বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
চীন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য চীন কয়লা নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে এবং শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। চীনের উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার, যেমন সোলার ও উইন্ড পাওয়ারে বিনিয়োগ, কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি, এবং বিদ্যুৎ খাতে ডিকার্বনাইজেশন। চীন তার মোট জ্বালানি ব্যবহারের মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০% নবায়নযোগ্য শক্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং উচ্চ দক্ষতার যন্ত্রপাতি ব্যবহারে নীতিমালা তৈরি করেছে যা বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমাতে ভূমিকা রাখছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় চীনের পদক্ষেপগুলো নিজস্ব উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. কার্বন নিরপেক্ষতা লক্ষ্য: চীন ২০৩০ সালের আগে কার্বন নির্গমনের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানোর এবং ২০৬০ সালের আগে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির প্রতি ইউনিটে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ২০০৫ সালের তুলনায় ৬৫% কমানোর লক্ষ্য স্থির করেছে।
২. পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি: চীন তার মোট জ্বালানি ব্যবহারে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের অংশ ২৫% এ উন্নীত করতে কাজ করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি ১.২ বিলিয়ন কিলোওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
৩. বনভূমি বৃদ্ধি: বন আচ্ছাদন বাড়িয়ে ৬ বিলিয়ন ঘন মিটারে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা কার্বন শোষণে ভূমিকা রাখবে।
৪. ন্যাশনাল এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম: চীন একটি জাতীয় নির্গমন বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু করছে, যা দূষণকারীদের দূষণ কমানোর জন্য আর্থিক প্রণোদনা তৈরি করবে।
৫. বৈদ্যুতিক যানবাহন: বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করছে। ২০২০ সালে, চীন ১.৩৭ মিলিয়ন নতুন জ্বালানি যানবাহন বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১% বেশি।
৬. বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে সবুজ অবকাঠামো: বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এর মাধ্যমে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এসব প্রচেষ্টার পাশাপাশি, চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে, যেমন প্যারিস চুক্তিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান। বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন হ্রাসে চীনের এই অবদানের ফলে আন্তর্জাতিক জলবায়ু শাসনে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চীন সক্রিয় কার্যক্রমের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু শাসনে আরও ‘চীনা সমাধান’ প্রদান করেছে। সম্প্রতি, চায়না মিডিয়া গ্রুপের সিজিটিএন এবং চীনের রেনমিন ইউনিভার্সিটি ‘নিউ এরা ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ মাধ্যমে বিশ্বের ৩৮টি দেশের ৭ হাজার ৬৫৮ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে পরিচালিত একটি প্রশ্নপত্র জরিপ চালিয়েছে। উত্তরদাতাদের ৮৩.৫% বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনে চীনের অবদানকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চীনের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো একটি পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য যুগপৎ আত্মবিশ্বাস ও শক্তি যুগিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৩.৫% উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে, চীন গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক অগ্রগতি করেছে; ৮০.৩% উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে সবুজ শক্তি অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। উত্তরদাতাদের ৮৫.৪% গাছ লাগানো এবং সবুজ এলাকা বৃদ্ধির জন্য চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। সমীক্ষায়, ৮২.৬% বৈশ্বিক উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চীনের প্রচেষ্টা ইতিবাচক।
জরিপে অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতাদের মধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং জাপানের মতো উন্নত দেশগুলির পাশাপাশি আর্জেন্টিনা, ভারত এবং কেনিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উত্তরদাতারাও ছিলেন।
মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি বাংলা, বেইজিং।