বাংলা

ব্রাজিলের বিখ্যাত কার্টুনিস্ট মাউরিসিও আরাউজোদে সুলা

CMGPublished: 2022-03-10 17:07:43
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শেষ হয়েছে। তবে গেমসে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ব্রাজিল অলিম্পিক কমিটির তৈরি পোস্টার এখনও ইন্টারনেটে দেখা যায়। এই পোস্টারে ব্রাজিলের সুপরিচিত কার্টুন চরিত্র ‘মনিকা’ স্পোর্টস স্যুট পরেন এবং তার প্রিয় নীল স্টাফ খেলনা খরগোশ ধরে রাখেন। এটিই হলো ব্রাজিলের বিখ্যাত কার্টুনিস্ট মাউরিসিও আরাউজোদে সুলার সর্বশেষ সৃজনশীলতা। ৮৭ বছর বয়সী মাউরিসিও আরাউজোদে সুলা নিজের কাজ বন্ধ করেন নি। তার একটি বড় স্বপ্ন হলো চীনে তার সিরিজ কৌতুকের বই প্রকাশ করা।

মাউরিসিও আরাউজোদে সুলা ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় ৬০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি দু’শতাধিক কার্টুন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে ‘মোনিকা ও তার অংশীদার’ নামে সিরিজ বই ৪০টি ভাষায় অনুদিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে। যার মোট পরিমাণ একশ কোটির বেশি। ব্রাজিলে মোনিকা কয়েক প্রজন্মের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং প্রায়ই সবাই ব্রাজিলিয়ান শিশু ‘মোনিকার’ ভক্ত। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ প্রথমবারের মতো মনিকার এই কাল্পনিক চরিত্রকে তার প্রতীকী দূত হিসেবে নিয়োগ করে।

নিজের কার্টুনিস্ট পেশা প্রসঙ্গে মাউরিসিও সুলা বলেন, ৪ বছর বয়সে তিনি রাস্তার পাশে প্রথম কমিক বই কুড়িয়ে পান। সেই কমিক বই পড়তে তাঁর খুব ভালো লাগে। কমিক বই পড়ার মাধ্যমে তিনি কেবল নিরক্ষরতা মুক্তই হন নি, বরং জীবন ও মূল্যবোধের প্রতি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও লাভ করেন। তাই বড় হওয়ার পর তিনি ছবি আঁকাকে নিজের পেশা হিসেবে বাছাই করেন। কার্টুনের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলা যায় বলেও তিনি মনে করেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে মাউরিসিও সুলা বলেন, তার কার্টুন শিল্পকর্ম লাখ লাখ শিশু দেখছে এবং তাদের সুষ্ঠুভাবে বড় হতে দেখে তিনি খুব গর্বিত। তিনি বলেন, আমি যে কাজটি করি তার সবচে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। আমি লাখ লাখ ব্রাজিলিয়ান শিশুদের তাদের জীবনে প্রথমবার পড়তে এবং সাক্ষর করতে সাহায্য করেছি, ফলে তারা পড়তে ভালোবাসে এবং পড়ার একটি ভাল অভ্যাস গড়ে তুলেছে।

মাউরিসিও সুলার শিল্পকর্মের নানা চরিত্রের মধ্যে অনেকেই তার আশেপাশের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু। মোনিকা হলো তার দ্বিতীয় কন্যার নাম। ১৯৬৩ সালে ‘মোনিকাকে’ প্রথমবারের মতো তার শিল্পকর্মে দেখা যায়। ‘মোনিকা ও তার বন্ধুরা’ নামে সিরিজ কার্টুন বইতে মাউরিসিও সহজ, সরল ও রহস্যময় ভাষা দিয়ে হালকা ও আনন্দময় দৃশ্যের মাধ্যমে শিশুদের জীবনের সহজ তথ্য জানিয়েছেন। বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এবং মৈত্রী, পরিবার ও নীতিশাস্ত্রের প্রতি শিশুদের সঠিক বোঝাপড়া গড়ে তুলেছেন তিনি।

অনেক বয়স্ক হলেও মাউরিসিও সুলা অব্যাহতভাবে নতুন সৃজনশীলতা ও শিল্পকর্মও রচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, শ্রেষ্ঠ একজন কার্টুনিস্ট হতে চাইলে প্রথমে এই ক্যারিয়ারকে খুব পছন্দ করতে হয়, ছবি আঁকার মাধ্যমে গল্প বলার শক্তিশালী ইচ্ছা থাকতে হয়। দ্বিতীয়ত মনোযোগ দিয়ে কার্টুন বাজার ও প্রকাশনা খাত নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছাও থাকতে হয়।

কৌতুকের বই ছাড়া, মাউরিসিও সুলার কোম্পানি কার্টুন ছবি ও মঞ্চনাটকের সঙ্গে কাজ করে, থিম পার্ক খোলা, কম্পিউটার খেলা নকশা করা এবং কার্টুন-খেলনা বিক্রি করার সঙ্গেও তারা জড়িত। ব্রাজিলের অনেক জায়গায় মোনিকা এবং এর অংশীদারের কার্টুন মূর্তি দেখা যায়।

মাউরিসিও সুলা কয়েকবার চীন সফর করেছেন। তিনি সহযোগী অংশীদারকে চীনে শিল্পকর্ম প্রকাশ করার অনুরোধও করেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলের ফুটবল ও ইতিহাস আর সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করা এবং ‘মোনিকা ও তার বন্ধুরা’ সিরিজের বইগুলো। মাউরিসিও সুলা বলেন, আমার স্বপ্ন হলো চীনে আরও কার্টুনের বই প্রকাশ করা। আমি ছোট চীনা বন্ধুদের নানা গল্প বলতে চাই।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn