বাংলা

চলুন বেড়িয়ে আসি: তুরস্কের কাপ্পাডোসিয়া-China Radio International

criPublished: 2020-10-23 14:02:41
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

তুরস্কের কেন্দ্রিয়য় এনাটোলিয়া অঞ্চলে অবস্থিত কাপ্পাডোসিয়া (Cappadocia) যা একসময় রোমান সম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিল। বর্তমানে আঁকা বাঁকা ভ্যালি ও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা অসংখ্য শিলা পাথর দিয়ে ঘেরা পুরো শহরটার বিস্তৃতি পাহাড় জুড়ে। আর এখানকার রূপকথা, ঐতিহ্যবাহী খাবার, নিরিবিলি পরিবেশ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অনেক পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে তুরস্ক (Turkey) এর কাপ্পাডোসিয়া শহর।

কাপ্পাডোসিয়ার দর্শনীয় স্থান

লুনার ল্যান্ডস্কেপ, মাটির নিচের শহর, গুহার ভিতরের চার্চ ও হট এয়ার বেলুন (Hot Air Balloon) রাইডের জন্য বিখ্যাত এই শহরে দেখার মতো অনেক জায়গা আছে। শহরের কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য জায়গা তুলে ধরা হল-

আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি: কাপ্পাডোসিয়ার আদিম অধিবাসীরা তীব্র শীত ও বন্য প্রাণীদের আক্রমন থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য পাথরের নিচে আশ্রয় নিত। পরবর্তীতে রোমান সৈন্যদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রথম খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বিরা এখানে লুকিয়ে থাকা নিরাপদ মনে করতো। মাটির নিচের এই জায়গা গুলো আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি নামে পরিচিত। তেমনি একট হলো কায়মাকলি আন্ডার গ্রাউন্ড সিটি । এখানে ৮ টি ফ্লোর আছে তবে পর্যটকদের জন্য শুধুমাত্র ৪টি ফ্লোর উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখানকার স্থাপত্য শিল্প নিঃসন্দেহে পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। কোনও ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছাড়া হাতে বানানো সরঞ্জাম দিয়ে ওয়ানারি, ভেন্টিলেসন স্পেস, স্টোরেজ রুম, শয়ন কক্ষ এমনকি চার্চ ও বানিয়েছিল এখানের আদিবাসীরা যা সত্যিই বিস্ময়কর।

পাসা বা (Pasabag) : কাপ্পাডোসিয়ার গোরেমে থেকে এভানোস আসার পথে জেলভেতে দেখা মিলবে এই সুন্দর ভ্যালির। কাপাডোসিয়া বেড়াতে আসলে অধিকাংশ পর্যটক এখানে আসতে পছন্দ করে বিশেষ করে এখানকার "ফেইরি চিমনি (Fairy Chimneys)" র জন্য। ফেইরি চিমনি মূলত বহু বছর আগেরভূ-স্তরের ক্ষয়ের কারণে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা চিমনির মতো দেখতে উঁচু পাথর। লোক মুখে প্রচলিত আছে,এখানে নাকি পাতাল রাজ্যের পরীরা থাকত তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে ফেইরি চিমনি। তবে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রথম দিকে ৪র্থ থেকে ৫ম শতাব্দীর সময় সন্ন্যাসীরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। এখানে চমৎকার কিছু আর্থ পিলার দেখতে পারবেন।

কাভুসান ভিলেজ : এভানোসে অবস্থিত এই ভিলেজে দুটি বাইজেন্টাইন চার্চ আছে। এই গ্রামে ঢোকা মাত্রই কিছু অদ্ভুত সুন্দর দেয়াল চিত্র চোখে পড়বে। হাইকিং করে এখানকার যেকোনো পরিত্যক্ত বাড়ির উপরে উঠলে কাপ্পাডোসিয়ার সবচেয়ে পুরনো সেন্ট জনস ব্যাপিস্টের চার্চ চোখে পড়বে।

ডেভরেন্ট ভ্যালি : কাপ্পাডোসিয়ার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে "পাইন ভ্যালি" হিসেবেও পরিচিত এই ভ্যালি বেশ জনপ্রিয়। এখানের চারপাশের দৃশ্য বেশ সুন্দর। এক পরাবাস্তব দৃশ্যের অবতারণ হয় যখন ভ্যালির খোঁদাইকৃত পাথরের রঙ প্রতিদিন সূর্যাস্তের সময় পরিবর্তন হয়ে থাকে। মূলত এখানে অতিরিক্ত আগ্নেয়গিরি ও ভূ-স্তরের ক্ষয়ের কারনের এই ধরনের বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে যা পূর্ণিমার সময় এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। আর তাই এই জায়গা লুনার ল্যান্ড স্কেপ দেখার জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন পশুর আকৃতি দিয়ে বেশ কিছু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে যা দেখলে মনে হবে যেন কোনও ভাস্কর্যের চিড়িয়াখানায় এসেছেন।

গোরেমে ন্যাশনাল পার্ক : এই পুরো পার্ক জুড়ে প্রাচীন চার্চ, গুহা ও অন্যান্য বেশ কিছু স্থাপনা আছে যা ঘুরে দেখতে বেশ ভালো লাগবে। এই ঐতিহাসিক স্থানে ঘোরার জন্য সাথে একটি গাউড বই বা কোনও ট্যুর গাইড থাকলে ভালো। বিশ্ব ঐতিহ্য বাহী স্থান হিসেবে ১৯৮৪ সাল থেকে এই স্থান স্বীকৃত। এখানে একটি উন্মুক্ত জাদুঘর আছে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে এই পার্ক।

জেলভে ওপেন এয়ার মিউজিয়াম: গুহার মধ্যে অবস্থিত এই জাদুঘর কাপ্পাডোসিয়ার একটি বিশেষ আকর্ষণ। এই গুহার আঁকাবাঁকা খাঁড়া পথ ধরে হাটার সময় গুহার ভিতরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো চোখে পরার মতো। এক ধরনের এডভেঞ্চারের অনুভূতি আসে এখানে ঘুরতে আসলে।

ওপেন এয়ার মিউজিয়াম

টাউন অফ এভানোস: কাপ্পাডোসিয়ার লাল নদী হিসেবে পরিচিত কিজিলিরমার্কের তীরে অবস্থিত টাউন অফ এভানোস। কাপ্পাডোসিয়ার গোরেমে থেকে ৮কিলো দূরে এই স্থান পর্যটকদের প্রানবন্ত করার মতো এক জায়গা। এখানে পর্যটকদের জন্য একটি আধুনিক হাম্মাম (তুর্কিশ স্নানাগার) আছে।

উছিসার ভিলেজ: এই গ্রামের উছিসার ক্যাসেল পর্যটকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়। এই ক্যাসেলটি কাপ্পাডোসিয়ার সর্বোচ্চ শীর্ষ বিন্দুতে অবস্থিত। এখান থেকে আশে-পাশের দৃশ্য গুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে। আর এই ক্যাসেল থেকেই একটু দূরে এরসিয়েস পর্বত চোখে পড়বে।

আর এখানের হট এয়ার বেলুন রাইডিং সারা বিশ্ব জুড়ে বিখ্যাত। তাই এখানে আসলে হট এয়ার বেলুন রাইডে উঠার মজা নিতে ভুলবেন না। আবার একই সাথে হর্স রাইডিং এর সুযোগ আছে।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়

কাপ্পাডোসিয়াতে মে থেকে জুন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারন এই সময় গরমটা কম থাকে আর রাতে বেশ ঠাণ্ডা থাকে। আর এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রচণ্ড বাতাস থাকার কারনে হট এয়ার বেলুন রাইডের মজা নিতে পারবেন না। তাই এখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে এপ্রিল মাসের সময় টা এড়িয়ে চলুন।

বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইস্তানবুলের বুয়ুক অটোগার থেকে রাতের বাসে রওনা দিলে সকালে কাপ্পাডোসিয়ার গোরেমে যেতে পারবেন। সাধারনত বাস ইস্তানবুল থেকে রাত ১১.৪৫ এর দিকে ছাড়ে আর সকাল ৮.৩০ টায় গোরেমে পৌঁছে। কাপ্পাডোসিয়া যাওয়ার জন্য ইস্তানবুলে নেভসেহির সায়াহাত ও মেট্রো ট্যুরিজমের বেশ কিছু ভালো বাস সার্ভিস আছে।

ট্রেনে যাবার ক্ষেত্রে, ইস্তানবুল থেকে আনকারা ও কন্যা হয়ে কাপ্পাডোসিয়া পৌঁছে। তারপর স্টেশন থেকে বাস বা ভাড়া গাড়িতে শহরের ভিতর চলে যেতে পারবেন। আবার ইস্তানবুল থেকে গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন। তবে সেই ক্ষেত্রে খরচ ও সময় দুটোই অনেক বেশী লাগবে।

ভ্রমণ খরচ

ইস্তামবুল থেকে বিমানে কাপ্পাডোসিয়া যেতে ৮০০০-১১০০০ টাকা খরচ হবে। আর এখানে বিশেষ আকর্ষণ হট এয়ার বেলুন রাইডের জন্য আলাদা একটা খরচের ব্যাপার আছে। তবে এই রাইডের খরচ নির্ভর করে কবে ও কতক্ষণ এই রাইডে থাকবেন। আর পিক সিজন হলে দাম অনেক বেশী হয়। তবে জনপ্রতি আনুমানিক ২৫০০-৩৫০০ টাকার মতো খরচ হবে এই রাইডের জন্য। সব মিলিয়ে কাপ্পাডোসিয়াতে ৫ দিন ৪ রাতের জন্য থাকলে বাংলাদেশ থেকে বিমানে ইস্তাবুল হয়ে কাপ্পাডোসিয়া যাতায়াত সহ ১,২০০০০-১,৫০০০০ টাকা খরচ হবে।

কিছু ভ্রমণ টিপস

• ইস্তানবুল থেকে কাপ্পাডোসিয়া যাওয়ার বিমানের টিকেট আগে থেকেই কেটে রাখলে অনেক কমে পাওয়া যাবে।

• এখানে কিছু কোম্পানি আছে যারা অনলাইনে কম খরচে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করে থাকে। তাই আগে থেকেই নেটে একটু খোঁজ খবর নিলে সুবিধা হবে।

• আন্ডার গ্রাউন্ড সিটিতে এক একটা রুমে যাওয়ার মাঝে বেশ কিছু টানেল আছে। টানেলে যাবার সময় সাবধানে যেতে হবে, কারন বাঁকানো রাস্তা হবার কারনে অনেক সময় এখানে মাথা ঘুরাতে পারে।

• গোরেমে ন্যাশনাল পার্কে সকাল সকাল গেলে ভালো ভাবে ঘুরতে পারবেন।

• ফেইরী চিমনির ভিতরে এমনকি উপরে উঠারও সুযোগ আছে। আর এখানে ছবি তোলার সুযোগ মিস করবেন না।

• এভানোসে অবস্থিত সিরামিক ও পটারি শপে একবার হলেও ঢু মারবেন।

• টাকা একটু বেশী খরচ করে হলেও বিলাসবহুল কেভ হোটেলে থাকতে পারেন, গুহার ভিতরে থাকার এই আমেজ আর কোথাও খুঁজে পাবেন না।

• রাতের কাপ্পাডোসিয়া শহর অন্য রকম এক আবহ তৈরি করে আর তাই তুর্কিশ নাইট দেখতে রাতের বেলা শুধু শহর দেখতে বের হলে ভালো লাগবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn