বাংলা

নগ ম্যান তাত: হংকংয়ের একজন সম্মানজনক অভিনেতা-China Radio International

criPublished: 2021-03-25 12:35:32
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা নগ ম্যান তাত (Ng Man Tat) নামে হংকংয়ের জনৈক প্রয়াত অভিনেতার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। যেসব চলচ্চিত্র অনুরাগীরা নগ ম্যান তাতকে পছন্দ করেন, তাকে আন্তরিকভাবে ‘তাত চাচা’ বলে ডাকেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নগ ম্যান তাত রোগাক্রান্ত হয়ে হংকংয়ের ইউনিয়ন হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যুর পর কয়েক দিন ধরে সমাজের বিভিন্ন মহলে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শোক প্রকাশ করা হয়।

হংকংয়ের টেলিভিশন ব্রডকাস্টস লিমিটেড তাঁর স্মরণে বিশেষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তার অনেক বন্ধু অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং সবাই একসঙ্গে তার জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন।

প্রযোজক লিউ চিয়া হাও স্মরণ করে বলেন, আমার মনে আছে যে, তাত ভাই সবসময়ই নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বলতেন, অভিনয়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, এটি হলো পার্টনারকে স্পষ্ট করে বোঝা, আরেকটি হলো অভিনয়ের ছন্দ বোঝা।

নগ ম্যান তাতের অনেক শিল্পকর্ম কয়েক প্রজন্মের মানুষের বড় হওয়ার সঙ্গে জড়িত। জনৈক অভিনেতা স্টিভেন চৌ’র সঙ্গে অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো অনেকের মনে ক্ল্যাসিকাল শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে।

‘শাওলিন সকার’ নামে চলচ্চিত্রটি ৬ লাখ হংকং ডলারের বেশি আয় করে বক্সঅফিসে তত্কালীন হংকংয়ের চলচ্চিত্রের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়।

চিং উয়াং হংকংয়ের একজন পরিচালক। ১৯৭৫ সালের একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান থেকে এই দু’জনের কাজ শুরু হয়। তখন নগ ম্যান তাত অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত অভিনয়ের মাধ্যমে তার অতুলনীয় কমেডি সম্ভাবনার শক্তি তুলে ধরছিলেন। তারপর তাদের দুজনের সহযোগিতায় দশটিরও বেশি চলচ্চিত্র তৈরি হয়।

‘তাত ভাই ছিলেন সবচে ভালো পার্শ্ব অভিনেতা।’ পরিচালক চিং উয়াং বলেন, ‘তিনি নিজের অভিনীত সব ছোট চরিত্র আলোকিত করতে পারেন এবং তিনি শতভাগ ভালো একটি সবুজ শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। এটাই খুব বিরল।’

নগ ম্যান তাত ১৯৫২ সালে চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের শিয়ামেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হংকংয়ে বসবাস করা শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি হংকং টিভিবি সদস্য হওয়ার জন্য তৃতীয় প্রশিক্ষণ ক্লাসে ভর্তি হন এবং শ্রেষ্ঠ ফলাফল নিয়ে সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি পেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনোদন শিল্পে পা রাখেন।

প্রশিক্ষণ ক্লাস থেকে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি অনেক সহপাঠীদের মতো নানা রকমের চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন এবং এর মাধ্যমে নিজের অভিনয় দক্ষতা চর্চা করতে থাকেন। ১৯৭৯ সালে চোর লাউ হেউং নামে টিভি নাটকের ‘হু থিয়ে হুয়া’ নামক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের মনে গভীর দাগ কাটেন।

গত শতাব্দীর ৮০’র দশক থেকে নগ ম্যান তাত অভিনয়ের দক্ষতা নিয়ে গবেষণা করা শুরু করেন। চরিত্র খুব ছোট হলেও তিনি প্রতিটি চরিত্রে ভালোভাবে অভিনয় করার চেষ্টা করতেন।

চলচ্চিত্র ও টিভি নাট্যাঙ্গনে প্রবেশের প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে নগ ম্যান তাত শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার প্রাণবন্ত অভিনয় অনেক চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছে।

নগ ম্যান তাত মাঝেমাঝে বলতেন, ভালো একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকেরা চিরদিন একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে মনে রাখতে পারেন। চলচ্চিত্রে বা টিভি নাটকে ছোট চরিত্র নেই, আছে ছোট অভিনেতা। নগ ম্যান তাত মনে করতেন, প্রধান চরিত্র হোক বা পার্শ্ব চরিত্র হোক- সবই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

চলচ্চিত্র ও টিভি অঙ্গনে নগ ম্যান তাত নিজের ক্যারিয়ারকে অনেক সম্মান করার কারণে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই জগতের অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্মানও অর্জন করতে সক্ষম হন। তিনি তরুণ প্রজন্মের অভিনেতা অভিনেত্রীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

‘ছাত্রজীবনে স্কুলে লেখাপড়ার সময় নগ ম্যান তাত অনেক মনোযোগী ছিলেন। পেশার সঙ্গে জড়িত সব কাজের ওপর গুরুত্ব দিতেন তিনি।’ নগ ম্যান তাতের সহপাঠীরা এভাবে তার মূল্যায়ন করেছিলেন।

‘King of Comedy’ চলচ্চিত্রে তাত ভাইয়ের অভিনীত চোরাগোপ্তা পুলিশের চরিত্র জনগণের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক (Lee Lik-Chi) লি লিক ছি স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই চরিত্রে আগে অন্য এক অভিনেতার অভিনয়ের কথা ছিলো। খুব জরুরি একটি কাজের জন্য তিনি অভিনয় করতে পারেন নি। তাই পরিচালক তাত ভাইকে ফোন করেন এবং তাকে এই চরিত্রে অভিনয়ের আমন্ত্রণ জানান। সে সময় তাত ভাই চীনের মুল ভূভাগে অন্য একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছিলেন। পরিচালকের ফোন পাওয়ার পর তিনি সকালে মুল ভূভাগের চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করে বিকেলে বিমানযোগে হংকংয়ে ফিরে আসেন। পরিচালক তাত ভাইকে পরদিন শুটিং করার প্রস্তাব দেন। তবে তাত ভাই বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই, আমি রাতেই কাজ করতে পারি।’

তাত ভাইয়ের পেশাদারিত্ব (Eric Tsang) এরিক টিসাংয়ের মনে গভীর ছাপও ফেলে। হংকংয়ের বিখ্যাত অভিনেতা এরিক টিসাং স্মৃতিচারণ করে বলেন, শুটিং করার সময় তাত ভাই কখনওই পাণ্ডুলিপি নিয়ে যান না। কথোপকথন যত কঠিন হোক না কেন, তাত ভাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের লাইন মুখস্থ বলতে পারতেন। এমনকি অন্যদের কথাও আবৃত্তি করতে পারতেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় বা মানুষের সঙ্গে আচরণ করা, মঞ্চে বা নেপথ্যে, যাই হোক, তাত ভাই সবার সম্মান অর্জন করে নেন।

তাত ভাইয়ের গোটা জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি চলচ্চিত্রে কখনওই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন নি। পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যমে সারা চীনে বিখ্যাত হওয়া তাত ভাই ১০ম হংকং চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার খেতাব অর্জন করেন।

‘তাত ভাইয়ের সঙ্গে খেলে তিনি সবসময় প্রথমে বিল পেই করতেন।’ (Gabriel Wong) গ্যাব্রিয়েল ওয়োং নামে হংকংয়ের এক অভিনেতা এভাবেই বলেন। তিনি বহুবার নগ ম্যান তাতের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন।

বন্ধুদের কাছে তাত ভাই একজন উদার, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করা একজন মানুষ। আসলে তিনি একজন দেশপ্রেমিক মানুষও বটে। মারা যাওয়ার আগে মাইক্রোব্লোগে তাত ভাইয়ের শেষ কথাটি ছিলো: আমি একজন চীনা।

২০০৮ সালে ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের পর তাত ভাই সর্বপ্রথমে ভূমিকম্প-কবলিত অঞ্চলে চলে যান এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ও উদ্ধাকারীদেরকে অনুপ্রেরণা দেন। তিনি গৃহহারা একদল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসে খাবার খান ও আড্ডা দেন।

তারপর তিনি ‘ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখা— সিছুয়ানের ভূমিকম্পে জন্য বড় আকারের দুর্যোগ মোকাবিলার ত্রাণ অনুষ্ঠানে’ অংশ নেন।

তাত ভাই সারা জীবনে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি নানা নাটকে বা চলচ্চিত্রে দর্শকদের হাসিয়েছেন এবং মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn