বাংলা

সি-লুলা বৈঠক: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অভিন্ন কল্যাণের চীন-ব্রাজিল কমিউনিটিতে উন্নীত করার ঘোষণা

CMGPublished: 2024-11-21 15:47:26
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

২১ নভেম্বর: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্থানীয় সময় বুধবার সকালে ব্রাসিলিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবন ডন প্রাসাদে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীন-ব্রাজিল সম্পর্ককে একটি আরও ন্যায্য বিশ্ব ও টেকসই গ্রহ গড়ে তোলা অভিন্ন কল্যাণের চীন-ব্রাজিল কমিউনিটিতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ সময় ব্রাজিল সফর করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। রাষ্ট্রপতি লুলা সর্বোচ্চ সৌজন্যের সাথে একটি জমকালো স্বাগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, যা চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক এবং চীনা জনগণের সাথে তার গভীর বন্ধুত্বকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত করে। চীন এবং ব্রাজিল পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের দুটি প্রধান উন্নয়নশীল দেশ। ব্রাজিল, চীনের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থাপনকারী প্রথম দেশ এবং চীনের সাথে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠাকারী প্রথম লাতিন আমেরিকান দেশও। চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক ইতিহাসে সর্বোত্তম অবস্থায় রয়েছে। এ সম্পর্ক কেবল দুই জনগণের মঙ্গলই বাড়ায় না, বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করে, ‘বিশ্ব দক্ষিণে’র শক্তি ও কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করে এবং বিশ্বে শান্তি এবং স্থিতিশীলতায় অসামান্য অবদান রাখে।

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন যে, আজ আমরা চীন-ব্রাজিল সম্পর্ককে একটি আরও ন্যায্য বিশ্ব ও টেকসই গ্রহ গড়ে তোলা অভিন্ন কল্যাণের চীন-ব্রাজিল কমিউনিটিতে উন্নীত করেছি এবং ব্রাজিলের উন্নয়ন কৌশলের সাথে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের কৌশল সংযুক্ত করেছি, যা চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের উন্নয়নের আরেকটি ঐতিহাসিক মাইফলক।

দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য সি চিন পিং ৪টি পরামর্শ পেশ করেন।

প্রথমত, অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গঠন করা এবং ক্রমাগত কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাসকে জোরদার করা। সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং ভূখন্ডের অখন্ডতার মতো মূল স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলোতে দৃঢ়ভাবে একে অপরকে সমর্থন করা উচিত। সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং তরুণদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে শক্তিশালী করা এবং চীন-ব্রাজিল অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গঠনের জনমতের ভিত্তিকে সুসংহত করা।

দ্বিতীয়ত, অভিন্ন উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কৌশল সংযুক্তি আরও গভীর করা। ব্রাজিলের উন্নয়ন কৌশলের সাথে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে একত্রিত করার ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি ও বাণিজ্য, অবকাঠামো, অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করা এবং মহাকাশ, কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিষ্কার শক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রতে সহযোগিতা জোরদার করা। চীন ব্রাজিলের সাথে দারিদ্র্য মুক্তির সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক যাতে দুই দেশের জনগণ উন্নত জীবনযাপন করতে পারে।

তৃতীয়ত, দুঃখ-দুর্দশার ভাগাভাগি করা এবং বিশ্বশান্তি ও ন্যায়বিচার রক্ষায় চীন ও ব্রাজিলের শক্তি প্রদর্শন করা। আমাদের উচিত সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাবাদের অনুশীলন করা, সত্য কথা বলা এবং সততার সাথে ব্যবসা করার উপর জোর দেওয়া এবং বিশ্ব শাসনকে আরও ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত দিকে বিকাশের জন্য উন্নীত করা। ব্রাজিলকে আগামী বছর ব্রিকস চেয়ারম্যান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে এবং ‘বৃহত্তর ব্রিকস সহযোগিতা’র উচ্চ-মানের উন্নয়নের প্রচারে চীন জোরালো সমর্থন করে ।

চতুর্থত, মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গড়ে তুলতে চীন ও ব্রাজিলের অবদান রাখা। প্রধান উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে, চীন এবং ব্রাজিলের উচিত মানবজাতির ভবিষ্যত এবং ভাগ্যের সাথে সম্পর্কিত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়া, ‘বিশ্বের জন্য একসাথে কাজ করা’ প্রচার করা এবং একসাথে কাজ করা। দু’পক্ষের উচিত সবুজ রূপান্তর, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা। চীন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের পক্ষগুলোর ৩০তম সম্মেলনের আয়োজনে ব্রাজিলকে সমর্থন করতে ইচ্ছুক।

সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে চীন, ব্রাজিলের সাথে চীন-ল্যাটিন আমেরিকা ফোরামের সফল আয়োজন চালিয়ে যেতে, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের উন্নয়ন সুবিধা এবং প্রয়োজনের সাথে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের যৌথ নির্মাণকে আরও ভালোভাবে সারিবদ্ধ করতে ইচ্ছুক।

লুলা বলেছেন যে, ব্রাজিল এবং চীন হল একে অপরকে সম্মান করা ও একে অপরের উপর নির্ভর করার ভালো বন্ধু। চীন ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। ব্রাজিল, চীনের সাথে সংযোগ এবং সরবরাহের স্তর উন্নত করতে এবং ব্রাজিল-চীন এবং ল্যাটিন আমেরিকা-চীনের সাধারণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রচারের জন্য উন্মুখ। ব্রাজিল সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে বিশ্ব বহুমুখীতা এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রচারের পক্ষে, এবং জাতিসংঘ, ব্রিকস এবং জি-২০’র মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোর মধ্যে চীনের সাথে যোগাযোগ ও সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে এবং বিশ্ব শাসনে দক্ষিণ দেশগুলোর ভূমিকা বাড়াতে ইচ্ছুক।

আলোচনার পর, দুই রাষ্ট্রপ্রধান যৌথভাবে ‘একটি আরও ন্যায্য বিশ্ব ও টেকসই গ্রহ গড়ে তোলা অভিন্ন কল্যাণের চীন-ব্রাজিল কমিউনিটি গড়ে তোলায় চীন ও ব্রাজিলের যৌথ বিবৃতি’তে স্বাক্ষর করেন।

দুই রাষ্ট্রপ্রধান যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ’ এবং ‘উন্নয়ন ত্বরান্বিত পরিকল্পনা’, ‘ব্রাজিলের নতুন শিল্প পরিকল্পনার’ ‘প্রতিবেশগত রূপান্তর পরিকল্পনা’ এবং সাউথ আমেরিকান ইন্টিগ্রেশন রুট প্ল্যানিং’ সমন্বিতকরণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।

সফরকালে, উভয়পক্ষ অর্থনীতি ও বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে ৩০টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করেছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn