বাংলা

চীন-রাশিয়া এক্সপো শুধু বাণিজ্য-বিনিয়োগই নয়, বন্ধুত্বও বাড়ায়

CMGPublished: 2024-05-19 18:16:26
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

উত্তর চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারবিনে চলছে ৮ম চীন-রাশিয়া এক্সপো। ১৬ মে শুরু হওয়া এক্সপোটি চলবে ২১ মে পর্যন্ত। চীন-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং চীনে ১৬ ও ১৭ মে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাষ্ট্রীয় সফরের কারণে এবারের চীন-রাশিয়া এক্সপো পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

হারবিন এক্সপোতে ৫ হাজারের বেশি বিদেশী ক্রেতা নিবন্ধন করেছেন এবং ৪৪টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিচ্ছেন। এক্সপোর প্রদর্শনী এলাকা ৩ লাখ ৮৮ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত। ১০টি সেক্টর থেকে ২০টিরও বেশি প্রধান বিভাগে ৫ হাজারটিরও বেশি পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে এক্সপোতে।

চীনে ব্যবসা করার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে ইউনাইটেড কনফেকশনারি (ইউনিকনফ) চায়না সাবসিডিয়ারি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ইভগেনি বাজভের। তিনি জানান, এবার তারা শুধু চকলেট নয়, কফি এবং রাশিয়ান ডেজার্ট নিয়ে এসেছেন এক্সপোতে। তাদের ক্যাফেটি স্থায়ী প্রদর্শনী এলাকায় অবস্থিত।

চীনা ভাষায় পারদর্শী বাজভ বলেন, “এক্সপোটি চীনে ক্যাফে ব্যবসা চালু করার একটি ভালো সুযোগ। আমরা এই বছর হারবিনে ১০টি অ্যালিয়ঙ্কা ক্যাফে খোলার পরিকল্পনা করছি। শহরটির চীন-রাশিয়া বিনিময়ের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এবং এখানকার মানুষ ঐতিহ্যবাহী রাশিয়ান খাবার খুব পছন্দ করেন।”

তিনি বলেন, ইউনিকনফ রাশিয়ান মিষ্টান্নের বাজারে শীর্ষস্থানীয়। কোম্পানিটি চকলেট ব্র্যান্ড অ্যালিয়ঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের মালিক।

চীন বর্তমানে অ্যালিয়ঙ্কা চকোলেটের জন্য পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। এখনও এ বাজার বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷ সংস্থাটি চীনা গ্রাহকদের পছন্দের কথা ভেবে বেশ কয়েকটি নতুন পণ্য তৈরি করেছে। যেমন কম চিনি এবং উচ্চ কোকো উপাদানযুক্ত চকলেট।

২০১৪ সালে হারবিনে প্রথম এই প্রদর্শনী শুরু হয়। এ বছর এক্সপোটি চীন-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকীর সাথে মিলে গেছে। আয়োজকদের মতে, এ এক্সপোতে রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত রাশিয়ান উদ্যোগের একটি উল্লেখযোগ্য লাইনআপ রয়েছে।

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সের সহযোগী অধ্যাপক লিউ চুনশেং বলেন, “এক্সপোটি শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উদযাপনই নয়, বরং সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে এবং নতুন সুযোগ সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মও এটি।”

রাশিয়ান কোম্পানি বেলিওভ প্যাস্টিলা ম্যানুফ্যাকচারের চীনা কার্যালয়ের প্রধান পাভেল সেমার্না এবারই প্রথম এক্সপোতে এসেছেন। তার কোম্পানি আপেল কেকের স্ন্যাক নিয়ে এসেছে, যা মূলত তাজা ফল দিয়ে তৈরি করা হয়।

সেমার্না বলেন, “চীনা বাজার গতিশীল এবং উন্মুক্ত, এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের সম্ভাবনাও বিশাল।”

তার কোম্পানি চীনের বিভিন্ন বাণিজ্য প্রচার ইভেন্ট, যেমন চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলাতে অংশগ্রহণ করে ব্যবসার সুযোগ নিয়েছে। প্রচারের জন্য এটি থাওবাওয়ের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছে। বর্তমানে, কোম্পানির পণ্যগুলো সাংহাই, ছেংতু এবং কুয়াংচৌস ২০টিরও বেশি চীনা শহরে সুপারমার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে।

কুনপেং বায়ো-টেকনোলজি কোং লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছাং দেকুন, কোম্পানির সয়াবিন-গন্ধযুক্ত আইসক্রিম দিয়ে এক্সপো দর্শকদের মন জয় করেছেন, যা এরই মধ্যে চীনে একটি ‘ইন্টারনেট সেলিব্রিটি’ পণ্য হয়ে উঠেছে৷

তিনি দর্শকদের জানান যে, তারা সয়া-ভিত্তিক খাবারের বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াগুলোর সাথে আধুনিক জৈবপ্রযুক্তিকে একত্রিত করেছেন।

হেইলংচিয়াং চিয়াল্যান্ড রাশিয়ান আর্ট গ্যালারির পরিচালক, লু কুইলান, এক্সপোটির সঙ্গে সমধিক পরিচিত। তিনি বহু বছর ধরে চীনে রাশিয়ান চিত্রকর্ম প্রদর্শন এবং বিক্রি করতে তরুণ রাশিয়ান শিল্পীদের সাথে সহযোগিতা করছেন।

তিনি বলেন যে, “অয়েল পেইন্টিং সংগ্রহের জন্য একটি নির্দিষ্ট নান্দনিক দক্ষতার প্রয়োজন। আমি এক্সপোতে সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে পরিচিত হওয়ার একটি ব্যবসায়িক সুযোগ দেখেছি।”

রাশিয়ান ট্যুর গাইড পোলিনা মিতিনা বলেন, অনেক রাশিয়ান রপ্তানিকারক তার চীনা ভাষার দক্ষতার কারণে এক্সপোতে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য তাকে নিয়োগ করেন।

পোলিনা বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি সেশনের জন্য এক্সপোতে অংশ নিয়েছেন, এবং অনুভব করেছেন যে, এক্সপোটি শুধু ব্যবসার সুযোগই দেয় না বরং দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

মাহমুদ হাশিম

সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn