বাংলা

প্রেসিডেন্ট পুতিনের চীন সফর শেষ

CMGPublished: 2024-05-17 18:55:17
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ১৬ ও ১৭ মে চীন সফর করেছেন। নতুন মেয়াদে কার্যভার গ্রহণের পর এটাই প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রথম বিদেশ সফর। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার সকালে বেইজিং পৌঁছান রুশ প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার তাঁরা একাধিক বৈঠক করেন, সংবাদ সম্মেলন করেন। সন্ধ্যায় সি'র বাসভবন চৌং নানহাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ছোট বৈঠকও হয়। প্রেসিডেন্ট পুতিনের চীন সফরের সংক্ষিপসার থাকছে আজকের অনুষ্ঠানে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন মেয়াদে কার্যভার গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে চীনে আসেন। সফরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার গণ-মহাভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠক করেন। বৈঠকে সি চিন পিং প্রেসিডেন্ট পুতিনকে চীন সফরে স্বাগত জানান। সম্প্রতি রাশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পঞ্চম মেয়াদ শুরু করায় পুতিনকে এবং রুশ জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান সি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার জাতীয় উন্নয়ন ও নির্মাণ অবশ্যই নতুন বিরাট সাফল্য অর্জন করবে। চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন চীন-রাশিয়া সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এ সম্পর্ক বড় দেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য পারস্পরিক সম্মান, পারস্পরিক আন্তরিক আচরণ, সম্প্রীতিময় সহাবস্থান এবং পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা ও জয়-জয় অর্জনের উদাহরণ তৈরি করেছে।

বৈঠক শেষে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে নতুন যুগে সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারি সম্পর্ক সম্প্রসারণে যৌথ বিবৃতি’ প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সি চিন পিং বলেন, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক যে এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তার কারণ হল ‘পাঁচটি অধ্যবসায়’, যা উভয়পক্ষ সর্বদা মেনে চলে। প্রথমত, দুই দেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধার নীতি মেনে চলে, সবসময় পরস্পরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন করে। উভয়পক্ষই ‘জোটনিরপেক্ষতা, সংঘাত-বিরোধী, এবং তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধ নয় ‘এমন নীতিকে অব্যাহত রাখবে, ক্রমাগত পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাসকে গভীরতর করবে, একে অপরের বাছাই করা উন্নয়ন পথকে সম্মান করবে এবং তাদের নিজ নিজ উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করবে।

দ্বিতীয়ত, চালিকাশক্তি হিসাবে জয়-জয় সহযোগিতার নীতি মেনে চলে দু’দেশ।

তৃতীয়ত, চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তিতে যৌথভাবে চীন-রাশিয়া বন্ধুত্বের মশাল বহন করা। চতুর্থত, দু’দেশের অবশ্যই কৌশলগত সহযোগিতা মেনে চলবে এবং বিশ্বব্যাপী শাসনকে সঠিক দিকে নিয়ে যেতে হবে। উভয়পক্ষই দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃংখলাকে রক্ষা করবে। পঞ্চমত, দু’দেশ ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচারের নীতি মেনে চলবে এবং উত্তপ্ত সমস্যাগুলোর রাজনৈতিক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, রাশিয়া, চীনকে একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং নির্ভরযোগ্য সহযোগিতামূলক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে এবং চীনের সাথে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে ইচ্ছুক, সফলভাবে ‘রাশিয়া-চীন সংস্কৃতি বর্ষ’ আয়োজন করতে এবং মানুষে মানুষে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরও গভীর করতে আগ্রহী। রাশিয়া এবং চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখে এবং আরও গণতান্ত্রিক বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌথভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দু’দেশ ব্রিকস, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং অন্যান্য কাঠামোর পাশাপাশি যোগাযোগ জোরদার করতে ইচ্ছুক।

ওই সন্ধ্যায় চৌং নানহাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ছোট আকারের বৈঠক করেছেন। সি চিনপিং বলেন, বর্তমানে বিশ্ব এক শতাব্দীতে অদেখা গভীর পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করে, বিশ্ব প্রশাসনকে সঠিক দিকে পরিচালিত করতে, যৌথভাবে আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করতে, বিশ্ব শান্তি ও অভিন্ন উন্নয়ন বেগবান করতে ইচ্ছুক। পুতিন বলেন, চীনের উন্নয়ন অপ্রতিরোধ্য। রাশিয়া, চীন এবং দক্ষিণের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করে, আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার বাড়িয়ে আরো সম ও বহুমেরুর পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ ছাড়া দু‌ই রাষ্ট্রপ্রধান ইউক্রেন সংকট নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন।

পুতিন, সি’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে দু’পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য কার্যকর করে, রুশ-চীন সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের গভীর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইচ্ছুক। এদিন বেইজিংয়ের জাতীয় থিয়েটারে একযোগে ‘চীন-রুশ সাংস্কৃতিক বর্ষে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান’ তথা ‘ চীন-রুশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের বিশেষ কনসার্টে’ যোগ দেন নেতারা।

চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে। তা হলো- নতুন ঐতিহাসিক সূচনায় দাঁড়িয়ে, চীন ও রাশিয়া সর্বদা তাদের মূল আকাঙ্ক্ষা মেনে চলবে এবং তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য একসাথে কাজ করবে, দুই দেশের আরো কল্যাণ করবে এবং বিশ্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় যথাযথ অবদান রাখবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn