বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ষষ্ঠ চীন সফর
গত বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে চীনের গণ-রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হয়। এ সফরে ঢাকা-বেইজিং-ঢাকা রুটে সরাসরি বিমান উদ্বোধন করা হয়। দু'দেশের সম্পর্কের জন্য ২১টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি এবং ৭টি ঘোষণাপত্র সই করা হয়।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’নেতা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। জনাব সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, চীন ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। দুই দেশের মধ্যে হাজার বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান রয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে, দুই দেশ সর্বদা একে অপরকে সম্মান ও সমর্থন করেছে, একে অপরের প্রতি সম-আচরণ করেছে, জয়-জয় সহযোগিতা করেছে এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’ দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় ও পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার একটি মডেল স্থাপন করেছে। সি বলেন, চীন, বাংলাদেশের সাথে পুরনো প্রজন্মের নেতাদের গড়া গভীর বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে। আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগে’র উচ্চমানের যৌথ নির্মাণকে আরও গভীর করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার গভীরতা ও প্রশস্ততা প্রসারিত করতে এবং চীন-বাংলাদেশ সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরো স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদে গড়ে তুলতে ইচ্ছুক চীন।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন যে উভয়পক্ষেরই পারস্পরিক সমর্থনের সূক্ষ্ম ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত এবং পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থাকে গভীর করা উচিত। চীন বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে, তার জাতীয় অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়নের পথ অনুসরণ করতে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভূখন্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় এবং যে কোনো বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে সমর্থন করে। চীন, বাংলাদেশের সাথে উন্নয়নের ক্ষেত্রে দলীয় ও রাষ্ট্র পরিচালনা এবং উন্নয়নের নীতির বিনিময় করতে, উন্নয়ন কৌশলের সংযোগ শক্তিশালী করতে, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করতে, দুই দেশের মধ্যে শিল্প ও সরবরাহ চেইনের সংযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশকে জাতীয় উন্নয়নে সহায়তা করতে ইচ্ছুক। চীন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে, জাতিসংঘের মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে, সমস্ত মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধের প্রচার করতে এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গঠন করতে ইচ্ছুক।
তার আগের দিন মঙ্গলবার চীনের গণ-রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন বা সিপিপিসিসি্’র চেয়ারম্যান ওয়া হু নিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এদিকে, ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশদারিত্বে’ উন্নীত হতে ২১টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি এবং ৭ টি ঘোষণাপত্র সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। এর মধ্যে ২টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এসব চুক্তি-সমঝোতা এবং ঘোষণাপত্র সই হয়। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে গণ-মহাভবনে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন লি ছিয়াং এবং শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি এ সফরে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনে চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ১৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বাংলাদেশ চারটি সমঝোতা স্মারকের অধীনে পাবে ৪৯ কোটি ডলারের বিনিয়োগ। চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ইলেকট্রিক যান, সৌরবিদ্যুৎ, আর্থিক ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে।
উল্লেখ্য, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে সোমবার বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।