জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের ভূমিকা
নভেম্বর ২৫: সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামোগত কনভেনশনের ২৯তম স্বাক্ষরকারী দেশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বার্ষিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন বিশ্বের যৌথ চেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। জলবায়ু অর্থ থেকে নীতি পর্যন্ত, এটি বিভিন্ন স্বাক্ষরকারী দেশের স্বার্থ এবং বিশ্বের পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে, চীনের কি কি অবস্থান এবং ব্যবস্থা আছে? উন্নয়নশীল বড় দেশ হিসেবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন কি কি ভূমিকা পালন করেছে?
এবারের সম্মেলন প্রধানত জলবায়ু অর্থ সংগ্রহ, দেশের নিজস্ব অবদান, ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণের তহবিল, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে যাওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নজর রাখে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক সমাজকে উৎসাহিত করা যায় এবং প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে অবদান রাখা যায়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সাল সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে গরম বছর হতে চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বৈশ্বিক গড় পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প গড় থেকে প্রায় ১.৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (UNFCCC) নির্বাহী সচিব সায়মন স্টিয়েল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ দেশ দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ হলে, সমগ্র বিশ্বকে ভারী মূল্য দিতে হবে।
এতে চীনের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত লিউ চেন মিন বলেন, চীন আশা করে কোপ২৯ আন্তর্জাতিক সমাজকে আরও বড় আস্থা এবং আশা দিতে পারবে। সত্যিকার অর্থে ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর উচিত নিজেদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলা, আর্থিক সমর্থন নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামর্থ্য বাড়াতে সাহায্য করা। একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় কথা বলা এবং অন্যদিকে অন্য দেশের সবুজ শিল্পের বাধা সৃষ্টি করা, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করা হল গোটা মানবজাতির মুখোমুখি অভিন্ন চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, চীন সবসময় জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। চীন হল ‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামোগত কনভেনশন’-এর প্রথম দফা স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অন্যতম। চীন সবচেয়ে আগে ‘প্যারিস চুক্তি’তে স্বাক্ষর করে এবং তা অনুমোদন দেয়ার দেশগুলোর অন্যতম। চীন নিজের অবদান বাড়াতে এবং সক্রিয় ফলাফল অর্জন করতে সক্রিয়ভাবে ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সম্মেলনে চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের পরিবেশ সম্পদ বিভাগের উপ প্রধান ওয়েন হুয়া বলেন, বর্তমানে চীন বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সম্পূর্ণ নতুন জ্বালানি শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ২০২৩ সালে চীনের ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে এবং রপ্তানিকৃত বায়ু জ্বালানি ও ফটোভোলটাইক পণ্যগুলো অন্যান্য দেশকে প্রায় ৮১ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে অ-ফসিল জ্বালানির ব্যবহার ২০২৩ সালে জ্বালানি ভোগের ১৭.৯ শতাংশ এবং কয়লা ব্যবহারের অনুপাত ২০১৩ সালের ৬৭.৪ শতাংশ থেকে কমে ৫৫.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বন মজুদের পরিমাণ ১৯.৪৯ বিলিয়ন কিউবিক মিটারে পৌঁছেছে, যা ২০০৫ সালের তুলনায় ৬.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত, চীনে বায়ু জ্বালানি ও সৌর বিদ্যুতের মোট ইনস্টল করা ক্ষমতা ১.২ বিলিয়ন কিলোওয়াটে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ২.২৫ গুণ বেশি এবং ২০৩০ সালের নির্ধারিত ইনস্টল করা ক্ষমতা লক্ষ্যমাত্রা ছয় বছর আগেই অর্জন করেছে।
বহু বছর ধরে চীন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে সমর্থন করেছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত, চীন ইতোমধ্যে ৪২টি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে ৫৩টি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেছে এবং প্রায় এক শ’টি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প চালু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন গোটা মানবজাতির সামনে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রতিকূল প্রভাব সহ্য করার পাশাপাশি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের মতো জরুরি কাজের সম্মুখীন। একই ধরনের প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, সবুজ ও কম-কার্বন রূপান্তরের পথে যাত্রা করার জন্য সকল দেশের জন্য হাত মিলানো জরুরী। এতে একে অপরের শক্তি পরিপূরক হবে এবং পারস্পরিক উপকার হবে। চীন দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে দেখিয়েছে যে তারা সব পক্ষের সাথে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করতে, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে, প্যারিস চুক্তির পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নকে সমর্থন করতে এবং একটি বৈশ্বিক জলবায়ু শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচার চালাতে ইচ্ছুক।