নতুন মানের উৎপাদন শক্তি, চীনে বিদেশী বিনিয়োগের নতুন প্রবণতার চালিকা শক্তি
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-চালিত বায়োটেক কোম্পানি ইনসিলিকো মেডিসিন, চীনের সাংহাইতে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন দলের সহায়তায়, প্রিক্লিনিক্যাল ওষুধ তৈরির সময়কাল কয়েক বছর থেকে মাত্র ১৮ মাসে নামিয়ে এনেছে।
ইনসিলিকোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অ্যালেক্স জাভোরনকভ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “নতুন ওষুধ উদ্ভাবন করার জন্য সাংহাই আমাদের প্রথম পছন্দ, কারণ এটি বায়োফার্মাসিউটিক্যাল উদ্ভাবনের কেন্দ্র। আরও কি, এখানে রয়েছে, অনেক গবেষণা সংস্থা, প্রতিভা এবং প্রাণবন্ত সম্প্রদায়।”
নিউইয়র্ক এবং হংকং সদর দফতরভিত্তিক ইনসিলিকো, ২০১৯ সালে সাংহাইতে একটি ওষুধ গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি এখন বিশ্বব্যাপী কোম্পানিটির বিভিন্ন কেন্দ্র এবং কার্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশি প্রতিভা-ঘন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
ইনসিলিকো হলো চীনে বিনিয়োগ সম্প্রসারণকারী বহু বিদেশী কোম্পানির মধ্যে একটি, যা চীনের বৃহত্তর বাজারে নিজেদের অবস্থান আরো পোক্ত করতে নতুন মানের উৎপাদন শক্তি ব্যবহার করছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যখন উদ্ভাবন অগ্রণী ভূমিকা রাখছে, তখন নতুন মানের উত্পাদন শক্তি বলতে আমরা কী বুঝবো? আসলে এর অর্থ হলো, অর্থনৈতিক উত্পাদন ও প্রবৃদ্ধির প্রথাগত পথ থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত ও উন্নত উত্পাদনশীলতা। এটি নতুন উন্নয়ন দর্শনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উচ্চ-প্রযুক্তি, উচ্চ-দক্ষতা এবং উচ্চ-মানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
২০২৪ সালের প্রথম সাত মাসে, চীনে উচ্চ-প্রযুক্তির উত্পাদনে বিদেশী বিনিয়োগের প্রকৃত ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৬৯.৫৮ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৯.৭৫ বিলিয়ন ডলার), যা দেশের মোট বিদেশী মূলধনের প্রকৃত ব্যবহারের ১২.৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ২.৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
একই সময়ে, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি শিল্প, টেকনিক সেবাশিল্প এবং কম্পিউটার ও অফিস ব্যবহার্য তৈরিতে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ যথাক্রমে ৮৭ শতাংশ, ৪১.৩ শতাংশ এবং ৩২.৪ শতাংশ বেড়েছে।
সবুজ উন্নয়ন হল উচ্চ-মানের উন্নয়নের ভিত্তি, এবং নতুন মানের উত্পাদন শক্তিগুলো অন্তর্নিহিতভাবে সবুজ উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে। অনেক বিদেশী অর্থায়নকারী সংস্থাও চীনে কার্বন নিরপেক্ষতার প্রবণতা অনুসরণ করে পরিবেশগত রূপান্তরের দায়কে স্বীকার করেছে এবং এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
ড্যানিশ শক্তি-দক্ষতা উন্নয়ন কোম্পানি ড্যানফসের থিয়ানচিন কারখানা, ১০০ ভাগ সবুজ শক্তি ব্যবহার সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং বার্ষিক ২৮ হাজার টন কার্বন নির্গমন কমানোর পরিকল্পনা করেছে। এয়ারবাসের থিয়ানচিন ক্যাম্পাস এ বছরের শুরু থেকে সবুজ বিদ্যুতের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমিয়েছে।
শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চীন ৫ হাজার ৯৫টি সবুজ কারখানা, ৩৭১টি সবুজ শিল্পপার্ক, ৬০৫টি সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এন্টারপ্রাইজ এবং প্রায় ৩৫ হাজার সবুজ পণ্য তৈরি করবে।
সিমেন্স চায়না’র প্রেসিডেন্ট এবং সিইও সিয়াও সং বলেছেন, “নতুন মানের উৎপাদন শক্তির বিকাশ বিস্তৃত বিপণনের সুযোগ এবং নতুন বৃদ্ধির পয়েন্ট প্রদান করে।” সিমেন্স উচ্চ-মানের উন্নয়ন অর্জনের জন্য ডিজিটালাইজেশন এবং কম কার্বন নির্গমন প্রবণতাকে সমন্বিত করার পথে হাটছে বলেও জানান তিনি।
চীন বিদেশী সংস্থাগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তার উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণকে আরও প্রসারিত করছে।
গত সোমবার অনুষ্ঠিত চীনের স্টেট কাউন্সিলের একটি কার্যনির্বাহী সভায় বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থাগুলোর একটি সেট- একটি নেতিবাচক তালিকা-২০২৪ সংস্করণ পর্যালোচনা এবং অনুমোদন করা হয়েছে৷
নেতিবাচক তালিকা অনুসারে, চীন টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার মতো খাতগুলোকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি উত্পাদন খাতে প্রবেশের বাধা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে বিদেশী বিনিয়োগের উপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করবে।
টেসলার ভাইস প্রেসিডেন্ট তাও লিন সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “চীনা বাজারের গতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারণ এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ আমাদের উন্নয়নের জন্য একটি বিস্তৃত স্থান প্রদান করেছে।”
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।