‘সবকিছুই ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে’: চীনের অ্যান্টার্কটিক অভিযান দলের পর্যবেক্ষণ
এপ্রিল ৩: চলতি বছর চীনের মেরু অভিযান শুরুর ৪০তম বার্ষিকী। অভিযানের সময় বৈজ্ঞানিক গবেষণার সরঞ্জাম ও আবহাওয়া সংক্রান্ত সহায়তা থেকে শুরু করে খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান এবং পরিবহন পর্যন্ত, প্রতিটি খুঁটিনাটি বিস্তারিত তথ্য থেকে চীনের ৪০তম অ্যান্টার্কটিক অভিযানের সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের চারপাশের অনেক পরিবর্তন অনুভব করেছেন। তারা চীনের মেরু উদ্যোগগুলোর দুর্বল অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছেন।
৩০ বছরে অ্যান্টার্কটিকায় ছয়বার পরিদর্শনে যাওয়া চীনের ওশান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শি চিউসিন অবশেষে ‘সুই লোং-২’ নামে চীনের পোলার রিসার্চ আইসব্রেকারে চড়ার ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ব্যবস্থা অত্যন্ত সমন্বিত এবং উন্নত বৈজ্ঞানিক গবেষণা যন্ত্র এবং সরঞ্জামের কয়েক ডজন সেটের সাথে সজ্জিত; প্রায় ৬০০ বর্গমিটারের পরীক্ষাগার এলাকায় একটি কেন্দ্রীভূত বিন্যাস এবং শ্রমের স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে; ‘সুই লোং-২’ মূলত সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা, ভূতাত্ত্বিক গবেষণা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত সমস্ত সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। জাহাজে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সুবিধা পরিদর্শন করার সময় শি চিউসিন আবেগের সঙ্গে বলেন, ‘আজ যা আছে, তা আগের চেয়ে থেকে আলাদা।’
১৯৯৪ সালে ‘সুই লোং-২’ অ্যান্টার্কটিকায় তার প্রথম সমুদ্রযাত্রা করেছিল। শি চিউসিন ওই জাহাজে করে তার প্রথম মেরু অভিযানের যাত্রা শুরু করেন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তখন জাহাজে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কিত সরঞ্জাম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিলো।’
চীনের মেরু অভিযান দেরিতে শুরু হলেও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার গতি দৃঢ় এবং দ্রুত হয়েছে। দফায় দফায় সুই লোংয়ের সংস্কার হয়েছে, পরীক্ষাগার স্থাপন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা সরঞ্জাম আপডেট করা হয়েছে। তারপর চীনের স্ব-নির্মিত মেরু বৈজ্ঞানিক গবেষণা আইসব্রেকার ‘সুই লোং-২’ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সেবা দিয়েছে এবং মেরু বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে উন্নীত করেছে।
মেরু বৈজ্ঞানিক অভিযান সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সমর্থন ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতির কারণে বর্তমানে চীনের ভৌত সমুদ্র গবেষণা ফলাফল অর্জন অব্যাহত রেখেছে এবং বিশ্বের প্রথম সারিতে প্রবেশ করেছে।
মেরু অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার সময় আবহাওয়া পূর্বাভাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। ন্যাশনাল মেরিন এনভায়রনমেন্ট ফোরকাস্টিং সেন্টারের লি চিংশি এবং চাং কোং হাউ জাহাজে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, নেভিগেশনের সময় সামুদ্রিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং রুট সুপারিশের মতো কাজের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রথমে এই কাজ করতে ৩০ জনের বেশি লোকের প্রয়োজন ছিল।
১৯৮৪ সালে চীন প্রথম অভিযান দল অ্যান্টার্কটিকায় পাঠায়। ‘সিয়াং ইয়াং হোং-১০’ নামে বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজের আবহাওয়া বিভাগ একটি পর্যবেক্ষণ গ্রুপ, যোগাযোগ গ্রুপ, স্যাটেলাইট গ্রহণকারী গ্রুপ, রাডার গ্রুপ, ম্যাপিং গ্রুপ এবং পূর্বাভাস গ্রুপ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে ৩০ জনেরও বেশি কর্মী ছিলেন। সেই সময়ে এক ঘণ্টার জন্য আবহাওয়ার মানচিত্র পাওয়ার জন্য যোগাযোগ, ম্যানুয়াল ম্যাপ ফিলিং এবং ম্যানুয়াল অঙ্কন বিশ্লেষণসহ একাধিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন ছিল। এ জন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে একটানা কাজ করতেই হবে।
এখন ৪০ বছর পার হয়েছে। চীনের মেরু আবহাওয়ার পূর্বাভাস শূণ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠছে, একক রুটের গ্যারান্টি থেকে বায়ুমণ্ডল, সমুদ্রের বরফ এবং মহাসাগরের পূর্বাভাস পরিষেবার শক্তিশালী ক্ষমতা অর্জন করেছে চীন।
মেরু অভিযানের সদস্যরা খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান এবং পরিবহনের পরিবর্তন সম্ভবত সবচেয়ে সরাসরি অনুভব করতে পারেন। ‘সুই লোং-২’য়ের প্রধান প্রকৌশলী থাং চিয়েনকুও ২০ বারের বেশি উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু পরিদর্শন করেছেন। তার অনুভূতি খুব স্পষ্ট: যথেষ্ট ও উপযুক্ত পোশাক এবং সরঞ্জাম, পানীয় জল আর সীমিত নয়, এবং গরম স্নান দিনে ২৪ ঘন্টা নেওয়া যেতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিবারের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখা যায়, এবং অনবোর্ড অডিও-ভিজ্যুয়াল বিনোদন সিস্টেমে সিনেমা এবং টিভি সিরিজ রয়েছে যা সবাই শেয়ার করতে পারে...
লিলি/হাশিম