বাংলা

কপিরাইট খাতে চীনের প্রথম মানবাধিকার চুক্তি কার্যকর হবে

CMGPublished: 2022-02-17 19:26:33
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সম্প্রতি বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংস্থার কাছে কপিরাইটের খাতে বিশ্বের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র মানবাধিকার চুক্তি, অর্থাত্ মারাকেশ চুক্তির অনুমোদন জমা দিয়েছে চীন। চুক্তিটি তিন মাস পর চীনে কার্যকর হবে।

মারাকেশ চুক্তির কোনো গুরুত্বপূর্ণ অর্থ আছে কি? চুক্তিটি কার্যকর হলে কার জন্য কল্যাণকর হবে? বিস্তারিত শুনুন আজকের আলোছায়া অনুষ্ঠানে।

প্রিয় বন্ধুরা, এখন আপনারা যে শব্দ শুনছেন তা হলো বেইজিংয়ের অন্ধদের জন্য তৈরি করা সিনেমা কর্মীদের অন্ধ দর্শকদের জন্য চলচ্চিত্রের প্রধান বিষয় বর্ণনার শব্দ।

এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে অন্ধ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা ৩০ কোটির বেশি। তাদের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষ চীনে বাস করেন। চীনা সমাজের এই সদস্যদের সুবিধাজনকভাবে তথ্য পাওয়া, শিল্পকর্ম উপভোগ করা এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণ করার অধিকার ও আশা আছে।

অন্ধ, দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষ অথবা ‘মুদ্রণ অক্ষমতায়’ ভোগা লোকদের পড়ার সুবিধা দিতে ২০১৩ সালের ২৭ জুন মরক্কোর মারাকেশে বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংস্থার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক কূটনৈতিক সম্মেলনে ‘মারাকেশ চুক্তি’ পাস হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তা কার্যকর হয়। এ চুক্তি পাস হওয়ার পর পরই এতে সই করেছে চীন। বর্তমানে চীন বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংস্থার কাছে ‘অন্ধ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা অন্যান্য মুদ্রণ অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য প্রকাশিত রচনায় অ্যাক্সেসের সুবিধা দিতে ‘মারাকেশ চুক্তির’ অনুমোদন দিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিটি তিন মাস পর চীনে কার্যকর হবে। ইস্ট চায়না ইউনিভার্সিটি অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ল-এর অধ্যাপক ওয়াং ছিয়েন মারাকেশ চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ সময় ও গভীর গবেষণা করছেন। তিনি মারাকেশ চুক্তি স্বাক্ষরের কূটনৈতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্য। তিনি বলেন, চুক্তিটি চীনে কার্যকর হওয়া মানে চীনের ১ কোটি ৭০ লাখ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বই, অডিওবুক, অ্যাক্সেসযোগ্য ফিল্ম ও টেলিভিশনের শিল্পকর্মের অধিকার পাবে। দীর্ঘদিন ধরে কপিরাইটের কারণে বই, অডিও-ভিজ্যুয়াল এবং অন্যান্য প্রকাশনার অ্যাক্সেসযোগ্য ফরম্যাট সংস্করণ প্রকাশে সমস্যা হচ্ছিল। এই সমস্যা কেটে যাবে এবং এই বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে আরও রঙিন বিশ্ব হাজির হবে।

‘মারাকেশ চুক্তি হলো আন্তর্জাতিক কপিরাইট চুক্তিতে প্রথম মানবাধিকার চুক্তি। এর ভূমিকা অনেক বেশি। যা শুধু কপিরাইট-ভিত্তিক সংরক্ষণের মান বাড়ানো নয়, বরং ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের শিক্ষা গ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক জীবনে অংশগ্রহণের চাহিদা মেটানোর জন্য কপিরাইট-নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।’

মারাকেশ চুক্তি অনুযায়ী এতে স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলো দেশীয় আইনে এসব নিয়ম নির্ধারণ করেছে যে, অনুমোদনকারী সংস্থাগুলো কপিরাইট ওনারের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন অ্যাক্সেসযোগ্য সংস্করণ তৈরি করে মুদ্রণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারবে।

চীন বরাবরই মুদ্রণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিল্পকর্ম ব্যবহার করার অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষায় অনেক গুরুত্ব দেয়। চীন মারাকেশ চুক্তির সিদ্ধান্ত এবং প্রয়োগে অনেক ফলপ্রসূ কাজ করেছে। ওয়াং ছিয়েন বলেন, ২০১৩ সালে চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিদল অন্যান্য প্রতিনিধিদলকে সমর্থন করেছে, সহনশীল ও সহযোগিতামূলক চেতনার আলোকে মারাকেশ চুক্তি সুষ্ঠুভাবে পাস হওয়ায় ভূমিকা রেখেছে এবং এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরপর চীন সক্রিয়ভাবে ‘স্বত্বাধিকার আইন’ সংশোধন করেছে এবং চীনে মারাকেশ চুক্তি কার্যকরে আইনগত প্রস্তুতি নিয়েছে।

অধ্যাপক ওয়াং ছিয়েন বলেন,

‘সাধারণ মানুষের মতো মুদ্রণ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা পাওয়া এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে অংশ নেওয়া ও শিল্পকর্ম উপভোগ করার অধিকার আছে। ২০২০ সালে সংশোধিত ‘স্বত্বাধিকার আইন’ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ার পর জাতীয় গণকংগ্রেস মারাকেশ চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে ‘কপিরাইট আইন বাস্তবায়নের প্রবিধান’ সংশোধন করা হচ্ছে। এতে অ্যাক্সেসযোগ্য সংস্করণ তৈরি এবং বিস্তারিত নিয়ম প্রণয়ন করা যাবে।’

দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষদের মধ্যে রয়েছে অন্ধ, দুর্বল দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষ এবং রোগ ও শারীরিক সমস্যার কারণে দৃষ্টিশক্তিহীন লোক। চীনের ১ কোটি ৭০ লাখ দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের মধ্যে অন্ধ মানুষের পাশাপাশি অনেক দুর্বল দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষ রয়েছে।

ওয়াং ছিয়েন বলেন, মারাকেশ চুক্তিতে অ্যাক্সেসযোগ্য সংস্করণ নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ব্রেইল পদ্ধতির সংস্করণ ছাড়াও, বড় অক্ষরের সংস্করণও আছে। দুর্বল দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন লোক তা পড়তে পারে। তা ছাড়া, অডিওবুকও আছে। এসব বৈচিত্র্যময় অ্যাক্সেসযোগ্য সংস্করণের শিল্পকর্মের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তিহীন লোকেরা সমভাবে শিল্পকর্ম উপভোগ করে ও শিক্ষা দেয়। তা ছাড়া চীনের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কপিরাইট খাতে চীনের আন্তর্জাতিক কণ্ঠ ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

ওয়াং ছিয়েন বলেন,

‘চীন মারাকেশ চুক্তির অনুমোদন দেওয়ার পর চীনা ভাষা বলতে পারা লোকজন যারা অন্য দেশ- বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে বাস করেন, তারা খুব কম খরচে বা বিনাখরচে চীনা ভাষার অ্যাক্সেসযোগ্য সংস্করণের সুবিধা পাবেন।’

দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের জন্য অন্ধকার বা অস্পষ্ট বিশ্ব হলো তাদের জীবনের নিয়মিত অবস্থা। তবে আমরা দেখতে পাই যে, অনেক দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষ পরিশ্রম করতে পারেন ও জীবনকে ভালোবাসে। তারা একটি দক্ষতা দিয়ে সমাজের সেবা করেন এবং নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ভালো চাকরিও পান। চীনে মারাকেশ চুক্তি কার্যকর হওয়ায় দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের জন্য আরো বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে।

প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা এখন যে শব্দ শুনছেন তা হলো বেশ কয়েকজন দুর্বল দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষের কথোপকথন।

‘আমি বিশ্বের জন্য একটি জানালা খুলতে চাই, যা জ্ঞান ও তথ্যের আলোর মতো আমার মনে উষ্ণতা দেবে।’

‘হাত দিয়ে স্পর্শ করি এবং কান দিয়ে শুনি। বই পড়ার মাধ্যমে স্বপ্ন অন্বেষণের পথে আরো সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাবো।’

‘আশা করি, আরও অনেক অন্ধ-বন্ধু মারাকেশ চুক্তির আওতায় নিজের পছন্দের পেশায় জড়িত হবেন।’

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn