হংকংয়ের বিখ্যাত অভিনেতা গ্যাব্রিয়েল ওয়োং
চীনে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। লন্ঠন উত্সব উদযাপনের পর বসন্ত উত্সব শেষ হয়। তবে গ্যাব্রিয়েল ওয়োং বসন্ত উত্সব চলাকালে চিত্রগ্রহণের দৃশ্যে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সুযোগ কারও জন্য অপেক্ষা করে না। প্রত্যেকের জন্য দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় রয়েছে। আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম না করেন তাহলে অন্যরা আপনাকে ছাড়িয়ে যাবে।’
এখন ৫৮ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল ওয়োং হংকংয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। তার অভিনীত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র হংকং ও মূলভূভাগের দর্শকদের সমাদর পেয়েছে। ২০০৩ সালে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুয়াংচৌ শহরে বাস করতেন। নিজের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুলভূভাগের সঙ্গে তাঁর সুগভীর হৃদ্যতা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আসলে আমার স্ত্রী মুলভূভাগে কাজ করতেন। বিয়ে করার পর সে আমার সঙ্গে হংকংয়ে চলে যায়। ২০০৩ সালে মুল-ভূভাগে আমার তিনটি মুভি চিত্রায়ন করা হয়। সেই সময় আমি মুলভূভাগে ফিরে গিয়ে ক্যারিয়ার উন্নত করতে চেয়েছিলাম। তাই পরিবারের সবাই একসঙ্গে মুলভূভাগে এসেছি।’
মুলভূভাগ ও হংকংয়ের মধ্যে পারফরম্যান্স শৈলীতে সূক্ষ্ম পার্থক্য নিয়ে গ্যাব্রিয়েল ওয়োং প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতেন। তিনি স্মরণ করে বলেন যে, তিনি যখন মূল ভূভাগের ক্রুদের সঙ্গে প্রথম চিত্রগ্রহণ করেছিলেন, তখন অভিনয়ের পরে তিনি সর্বদা কিছুটা অদ্ভুত বোধ করেছিলেন এবং একই ক্রুর অভিনেতারাও ‘সমন্বয়হীনতা’ বোধ করতেন, তবে সমস্যাটি কী, তা তিনি ধরতে পারেন নি।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ সময় গবেষণা করেছি এবং অবশেষে পার্থক্য বুঝতে পেরেছি। মূলভূভাগের পারফরম্যান্স মৌখিক অভিব্যক্তির উপর নির্ভরশীল এবং দু’জন অভিনেতার মধ্যে কথোপোকথন সময় কিছুটা বিরতি থাকে। হংকংয়ে পারফরম্যান্স মুখের অভিব্যক্তি এবং শরীরের ভাষার উপর নির্ভর করে তথ্য পৌঁছাতে পছন্দ করে। অভিনেতাদের কথোপকথনের মধ্যে কোন ফাঁক থাকে না এবং ছন্দও দ্রুততর হয়ে থাকে।
এ ধরনের পার্থক্য আয়ত্ত করে বারবার চর্চা করার পর গ্যাব্রিয়েল ওয়োং আরো ভালোভাবে মুলভূভাগের চলচ্চিত্র ও টিভি মহলে নিজের কাজ সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি মুলভূভাগের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ইন্টারনেট মুভির শুটিং ও নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করেছেন। শেনচেন, শাংহাই, হাংচৌ-সহ মুলভূভাগের অনেক শহরে পা রাখেন তিনি।
কুয়াংতং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় এলাকার উন্নয়নে গ্যাব্রিয়েল ওয়োং দারুণ উত্তেজিত হন। তিনি বিশ্বাস করেন, কুয়াংতং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় এলাকার উন্নয়ন সরাসরি প্রায় ১০ কোটি মানুষের সঙ্গে জড়িত। মাতৃভূমির বৃহত্তর বাজারের ওপর নির্ভর করে এখানে তরুণদের কাজের অনেক জায়গা রয়েছে। অভিনয়, গান গাওয়া এবং পরিবেশন ইত্যাদির জন্য বড় প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
২০০৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্যাব্রিয়েল ওয়োং কুয়াংচৌ শহরের দ্রুত পরিবর্তনই দেখেন নি, বরং মূল ভূভাগের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পের বিকাশেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মনে রেখেছেন যে, ২০০৩ সালের কাছাকাছি সময় মূলভূভাগের ক্রুরা তুলনামূলকভাবে সহজ সরঞ্জাম ব্যবহার করত এবং ‘বক্স অফিস’ নাগালের বাইরে বলে মনে করত। কিন্তু মাত্র কয়েক দশকে তারা শীর্ষস্থানীয় সরঞ্জাম ও স্ব-চাষিত প্রতিভায় পূর্ণ মেধাবী লোক তৈরি করেছে এবং কয়েক মিলিয়ন ও বিলিয়ন ইউয়ান অর্জনের বক্স অফিসের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
মূল ভূভাগের ক্রমবর্ধমান সংক্ষিপ্ত ভিডিও বাজার চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন শিল্পে উন্নয়নের আরো বেশি সুযোগ এনে দিয়েছে। গ্যাব্রিয়েল ওয়োং এসব প্ল্যাটফর্মের বৈশিষ্ট্য ক্রমাগত শিখছেন, বিভিন্ন শৈলীর মধ্যে আরো বেশি শিল্পকর্মের মাধ্যমে দর্শকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা দেওয়ার প্রত্যাশা করন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিলিবিলি ওয়েবসাইট মূলত তরুণদের লক্ষ্য করে গড়ে উঠেছে। সিওহোংশু প্রধানত মেয়েদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। তৌইনের বিশাল ব্যবহারকারী আছে। খুয়েশৌ উত্তর চীনে বেশি জনপ্রিয় বলে মনে হয়।’
দেখা যায়- এ সব প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে তিনি খুব সুপরিচিত। তিনি বলেন, ‘অভিনেতা হওয়া ম্যারাথন দৌঁড়ের মতো। বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিন্ন ধরনের চাহিদা আছে। আপনাকে ক্রমাগত নিজেকে এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, শৈল্পিক জীবন চালিয়ে যেতে হবে এবং তা উজ্জ্বল হতে হবে।’
চলতি বছরের বসন্ত উৎসবের সময় গ্যাব্রিয়েল ওয়োং আগের মতো কুয়াংচৌ শহরে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে ছুটির মূল্যবান সময় কাটিয়েছেন। চান্দ্রপঞ্জিকার পঞ্চম দিন ভোরে শুটিংয়ে অংশ নিতে স্টুডিওতে ছুটে যান তিনি। তিনি বলেন, ছুটির সময় আমি আমার পরিবারের সাথে অবসর সময় উপভোগ করতে পছন্দ করি। বিশ্রাম নেওয়ার পর আমি কাজ চালিয়ে যাবো এবং আরও ভালোভাবে অভিনয় করার চেষ্টা করব।