বাংলা

সিএমজি সম্পাদকীয়: কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরুর পর নাউরুর প্রেসিডেন্টের প্রথম চীন সফর কী বার্তা দিয়েছে

CMGPublished: 2024-03-27 13:30:06
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

একটি হচ্ছে বিশ্বের বড় উন্নয়নশীল দেশ, আরেকটি হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছোট উন্নয়নশীল দ্বীপদেশ। এ দু’টি দেশ হলো চীন ও নাউরু। দেশ দু’টির মৈত্রী ২০২৪ সালের বসন্তকালে জোরদার হয়েছে।

গত ২৪ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত নাউরুর প্রেসিডেন্ট ডেভিড রানিবোক আদেয়াং চীন সফর করেন। এটি গত জানুয়ারিতে চীন ও নাউরুর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার পর, দেশটির প্রেসিডেন্টের প্রথম চীন সফর। গত ২৫ মার্চ বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নাউরুর প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, মৈত্রী কোন নির্দিষ্ট আদেশের সাথে জড়িত নয়, একবার শুরু করলে তার উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকে। সহযোগিতার ক্ষেত্র বড় বা ছোট হোক না কেন, আন্তরিকতা থাকলে তা ফলপ্রসূ হবে।

প্রেসিডেন্ট আদেয়াং বলেন, ছোট-বড় যাই হোক চীন সবসময় সব দেশকে সমান চোখে দেখে, নাউরু এর উচ্চ প্রশংসা করে। একচীন নীতিতে অবিচল থাকতে এবং অব্যাহতভাবে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা গভীরতর করতে ইচ্ছুক নাউরু।

চীন সবসময় মনে করে, বড় বা ছোট, প্রবল বা দুর্বল এবং দরিদ্র বা ধনী, যাই হোক না কেন, সকল দেশকে সমান চোখে দেখা দরকার। নাউরুর লোকসংখ্যা মাত্র ১০ হাজার বেশি? ছোট এই দেশটির প্রতি সম্মান ও শিষ্টাচার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে চীন সবার সঙ্গে সমান আচরণ করার স্পষ্ট ‘চীনা কূটনৈতিক বৈশিষ্ট্য’ তুলে ধরেছে। প্রেসিডেন্ট সি বলেন ‘দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের অনেক পুরানো বন্ধু রয়েছে, এখন আপনাদের নতুন বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত’।

এ সম্পর্কে সামোয়ার একজন সংবাদদাতা বলেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো একটি বড় পরিবার। শুধু নাউরু নয়, চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করলে গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল লাভবান হবে।’

গত জানুয়ারিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু থেকে মার্চে দেশটির প্রেসিডেন্টের চীন সফর পর্যন্ত, একচীন নীতি হচ্ছে চীন ও নাউরুর সম্পর্ক উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর। প্রেসিডেন্ট আদেয়াংয়ের চীন সফরকালে দু’পক্ষ পুনরায় এই নীতি সুনিশ্চিত করেছে। তিনি চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরুকে কেবল ‘ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়ানো’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তা নয়; বরং এটিকে ‘নাউরু ও চীনের সম্পর্কের উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। এ থেকে পুনরায় স্পষ্ট যে, ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাবে যে একচীন নীতি চিহ্নিত করা হয়েছে, তা ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বের মতৈক্যে পরিণত হয়েছে।

চীন ও নাউরু উভয়েই উন্নয়নশীল দেশ, উভয়েরই দেশের উন্নয়নের দায়িত্ব রয়েছে। নাউরুর অর্থনৈতিক কাঠামো তুলনামূলকভাবে একক, এটি সম্পদের রপ্তানি ও পর্যটন শিল্পের ওপর বেশি নির্ভর করে। তবে চীনে সুসম্পূর্ণ শিল্প চেইন রয়েছে। তাই অবকাঠামো নির্মাণ এবং অর্থ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে নাউরুর সঙ্গে পরিপূরক সুবিধা বাস্তবায়ন করবে চীন।

চীনা পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও পুনর্গঠন কাজের মধ্য দিয়ে নাউরুর আইভো বন্দর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হয়েছে। বন্দরটির এই আধুনিকায়নের মাধ্যমে নাউরুর মালবহন ক্ষমতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে, যা স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বয়ে এনেছে। ২৭ বছর বয়সী নাউরুর এক তরুণ এই বন্দরের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন ‘আমাদের এই বন্দরের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে সাহায্য দিতে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই’।

প্রেসিডেন্ট আদেয়াংয়ের চীন সফরকালে নাউরু আবারও চীনের সঙ্গে যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নির্মাণকাজ সংক্রান্ত সহযোগিতামূলক দলিলপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রস্তাব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বহু দেশের অর্থনৈতিক মান এবং জনসাধারণের কল্যাণ বাড়িয়েছে।

বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর চীন ও নাউরুকে সংযুক্ত করেছে। দু’দেশই ‘গ্লোবাল সাউথে’র সদস্য। প্রেসিডেন্ট আদেয়াংয়ের চীন সফরের ইতিবাচক কার্যকারিতা এতদঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়ন মজবুত করবে, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করবে ও এর ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn