বাংলা

কেন চীন লাতিন আমেরিকায় ব্যাপক স্বীকৃতি পাচ্ছে?

CMGPublished: 2024-11-22 18:22:35
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন এবং ব্রাজিল বুধবার ঘোষণা করেছে আরও ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় দু’দেশের সম্পর্ককে একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের চীন-ব্রাজিল সম্প্রদায়ে উন্নীত করা হবে। ব্রাজিলে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সদ্যসমাপ্ত সফরে দুই দেশ কৃষি, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবেশ সুরক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩০টিরও বেশি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় সফরকালে প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বোত্তম পর্যায়ে রয়েছে, যা শুধুমাত্র দুই দেশের জনগণের মঙ্গলই সাধন করেনি বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করেছে, গ্লোবাল সাউথের শক্তি ও কণ্ঠস্বরকে উন্নত এবং উচ্চকিত করেছে, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।

বুধবারের সিদ্ধান্ত চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের সহযোগিতামূলক প্রকৃতি এবং বিশ্বের সাধারণ উন্নয়নকে যৌথভাবে উন্নীত করার জন্য দুই দেশের সংকল্পকে প্রতিফলিত করে।

চীন টানা ১৫ বছর ধরে ব্রাজিলের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ব্রাজিলে বিদেশী বিনিয়োগের একটি প্রধান উৎস। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে ব্রাজিল থেকে চীনের বার্ষিক আমদানি ১০০ বিলিয়ন ডলারের উপরে রয়েছে।

দু’দেশের ভৌগোলিক দূরত্ব আনুমানিক ১৮ হাজার ৮০০ কিলোমিটার হলেও উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক শাসনের ক্ষেত্রে উভয় দেশের অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। জাতিসংঘ, জি-২০, বিআরআইসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মধ্যে তাদের সমন্বয় আরও ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সম্পর্কের উচ্চতা লাতিন আমেরিকায় চীনের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও প্রদর্শন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ওই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক কমিশনের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, চীন শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারই নয়, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের জন্য দ্রুত বর্ধনশীল রপ্তানি বাজারও।

এখন পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার ২২টি দেশ চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করেছে। ব্রাজিলের বেলো মন্টে হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্ট, অতি-উচ্চ-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন, আর্জেন্টিনার বেলগ্রানো কার্গাস রেলপথ, জ্যামাইকা উত্তর-দক্ষিণ হাইওয়ে এবং অন্যান্য বিআরআই প্রকল্পগুলো ভালো ফল দিয়েছে, যা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর কল্যাণ বয়ে এনেছে।

গত সপ্তাহে পেরু সফরের সময়, প্রেসিডেন্ট সি একটি সূচনা পয়েন্ট হিসাবে চ্যাঙ্কে বন্দরসহ চীন এবং লাতিন আমেরিকার মধ্যে একটি নতুন স্থল-সমুদ্র করিডোর তৈরি করতে পেরুর সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। একটি ফ্ল্যাগশিপ বিআরআই প্রকল্প হিসাবে, বন্দরটি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এশিয়া পর্যন্ত সমুদ্রের মালামাল পরিবহনের সময় অর্ধেক অর্থাৎ ২৩ দিন কমিয়ে আনবে এবং লজিস্টিক খরচ কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাধারণ উন্নয়নের সাধনার সাথে, লাতিন আমেরিকায় চীন ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এবং ওই অঞ্চলের দেশগুলো চীনকে স্বাগত জানাচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস সরাসরি এটিকে চীনের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিছনের দিকের উঠোনে’র অধিগ্রহণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এর যথার্থ কারণ রয়েছে। যেমন, চীন পেরু চাঙ্কে মেগা পোর্টে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যা দেশটির জন্য বার্ষিক ৪.৫ বিলিয়ন রাজস্ব এবং ৮ হাজারের বেশি সরাসরি চাকরি তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পেরুতে ৬৫ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে মাদক পাচার রোধে ৫ বছরে নয়টি ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার স্থানান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওয়াশিংটন এটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পেরুর নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের একটি ‘নতুন অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছে।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন অধ্যাপক মাইকেল শিফটারের বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে; “এটি একটি উল্লেখযোগ্য বৈপরীত্য। আপনি দেখুন, চীনারা মেগা-বন্দর প্রকল্প করে দিয়েছে, যা পেরুর ইতিহাসকে ইনকাদের কাছে ফিরে যেতে এবং মহত্ত্বের সন্ধান দিয়েছে। অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন দিয়েছে কোকা নির্মূলের জন্য আরও কিছু হেলিকপ্টার। এটি সম্পূর্ণ পুরানো এবং অকার্যকর সহযোগিতার মডেল।”

শিফটার আরো বলেন, প্রতিশ্রুত কিংবা মুখের কথায় ওয়াশিংটন পিছিয়ে নেই, “কিন্তু যখন এটি প্রকৃত সম্পদের প্রতিশ্রুতিতে আসে, সেখানে কিছুই নেই।”

বিপরীতে, চীন বলিষ্ঠ কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ উন্নয়নের প্রচার করছে, লাতিন আমেরিকার সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তার আন্তরিকতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে চাঙ্কে বন্দর উপহার দিয়েছে। বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে, চীন অন্যান্য দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর সাথে বিআরআই প্রকল্পগুলোকে সমন্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীন-লাতিন আমেরিকার বন্ধুত্ব ক্রমাগত প্রসারিত এবং গভীর হচ্ছে এবং মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভবিষ্যতসহ একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলার মূল শক্তি হয়ে উঠেছে।

মাহমুদ হাশিম

সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn