ের জন্য মাঝেমাঝে রাতের বেলাও গাড়ি চালাতে হয়। শীতের রাতে ঘুম আসলে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশ থেকে এক মুঠো তুষার তুলে মুখ মুছতেন তিনি। এরপর শান্ত হয়ে আবার পথে চলতে শুরু করতেন।
বছরের পর বছর ধরে, প্রজেক্টর হলো চেংফোংয়ের সবজে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। অতীতে, যখনই তিনি একটি ঢালু রাস্তায় যেতেন, তিনি ও তার সহকর্মীরা প্রজেক্টর নিয়ে সবচে বেশি চিন্তিত ছিলেন। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে প্রজেক্টরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করতেন তারা। ফিল্ম প্রজেকশন থেকে ডিজিটাল প্রজেকশন পর্যন্ত, চেংফোং অগণিত প্রজেক্টর ব্যবহার করেছেন। ‘প্রযুক্তি এগিয়েছে এবং স্ক্রিনিং পরিস্থিতি আরও ভালো ও উন্নত হচ্ছে। তবে যা অপরিবর্তিত আছে, তা হলো গ্রামীণ জনকল্যাণমূলক স্ক্রিনিংয়ের প্রতি আমাদের আনুগত্য। চেংফোং এভাবে বলেছেন।
চেংফোং ও তার সহকর্মীদের দৃষ্টিতে, প্রজেকশনিস্টরা ফিল্ম এবং দর্শকদের মধ্যে একটি ‘সেতুর’ মতো ভূমিকা পালন করেছেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, যেখানে সাংস্কৃতিক জীবন দুর্লভ, সেখানে যোগাযোগে ভূমিকা পালন করার জন্য একটি ‘সেতু’ প্রয়োজন।
কখনও কখনও স্ক্রিনিংয়ের পরে, অনেক দর্শক সরঞ্জামগুলো প্যাকআপ করতেন এবং পরবর্তী স্ক্রিনিং কখন হবে তা জিজ্ঞাসা করতেন। চেংফোং বলেছেন যে, প্রত্যেকের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়েছে, যা তাদের খুব তৃপ্তি দেয়। চেংফোং বলেন, ‘আমি অধ্যবসায় চালিয়ে যাব এবং মানুষের কাছে জ্ঞান ও আনন্দের পাশাপাশি আরও ভাল সিনেমা নিয়ে যাব।’
গ্রামীণ এলাকায় ভালো সিনেমা পৌঁছে দিতে মনের জোরে টিকে থাকা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুতানচিয়াং শহরের গ্রামীণ ডিজিটাল সিনেমা লাইন লিমিটেড তাদের বরাদ্দ বাড়িয়েছে এবং ‘কাস্টমাইজড পয়েন্ট-এন্ড-ক্লিক’ মোড প্রবর্তন করেছে। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী সর্বশেষ সিনেমা কিনেছে ও প্রদর্শন করেছে। বিশেষ করে, চমৎকার দেশীয় সিনেমাগুলো। বর্তমানে, ৮৮টি ভ্রাম্যমাণ ফিল্ম স্ক্রিনিং টিম প্রতি বছর দশ হাজারেরও বেশি ফিল্ম দেখায়। চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা ও অগ্নি প্রতিরোধ, প্রজনন এবং রোপণ ইত্যাদি বিষয় একত্রিত করেছে; যাতে কৃষকদের ধনী হওয়ার ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
লিলি/তৌহিদ/শুয়ে