বাংলা

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজছে

CMGPublished: 2024-10-05 18:38:07
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন সুর উঠেছে এবং এই সংকট ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ইসরাইল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও, সম্প্রতি এই সংঘর্ষ তীব্র রূপ নিয়েছে। ইসরাইলি বিমান হামলা এবং স্থল আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইরান তার সামরিক উপস্থিতি দেখাতে শুরু করেছে। ইরান প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক ও কৌশলগত অবস্থানে, যা মধ্যপ্রাচ্যে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ সংঘাত শুধুমাত্র ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ইরান ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির অংশগ্রহণে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের পূর্বাভাস দিচ্ছে।

১. সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সংঘাতের প্রেক্ষাপট:

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে ইসরাইলি বিমান হামলায় হত্যা করার খবরের পরপরই লেবানন ও ইসরাইলের সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইলি বাহিনী লেবাননের অভ্যন্তরে আকাশপথে হামলা চালায় এবং স্থল বাহিনীও সক্রিয় হয়। হিজবুল্লাহ এ হামলার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরও হামলার হুমকি দেয়। এই সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় ইরান তার শক্তি প্রদর্শন করে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন টার্গেটে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। ইসরাইল-ইরান সংঘাত বহুদিনের একটি বিতর্কিত বিষয়। ইরানের সমর্থনপ্রাপ্ত হিজবুল্লাহকে বহু বছর ধরে হুমকি মনে করত ইসরায়েল। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী বাহিনী (IRGC) হিজবুল্লাহকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থায়ন করে থাকে। সম্প্রতি নাসরাল্লাহর হত্যার ঘটনাটি এই সংঘাত তীব্র রূপ নেয়। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করেছে, যা লেবাননজুড়ে বড় আকারের ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে।

২. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব

মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার এই যুদ্ধ শুধু আঞ্চলিক শক্তির লড়াই নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনসহ আন্তর্জাতিক শক্তির স্বার্থকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হয় তবে এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে, এবং এর প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তায়ও পড়বে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিনের, এবং বিশেষ করে ২০২০ সালের মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যার পর থেকে এই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সোলাইমানির হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান যে সামরিক ক্ষমতা দেখিয়েছে, তা অনেক দেশকে চিন্তিত করেছে। ২০২৩ সালে ইসরাইলের সাথে হিজবুল্লাহর সংঘাত আরও বড় আকার ধারণ করে, যা ইরানকে সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে।

৩. ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও বিশেষজ্ঞ মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে। যদি পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে এতে সৌদি আরব, ইরাক, সিরিয়া ও অন্যান্য দেশও জড়িয়ে পড়তে পারে। এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এটি বিশ্বের অন্যতম বড় সামরিক সংঘাতের রূপ নিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের পর ইসরাইলও পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এ সংঘাত যদি আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গড়ায়, তবে এটি বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ও তেল বাজারেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তেলের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হতে পারে।

৪.উপসংহার

মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং এর ফলে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। ইরান, ইসরাইল ও লেবাননের সংঘাত যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে এটি আরও বড় আকার ধারণ করবে এবং অনেক দেশকেই এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এই সংঘাতকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা প্রতিরোধ করা যায়।

- মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn