চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা ও উন্মুক্তকরণ
নভেম্বর ১১: সপ্তম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা গত ৫ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চীনের শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়। টানা সাত বছর ধরে, আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীদের জন্য ‘বিশ্বব্যাপী ক্রয়-বিক্রয়ের’ গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। আমদানি মেলার ‘বন্ধুদের বৃত্ত’ প্রসারিত হয়েছে; অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী ও প্রদর্শকরাও লাভবান হয়েছেন ও হচ্ছেন। বিদেশীরা আশা করেন, চীন উচ্চ-স্তরের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নেবে এবং বিশ্বের সাথে নিজের উন্নয়নের সুফল ভাগাভাগির ধারা অব্যাহত রাখবে।
‘বিশ্বব্যাপী ক্রয়’ ভোক্তা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাছাইয়ের সুযোগ বাড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বায়নের সুবিধা সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করা যাচ্ছে এবং বৈদেশিক উন্মুক্তকরণে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে চীনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ফুটে উঠেছে। উজবেকিস্তানের বিজ্ঞান একাডেমির রাষ্ট্র ও আইন গবেষণালয়ের সিনিয়র গবেষক বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী ক্রয়’ বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্য, পরিষেবা ও মূলধনের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এটি ভোক্তাদের বাছাইয়ের আরও বেশি সুযোগ দিতে পারে। আমদানি মেলা নব্যতাপ্রবর্তন পণ্য প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
আমদানি মেলায় সপ্তমবারের মতো অংশগ্রহণকারী সিরীয় কোম্পানির একজন প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আমদানি মেলায় ‘বিশ্বব্যাপী ক্রয়’ ধারণা বৈশ্বিক বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিশিষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
শাংহাইয়ে মার্কিন চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট চেং ই সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সংবাদদাতাকে বলেন, চীন মার্কিন কৃষিপণ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি-গন্তব্য। মার্কিন রপ্তানিকারকরা চীনা বাজারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।
চলতি বছর, নরওয়ে প্রথমবারের মতো আমদানি মেলায় একটি জাতীয় প্যাভিলিয়ন স্থাপন করেছে। নরওয়েজিয়ান বোতলজাত পানীয় জলের ব্র্যান্ড ভোস চায়নার ব্যবস্থাপক হুয়াং ইয়ুশেং বলেন, ২০১৮ সালে হুপেইতে ভোস-এর প্রাকৃতিক খনিজ জলের উত্পাদন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এবারের আমদানি মেলায় এই কোম্পানি নিজের ধারাবাহিক অবিরাম উন্নয়নের ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য ভাগাভাগি করেছে।
রাশিয়ান হায়ার ইউনিভার্সিটি অফ ইকোনমিক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমদানি মেলা বিভিন্ন দেশের পণ্য ও প্রযুক্তির বিনিময় বাড়াতে সহায়ক। এই মেলা বৈশ্বিক উন্নয়নে নতুন চালিকাশক্তি যোগাতে পারে।
বিশ্বের জন্য কল্যাণকর আমদানি মেলা, যা বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা ও পারস্পরিক কল্যাণের বড় মঞ্চ। নেদারল্যাণ্ডসের আন্তর্জাতিক কসমেটিক্স চেইনের একটি কোম্পানি এ বছর প্রথমবারের মতো আমদানি মেলায় অংশগ্রহণ করে। এই কোম্পানির আন্তর্জাতিক প্রধান অপারেটিং অফিসার বলেন, এই কোম্পানি চীনে আরও বড় হবে বলে প্রত্যাশা করছে। কোম্পানি সবসময় চীনা বাজারের ওপর আস্থাবান।
নিকারাগুয়ান সান মার্টিন মিট প্রোডাক্টস কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমিলিও ক্যালডেরা বলেন, আমদানি মেলা শুধুমাত্র বড় কোম্পানির জন্য দরজা খুলে দেয় না, বরং নিকারাগুয়ান ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্মও প্রদান করে।
মিসরের রাজনীতি, অর্থনীতি, হিসাব ও আইন প্রণয়ন সমিতির সদস্য ভালিদ মনে করেন, আমদানি মেলা কেবল যে আমদানিকৃত পণ্যগুলোর মহাসম্মিলনী, তা নয়; বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বড় দরজা খুলে দিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মিলন ও সহযোগিতার সেতু স্থাপন করেছে এই মেলা। আমদানি মেলা বিভিন্ন দেশের জন্য, চীন ও বৈশ্বিক বাজারে পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।