বাংলা

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি প্রস্তাবের ৭০তম বার্ষিকী ও সি’র ভাষণ

CMGPublished: 2024-06-28 16:35:04
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

জুন ২৮: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, আজ শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ের গণমহাভবনে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি প্রস্তাবের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ৭০ বছর আগে, চীন সর্বপ্রথম "সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ডের অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক আগ্রাসন না-করা, একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করা, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা, এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান" শীর্ষক পাঁচ নীতি প্রস্তাব করেছিল। বিগত ৭০ বছরে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি বিশ্বের সকল দেশের কাছে ব্যাপকভাবে গৃহীত ও স্বীকৃত হয়েছে। এই নীতিমালা এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে এবং মানুষের উন্নতির ক্ষেত্রে অতুলনীয় ঐতিহাসিক অবদান রেখে চলেছে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক আইনের শাসনের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাপকাঠি স্থাপন করেছে; সম্পর্ক স্থাপন ও বিকাশের জন্য বিভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থার দেশগুলোর জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্রিত করেছে ও নিজেদেরকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে; এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সংস্কার ও বিকাশের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে।

চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির সক্রিয় প্রচারকারী ও কঠোর অনুশীলনকারী। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তির পক্ষের শক্তি, বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানকারী, এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসেবে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূলনীতি এক সুতায় গাঁথা। উভয় ধারণার মূল রয়েছে প্রতিবেশীদের প্রতি সদয় আচরণ, বিশ্বস্ত থাকা, এবং সকল জাতির প্রতি সৌহার্দ্য দেখানো। এগুলো চীনা সংস্কৃতিরও মূল বিষয়। শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলতে চীন বরাবরই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ার ধারণা হল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির সর্বোত্তম উত্তরাধিকার।

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, এখন আগের চেয়ে আরও বেশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির প্রচার ও প্রসার দরকার। মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ তোলার জন্যও অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বস্তুত, আমাদেরকে অবশ্যই সার্বভৌম সমতার নীতি মেনে চলতে হবে; পারস্পরিক শ্রদ্ধার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করতে হবে; শান্তি ও নিরাপত্তার চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে; একসাথে সমৃদ্ধ হতে শক্তি সংগ্রহ করতে হবে; ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের ধারণাকে সমুন্নত রাখতে হবে; এবং একটি উন্মুক্ত ও সহনশীল মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে।

চীনের বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগের লক্ষ্য হল সকল দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রচার করা এবং বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শিক্ষার প্রচার করা। এই বিশ্ব সকল দেশের অভিন্ন উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পারে। একে অপরকে সমান হিসাবে বিবেচনা করার সময় এবং একে অপরের কাছ থেকে শেখার সময়, বিভিন্ন সভ্যতা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও একে অপরের পরিপূরক হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিগত ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা বারবার প্রমাণ করেছে যে, ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং যোগাযোগ ও বোঝাপড়া বাড়ানো হচ্ছে সকল দেশের জন্য যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ভবিষ্যত তৈরি করার কার্যকর উপায়। সারা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, "গ্লোবাল সাউথ" গতি অর্জন করছে এবং মানুষের অগ্রগতি প্রচারে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

"গ্লোবাল সাউথ" সহযোগিতাকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করার জন্য চীন একটি "গ্লোবাল সাউথ" রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবে। তা ছাড়া, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে "গ্লোবাল সাউথ" দেশগুলোর শিক্ষার্থীদেরকে ১০০০টি "শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি বৃত্তি" দেওয়া হবে এবং এ সব দেশের এক লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, চীন আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা তহবিল প্রতিষ্ঠার কাজ অব্যাহত রাখবে এবং "গ্লোবাল সাউথ"-এর কৃষি উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য ১ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গড়ে তুলবে। চীন "গ্লোবাল সাউথ" দেশগুলোর সাথে অবাধ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। পাশাপাশি, চীন অব্যাহতভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক সূচিত বাণিজ্য উদ্যোগ সহায়তা প্রকল্পকে সমর্থন করবে এবং "চীনা প্রকল্পগুলিতে" অর্থায়ন করবে। "গ্লোবাল সাউথ" দেশগুলোকে "ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সবুজ উন্নয়ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক” উদ্যোগে যোগদান করতে স্বাগত জানায় চীন। এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে চীনের ক্রমবর্ধমান আমদানি ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি দীর্ঘকাল ধরে চীনা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে এবং চীনের শান্তিপূর্ণ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছে। বর্তমানে, চীন একটি শক্তিশালী দেশ গড়ার মহান উদ্দেশ্যকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের মাধ্যমে, জাতিকে পুনরুজ্জীবিত করছে। নতুন যাত্রায়, চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, মানবজাতির অভিন্ন কল্যানের সমাজ গড়ে তোলার জন্য অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করবে, এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ও সাধারণ উন্নয়নের প্রচারে নতুন ও বৃহত্তর অবদান রাখবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn