বাংলা

‘মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে চীন-ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি’ প্রসঙ্গ

CMGPublished: 2024-05-10 14:20:09
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফ্রান্সে সফর যান স্থানীয় সময় ৫ মে। এদিন দু’দেশ ‘মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে চীন-ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি’ প্রকাশ করে। উভয় পক্ষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যু, এবং লোহিত সাগর সংকটের বিষয়সহ জরুরি বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছায়। গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রকাশিত এই বিবৃতিতে প্রচুর তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। এতে মানব বিবেক এবং ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবি প্রতিফলিত হয়েছে। বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রধান দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে চীন ও ফ্রান্স নিজ নিজ দায়িত্ব এর মাধ্যমে পালন করেছে। এটি মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা যোগাবে বলা আশা করা যায়।

ফিলিস্তিনের সমস্যা মধ্যপ্রাচ্যের মূল ইস্যু। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল নতুন দফা সংঘাত চলছে ২০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে। এতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সময় ৭ মে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। একই দিনে, দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েল সামরিক হামলা চালাতে শুরু করে এবং রাফাহ ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনের অংশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। অনেক দেশ ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা করেছে। এটি একটি বড় আকারের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করছে দেশগুলো।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে, চীন ও ফ্রান্স মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ব্যাপকভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। এবার ফ্রান্স সফরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যা নিয়ে কথা বলেন সি চিন পিং। তিনি বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও চলছে। এটি মানবিক বিবেকের পরীক্ষা হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাপক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা এবং মানবিক ত্রাণ নিশ্চিত করা। ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের মৌলিক উপায় হল ‘দুই-রাষ্ট্র তত্ত্ব’ বাস্তবায়ন করা। বহুপাক্ষিকতা, জাতিসংঘের সনদের উদ্দেশ্য ও আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা করতে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক ফ্রান্স।

চীন-ফ্রান্স মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসম্পর্কিত যৌথ বিবৃতিতে যেকোনো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের নিন্দা করা হয়। ইসরায়েলের রাফাহ আক্রমণেরও বিরোধিতা করা হয় এতে। যথাশীঘ্র সম্ভব টেকসই যুদ্ধবিরতি, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত ও ‘দুই রাষ্ট্র তত্ত্ব’ বাস্তবায়নের আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে। চীন ও ফ্রান্স ন্যায্য অবস্থানে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মতৈক্যে পোঁছেছে। এটি আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা বাড়াবে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে ও দু’দেশের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতের জন্য সহায়ক প্রমাণিত হবে।

এ ছাড়াও, চীন ও ফ্রান্সের নেতারা আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদ্ধতিতে ইরানের পরমাণু ইস্যু সমাধানের কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এতে। এসব ইস্যু মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।

চীন ও ফ্রান্সের নেতাদের বৈঠকের একই দিন আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি ইরান সফর করেন। তিনি ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণিক প্রযুক্তি সম্মেলনে উপস্থিত হন এবং পরমাণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়াও, চীন ও ফ্রান্সের নেতারা ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক গেমসের সময় সবধরনের যুদ্ধে বিরতির আহ্বান জানান। এটি সংলাপ ও সমঝোতার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

বর্তমান বিশ্ব অশান্ত। পরিস্থিতি যতই উত্তাল হবে, ততই চীন ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মূল উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং বৃহত্তর দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উভয় দেশের ঐকমত্য এবং তারা এবার যে প্রজ্ঞা ও সাহসিকতা দেখিয়েছে, তা বিশ্ববাসীকে আশা যুগিয়েছে। আগামী ৬০ বছরে দু’দেশ অবশ্যই যৌথভাবে একটি বিভ্রান্ত বিশ্বে আশা জাগিয়ে তোলার জন্য কাজ করবে এবং মানুষের অগ্রগতির দিকটি অন্বেষণ করবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn