বাংলা

'ফোর স্প্রিংস' শিরোনামে মুভি

CMGPublished: 2022-04-08 16:15:18
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

এ চলচ্চিত্রের বিষয় খুব সহজ। পরিচালক লু ছিং ই নিজেই হ্যান্ডহেল্ড ডিজিটাল ভিডিওয়ের মাধ্যমে বাসায় দৈনন্দিন ছোট ছোট ঘটনা শুটিং করেন, তারপর টানা চার বছর ধরে বসন্ত উত্সবে বাসায় কাটানো দিনগুলো সম্পাদনা করে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। তাই চলচ্চিত্রের নাম ‘চারটি বসন্ত’ দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে। এ চলচ্চিত্রে পরিচালকের বাবা-মা ও বড় ভাই ও বোন অভিনয় করেছেন। তাই, একে হোম ভিডিও ডকুমেন্টারি বললেই বেশি ভালো হয়।

অধিকাংশ সময় পরিচালক বাইরে কাজ করেন এবং খুব কম সময় বাসায় সময় দেন। তার ক্যামেরায় বাবা-মাকে বসন্ত উত্সবের সময় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বাবা মা’র জন্য সন্তান বড় হওয়ার পর, সারা বছর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বছর শেষে পুনর্মিলন বা নৈশভোজ।

চলচ্চিত্রে মা বলেন, এভাবে কিছু খাবার তৈরি করতে চাই, ওইভাবে কিছু খাবার বানাতে চাই। আমি জানি, তোমরা মাত্র কয়েক দিনের জন্য ফিরে আসো এবং বেশি খেতে পারো না, কিন্তু যদি আমি অনেক খাবার তৈরি না করি, তাহলে বসন্ত উত্সবের অর্থ কি?

তাই তাই শীত চলে যায় বসন্ত আসে এবং প্রতি বছরই এভাবে চলতে থাকে।

অনেক দর্শক মনে করেন, চলচ্চিত্রে বাবা-মা নিজেদের মতো করে যে কথা বলেন- তা দর্শনে পরিপূর্ণ।

একটু চিন্তা করে দেখুন। এখন বসন্ত উত্সবে জন্মস্থানের বাড়িতে গিয়ে ‘এই খাবার, ওই খাবার খেতে’ চাই আমরা। অর্থাৎ, বসন্ত উত্সবের স্বাদ মানেই- বাসায় গিয়ে খাবার খাওয়ার স্বাদ।

চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে টেবিল খুব বিশেষ একটি স্থান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই অভ্যাস লালিত হয়ে আসছে। যদি বিশেষ কোনো কথা থাকে, তাহলে চলুন একসাথে খাবার খাওয়া যাক।

যে কোনো একটি জাতীয় অনুষ্ঠান বা পরিবারের ছোটখাটো বিষয় হোক না কেন, চীনারা রাতের খাবার টেবিলে আলোচনা করতে এবং সমাধান করতে পছন্দ করে। এটি চীনাদের চিন্তা-চেতনায় খোদাই করা একটি প্রথা।

ডাইনিং টেবিল হলো দ্বন্দ্ব প্রশমনের হাতিয়ার এবং কোমলতা ও মাধুর্যের স্থান।

চীনাদের জীবন ও কাজের বিভিন্ন সমস্যা রাতে খাবারের টেবিলে আলোচনা ও সমাধান হয়।

যেমন ধরুন, অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করতে চান, প্রথমে খাবারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন, পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে আবার মিলিত হতে চান, অবশ্যই ডিনারের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান বা শেষকৃত্যানুষ্ঠান যাই হোক না কেন, অবশ্যই আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের খেতে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। বার্ষিক প্রধান ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব কীভাবে উদযাপন করা যায়? জিজ্ঞাসা করার কোনো দরকার নেই, এটি অবশ্যই বাড়িতে খাবার খাওয়া। প্রবীণ চীনারা মুখে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে অভ্যস্ত ছিলেন না। খাবারের টেবিলে সবজি ও মাংস হলো সন্তানদের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও স্নেহ প্রকাশের সবচে সরল পদ্ধতি।

মনোযোগ দিয়ে খাবারের উপাদান বেছে নেওয়া এবং রান্না করার প্রক্রিয়ায় নিজের সুগভীর ভালোবাসার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। অনেকে বলেন, বড় হওয়ার পর বাসার স্বাদ আর খেতে পারে না। আসলে খাবারের কোনো মশলার অভাব নয়, বরং রান্না করার সেই মনোভাব না থাকাই হলো সমস্যা।

রাতের খাবারের জন্য বাড়ি যাওয়া’- এই নীরব কাজটি যেন পিতামাতাকে বলছে: আমি আপনাদের আবেগটি পেয়েছি।

এটি চীনাদের যোগাযোগের অনন্য উপায়। যা পরিবারের মধ্যে আন্তরিক বোঝাপড়া তৈরি করে।

অনেক চীনা পিতামাতা গভীরভাবে আশা করে যে, তাদের সন্তানরা রাতের খাবারের জন্য বাড়িতে ফিরে আসবে।

মুভিতে পরিচালকের বড় বোন অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর, তার বাবা তার জন্য খাবারের টেবিলে একটি জায়গা রেখে দেন এবং থালা-বাসন ও চপস্টিকস রাখতে কখনও ভোলেন না।

অনেক দর্শক সেই মুহূর্তে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ধনী-গরীব, বৃদ্ধ বা অসুস্থ যাই হোক না কেন, যতদিন পরিবার জন্মস্থানে থাকে, রাতের খাবারের টেবিলে তার স্থান সবসময় থাকবে। এটি একটি দুর্দান্ত ভালবাসার প্রকাশ, যা জীবন ও মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করতে সক্ষম।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, আজকাল প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশে আমাদের কাছে হাই-টেকের মাধ্যমে যোগাযোগের বিভিন্ন উপায় তৈরি হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, আমরা বুঝতে পেরেছি যে, যোগাযোগের সবচে আদিম উপায়টিই হল সবচে উষ্ণ।

এর কারণ, পৃথিবীতে এমন আবেগ আছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মাঝেমাঝে ফোনে বা ইন্টারনেটে দশ হাজার বাক্য বলার চেয়ে বাড়িতে গিয়ে টেবিলে বসে খাবার খাওয়া অনেক ভালো।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn