ডিজনিতে কাজ করা চীনা অ্যানিমেটরগণ-China Radio International
সুগভীর এশীয় সাংস্কৃতিক রংয়ের ডিজনির সর্বশেষ কার্টুন চলচ্চিত্র ‘Raya and The Last Dragon’ ২০২১ সালের ৫ মার্চে একইসঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়। ছবিতে দর্শকদের কল্পনার দেশে ‘ড্রাগনের আশীর্বাদ কিংডমে’ নিয়ে যাওয়া হয়। দর্শকরা রায়া ও তার বন্ধুদের সঙ্গে শেষ কিংবদন্তী ড্রাগনকে খুঁজে বের করার যাত্রা শুরু করেন। অদ্ভুত ধারণা এবং সুন্দর দৃশ্য-বিন্যাস ডিজনিতে বেড়ে ওঠা বেশ কয়েকজন চীনা অ্যানিমেশন ডিজাইনারদের জ্ঞানের সঙ্গে জড়িত।
‘Raya and The Last Dragon’ নামের কার্টুন চলচ্চিত্রের এনভায়রনমেন্টাল ভিশনের পরিচালক হুয়াং মিন সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘ড্রাগনের বংশধর’ হিসেবে এশিয়ান সংস্কৃতির প্রতি চীন থেকে আসা অ্যানিমেশন ডিজাইনারদের গভীর উপলব্ধি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্কৃতি দ্বারা একটি কল্পনার জগৎ তৈরি করতে সহায়ক হয়েছে।
চীনের চিয়াংসি প্রদেশের হুয়াংমিন ২০১২ সালে ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে যোগদান করেন। থিয়েনচিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক পাসের পর তিনি অ্যানিমেশন ডিজাইন অধ্যয়নের জন্য সান ফ্রান্সিসকো আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ‘Wreck-It Ralph’, ‘Moana’ ও ‘Frozen’সহ ডিজনির ধারাবাহিক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, তার নেতৃত্বাধীন দলের দায়িত্ব হলো পরিচালকের সাথে প্রাথমিক টু-ডি ধারণাগত নকশাটি কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি সিনেমার দৃশ্যে রূপান্তর করা এবং আলোক বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা করে চূড়ান্ত ছবিটি সম্পন্ন করা।
এ চলচ্চিত্রের ভূমিরূপ, ভবন, গাছপালা, পোশাক ও খাদ্যের ক্ষেত্রে এশীয় বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা হয়েছে। যেমন এশিয়ানদের পারিবারিক ধারণা, বাবা-মা ও সন্তানদের আবেগপ্রবণ অভিব্যক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয় পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে কিছুটা আলাদা।
জানা গেছে, অস্কার বিজয়ী পরিচালক ডোন হোলের নেতৃত্বে ‘Raya and The Last Dragon’ চলচ্চিত্রের নির্মাণদলের মধ্যে মোট ৮ জন হচ্ছেন চীনের মুলভূভাগের চলচ্চিত্র কর্মী।
‘Raya and The Last Dragon’ নামে কার্টুন চলচ্চিত্রের স্পেশাল ইফেক্টস সুপারভাইজার থোং লে বলেন, চীনারা শৈশব থেকেই ড্রাগন সম্পর্কিত বিভিন্ন মূর্তি ও গল্পের সঙ্গে সুপরিচিত ছিলেন। তাই যখন তিনি ড্রাগন-সম্পর্কিত এই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় অংশ নেন, তখন আন্তরিকভাবে কাজ করেছিলেন। কনসেপ্ট ম্যাপের উপর ভিত্তি করে স্ক্রিন ইফেক্ট তৈরি করা এবং জল, আগুন ও বিস্ফোরণের মতো সিমুলেশন ইফেক্টের একটি সিরিজ স্থাপন করা তার দায়িত্ব।
২০১৪ সালে হুনান প্রদেশ থেকে এসে ডিজনিতে যোগ দেন থোং লে। তিনি যথাক্রমে শেনইয়াং অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি পাস করেন। তিনি Big Hero 6 সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
থোং লে বলেন, ‘Raya and The Last Dragon’ নামের এ কার্টুন চলচ্চিত্র আমি ও আমার এশিয়ান সহকর্মীরা বিশ্বজুড়ে এশিয়ান সংস্কৃতিকে পরিচয় করানোর সুযোগ পেয়েছি।
তিনি বিশেষভাবে পর্দার পিছনের একটি ফুটেজের কথা উল্লেখ করেন। ওই ছবিতে পোরিজ খাওয়ার একটি দৃশ্য আছে। এশিয়ানরা যে পোরিজ খায়, তা সম্পর্কে আমেরিকান সহকর্মীদের কোনও জ্ঞান নেই।
হুয়াং মিন ও থোং লে বলেন, হলিউডে কাজ করা বিদেশি হিসেবে তারা ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক বোঝাপড়াসহ অনেক অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে বাধ্য। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেন যে, যোগাযোগ যত গভীর হবে, হলিউড ও বিশ্ব চলচ্চিত্র মঞ্চে তত বেশি চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দেখা যাবে।
হুয়াং মিন ও থোং লে ২০১৯ সালে ‘Wreck-It Ralph-২’ চলচ্চিত্রে চমত্কার কাজ করেন। এ কারণে তারা আমেরিকান ভিজ্যুয়াল এফেক্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডসের সেরা পরিবেশগত ডিজাইন পুরস্কার এবং সেরা চরিত্রের স্পেশাল ইফেক্টস্ ডিজাইন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ডিজনি ও চীনের সংশ্লিষ্ট পক্ষ যৌথভাবে চলচ্চিত্র বিনিময়ের ধারাবাহিক কার্যক্রমের আয়োজন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, টানা কয়েক বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়ায় ডিজনির সদর দফতর পরিদর্শন এবং সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়া দশ জনেরও বেশি চীনা অ্যানিমেশন পরিচালক এবং প্রযোজকদের আমন্ত্রণ জানানো। পাশাপাশি বিনিময় ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ডিজনির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণও জানানো প্রভৃতি। হুয়াং মিন এবং থোং লে ডিজনির সিনিয়র চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অনেক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন।
হুয়াং মিন বলেন, এসব বিনিময়ের মাধ্যমে দেশীয় অ্যানিমেশন শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার উপলব্ধি আরও গভীর হয়েছে। দেশীয় অ্যানিমেশনের অগ্রগতি সবার কাছে সুস্পষ্ট। পাশাপাশি চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রচেষ্টার ফলে অসামান্য অগ্রগতিও অর্জিত হয়েছে।
থোং লে মনে করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময় জোরদার করা পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দেশীয় অ্যানিমেশন মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে অনেক গল্প রয়েছে। চীনাদের গল্প বলার নিজস্ব পদ্ধতি আছে, হলিউডের পদ্ধতি অনুসরণ করারও দরকার নেই। যোগাযোগের মাধ্যমে সর্বশেষ চলচ্চিত্র তৈরির প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও বেশি জানা এবং সেগুলো চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা সম্ভব।