বাংলা

ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রের ইতিহাস

CMGPublished: 2022-01-06 14:36:33
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

ক্রীড়ার ক্ষেত্রে চীন বড় রাষ্ট্র থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। এই সময় তথ্যচিত্রের ইতিহাস রেকর্ড করা এবং যুগের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে।

প্রথমে চলুন চীনের ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রের উন্নয়নের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হই।

ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রে প্রধানত ক্রীড়া ইভেন্ট, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন বিষয়ে শুটিং করা হয়। ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রে প্রতিযোগিতা ও মানুষের সমন্বয় সহজে রেকর্ড করা নয়, বরং যুগের প্রেক্ষাপট, সামাজিক জীবন এবং তখনকার যুগে ক্রীড়া শিল্প সম্পর্কে জনগণের ধারণা এবং মনোভাব প্রতিফলিত হয়। ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষ ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্রীড়ার প্রভাবের ওপর দৃষ্টিপাত করা, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল চেতনা প্রকাশ করা এবং মহান ক্রীড়ার মনোভাব আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করা।

চীনের ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্র উন্নয়নের ইতিহাসের ওপর দৃষ্টি দিলে সহজেই দেখা যায়, ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর ক্রীড়াবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রে ‘রাজনীতিকরণ’, ‘সংস্কৃতিকরণ’ এবং ‘বৈচিত্র্যতা’ এ তিনটি ধাপ অতিক্রম করেছে।

১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর এই সুপ্রাচীন দেশ নানা প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হয়ে ধাপে ধাপে পুনরুদ্ধার হয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক খাত ও সংস্কৃতি ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে ও উন্নত হচ্ছে। ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্র রচনায় প্রাথমিক সময় শুরু হয়েছে। ১৯৫৬ সালে ‘চিরদিন তরুণ’ এবং ১৯৫৭ সালে ‘আমরা তরুণ’ তথ্যচিত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার শুরুতে ব্যাপক জনগণের ক্রীড়া তত্পরতা চালানোর দৃশ্য রেকর্ড করা হয়। ‘চিরদিন তরুণ’ তথ্যচিত্রে বিভিন্ন বয়স ও পেশার জনগণের ক্রীড়া তত্পরতার দৃশ্য ফুটে ওঠে। এতে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা ও প্লট ছিল না। বিভিন্ন পরিবেশে চীনা জনগণের ক্রীড়া তত্পরতা চালানোর বাস্তব অবস্থা তুলে ধরা হয় তথ্যচিত্রে এবং এতে চীনা জনগণের সুস্থ ও উন্নত মানসিক অবস্থা প্রকাশিত হয়।

১৯৫৯ সালে প্রতিযোগিতার থিমযুক্ত নানা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। চীনের প্রথম জাতীয় গেমসের রেকর্ড করা তথ্যচিত্র ‘Forever Young’-কে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়। এতে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, ঘোড়্‌দৌড়, টেবিল টেনিস ও বাস্কেটবলসহ ৩০টিরও বেশি ইভেন্ট চিত্রায়িত করা হয়েছে। একদিকে, এটি ন্যাশনাল গেমসের দুর্দান্ত খেলা রেকর্ড ও প্রদর্শন করেছে, অন্যদিকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক বিনিময় এবং মাতৃভূমির নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে অর্জিত নানা সাফল্য প্রচার করেছে। এ তথ্যচিত্রের পরিচালক আগে বলেছিলেন যে, এর মাধ্যমে দর্শকেরা জাতীয় গেমসের উষ্ণ অনুভূতি উপভোগ করতে পারবে এবং মাতৃভূমির ক্রীড়া শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাবে। এ তথ্যচিত্র অনুপ্রেরণা দেবে—এটাই হলো আমাদের লক্ষ্য।

সেই সময়ের ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রে সবচে ভালো ক্যামেরার ভাষা দিয়ে খেলাধুলা রেকর্ড করা হতো। জাতীয় খেলাধুলার ধারণা এবং খেলাধুলার প্রাণশক্তি ব্যবহার করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর গোটা সমাজের প্রাণশক্তি প্রকাশ পেয়েছে।

অবশ্যই, এই সময় স্পোর্টস ডকুমেন্টারির অনেক ঘাটতি ছিল, যেমন একঘেয়ে শট, একক দৃশ্য এবং গুরুতর রাজনৈতিক প্রচার ইত্যাদি। তবে প্রাথমিক যুগে ক্রীড়া বিষয়ক তথ্যচিত্রের জন্য এটিই একমাত্র পথ ছিল এবং এটি অনিবার্য প্রবণতা ছিল। রাজনীতিকরণের সময় ক্রমাগত অন্বেষণের ভিত্তিতে ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রের সংস্কৃতিকরণের সময় আসে।

১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বেইজিং অলিম্পিক গেমসের সময় ছিলো ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রের উন্নয়নের সময়কাল। সেই সময় তথ্যচিত্রে ক্রীড়া খাতের সঙ্গে জড়িত স্বাধীন মানুষের ওপর ফোকাস করা হতো এবং ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ফুটিয়ে তোলা হতো।

১৯৯০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ১১তম এশিয়ান গেমস বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। চীন এ নিয়ে প্রথমবারের মতো সার্বিক আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ‘এশিয়ান গেমসের শহর’, ‘এশিয়ান গেমসের তারকা’ এবং ‘এশিয়ান গেমসের ভাবানুভূতি’ এ তিনটি তথ্যচিত্রে চীনের ক্রীড়া প্রতিনিধিদলের খেলোয়াড়দের কঠোর প্রশিক্ষণ এবং স্টেডিয়াম নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ রেকর্ড করা হয়। তা ছাড়া, ‘অবিস্মরণীয় ১৬ দিন’ শিরোনামে ৯টি পর্বের তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সমাপনী অনুষ্ঠান এবং খেলোয়াড়দের স্টেডিয়ামে পদক জয় করার চমত্কার মুহূর্তও রেকর্ড করা হয়। এসব ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রে এশিয়ান গেমসকে থিম হিসেবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বেইজিং এশিয়ান গেমসের নানা দিক স্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গভাবে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়।

তা ছাড়া, সেই সময় অনেক শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন তথ্যচিত্র দেখা যায়। এসব টিভি তথ্যচিত্র শুধুমাত্র ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও খেলোয়াড়দের ওপর সীমাবদ্ধ নয়, বরং ক্যামেরা দিয়ে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের ওপর দৃষ্টিপাত করা হয়। সেই সময়ের অনুপ্রেরণা ‘মানুষের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’ থেকে ‘ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িত মানুষের প্রতি আগ্রহে’ রূপান্তরিত হয়।

স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং অংশ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এসব টেলিভিশন তথ্যচিত্রে। এমন পরিবর্তন ২০ শতকের ৯০-এর দশকে চীনের নতুন তথ্যচিত্র আন্দোলনের চেতনা ক্রীড়াবিষয়ক তথ্যচিত্রে ছড়িয়ে পড়ার ফলাফল।

সবার নিজের জীবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত্। সেই সময়ের তথ্যচিত্রে রাজনৈতিক প্রচারণার রং হালকা ছিলো এবং মানুষ ও ক্রীড়ার সুষম উন্নয়ন বর্ণনা করা হয়েছিল।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn