বাংলা

ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে ছয়টি ঐকমত্য: একটি বিশ্লেষণ

CMGPublished: 2024-09-14 19:07:20
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

ইউক্রেন সংকট চলমান বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ইস্যু। এ যুদ্ধ মানবিক সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই সংকট নিরসনের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, তবে এখনও স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এ প্রেক্ষাপটে ‘ছয়টি ঐকমত্যের’ বিষয়ে ১১০টিরও বেশি দেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজের সাধারণ প্রত্যাশা।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গত শুক্রবার বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে চীন ও ব্রাজিলের ছয়টি ঐকমত্য এ পর্যন্ত ১১০টিরও বেশি দেশের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে এবং যা আন্তর্জাতিক সমাজের সাধারণ প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ছয়টি ঐকমত্য সম্পর্কে মাও নিং বলেন, ‘চীন ও ব্রাজিলের প্রস্তাবিত ছয়টি ঐকমত্যের লক্ষ্য হল পরিস্থিতি প্রশমনের এই জরুরি কাজের ওপরে ফোকাস করা। ঐকমত্যটি ‘তিনটি নীতি’ মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়, অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্র ছড়িয়ে না দেওয়া, যুদ্ধ বাড়িয়ে না দেওয়া, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের বিরোধিতা করা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার বিরোধিতা করা এবং বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। শান্তি আলোচনার প্রচার এবং ইউক্রেনীয় সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাবে বলেও উল্লেখ করেন মুখপাত্র।

ছয়টি ঐকমত্যের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

১. আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা

এই ঐকমত্যের প্রথম ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে প্রতিটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এই ঐকমত্যের মাধ্যমে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি চীন ও ব্রাজিল স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে সামরিক হস্তক্ষেপ সমাধানের পথ হতে পারে না।

২. যুদ্ধবিরতি এবং সহিংসতা বন্ধের আহ্বান

চীন ও ব্রাজিল ইউক্রেন সংকটের সমাধানে যুদ্ধবিরতি ও সহিংসতা বন্ধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট, ধ্বংসযজ্ঞ এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য যুদ্ধের অবসান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঐকমত্যের মাধ্যমে সব পক্ষকে সহিংসতা বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

৩. রাজনৈতিক আলোচনা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধান

সংকটের রাজনৈতিক সমাধান কেবল সংলাপ এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। চীন ও ব্রাজিল বিশ্বাস করে যে, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন সংকটের স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান পাওয়া সম্ভব। দু’পক্ষ আন্তর্জাতিক সমাজকে এই সংলাপকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছে।

৪. মানবিক সাহায্য ও পুনর্বাসন কার্যক্রম

ইউক্রেন সংকটে বিপুল পরিমাণ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে, এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অসংখ্য জীবনহানি ঘটেছে। এই ঐকমত্য মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে মানবিক সহায়তা এবং পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি।

৫. আন্তর্জাতিক সমাজের সহযোগিতা ও সমর্থন

চীন ও ব্রাজিল মনে করে, সংকট সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যুদ্ধের অবসান এবং শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে আন্তর্জাতিক সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। এ জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

৬. নতুন শীতল যুদ্ধ এড়ানো

বর্তমান পরিস্থিতি নতুন শীতল যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। ইউক্রেন সংকট বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তাই, বৃহত্তর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অশান্তি সৃষ্টি না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই ছয়টি ঐকমত্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। ১১০টিরও বেশি দেশ এই প্রস্তাবগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা সংকট সমাধানে একটি বড় পদক্ষেপ। ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় এমন দেশগুলো এই ঐকমত্যকে সমর্থন করে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলো এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, কারণ তারা সংকটের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা চায়।

চীন ও ব্রাজিলের ছয়টি ঐকমত্য ইউক্রেন সংকটের একটি রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ দেখায়। এই ঐকমত্যগুলো কেবল ইউক্রেন সংকটের জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি কার্যকরী দৃষ্টান্ত হতে পারে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এড়িয়ে সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে এই ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরালোভাবে গ্রহণ করা উচিত।

মোহাম্মদ তৌহিদ

সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn