বাংলা

কীভাবে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ উন্নয়ন বজায় রাখতে পারে? সিএমজি সম্পাদকীয়

CMGPublished: 2024-03-22 17:15:01
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মার্চ ২২: “জায়ান্ট পান্ডা থেকে শুরু করে শুল্ক পর্যন্ত, সকল বিষয় চীনা ও অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে।” চীন-অস্ট্রেলিয়া কূটনৈতিক ও কৌশলগত সংলাপের সপ্তম রাউন্ডের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এমন তথ্য জানিয়েছে। এটি এক দিক থেকে প্রমাণ করে যে, চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের উন্নতি ও বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ওয়াং ই ১৭ থেকে ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। এটি বিশ্বাস করা হচ্ছে যে, এই সফর চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের ‘উষ্ণতা’কে আরও বাড়াবে।

এই বছর চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার ১০তম বার্ষিকী। বিগত ১০ বছরে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্থান-পতন ঘটেছে। এর মূল কারণ হলো অস্ট্রেলিয়ার আগের সরকার চীনকে দমিয়ে রাখার জন্য অন্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসাবে কাজ করেছিল এবং চীনের ব্যাপারে ভুল নীতি গ্রহণ করেছিল, যার কারণে ২০১৮ সাল থেকে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০২২ সালের মে মাসে, অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টি সরকার গঠন করার পর তার চীন নীতিকে পুনর্বিন্যাস করে এবং চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক আবার উন্নতির দিকে চলতে শুরু করে। ২০২২ সালের নভেম্বরে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আবানিজির সঙ্গে দেখা করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছান। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, আবানিজি চীন সফর করেন। সাত বছরের মধ্যে সেটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম চীন সফর।

অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওয়াং ই’র অস্ট্রেলিয়া সফর বছরের পর বছর ধরে চলা অচলাবস্থার পর দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতার সর্বশেষ লক্ষণ। অস্ট্রেলিয়া সফরে দুই পক্ষ অনেক বৈঠক ও আলোচনা করেছে। চীন গত ১০ বছরের সম্পর্কের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেছে এবং উল্লেখ করেছে, এখন চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক সঠিক পথে ফিরে এসেছে, তাদের কোনও দ্বিধা না করে কিংবা পিছনে না ফিরে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত। অস্ট্রেলিয়ান পক্ষ বলেছে, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের উচিত উভয় পক্ষের অভীন্ন স্বার্থ যতটা সম্ভব খুঁজে বের করা।

বিশ্লেষকরা ‘সিএমজি সম্পাদকীয়’র দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক যদি পিছিয়ে যেতে না চায়, তবে তাদের তিনটি দিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

প্রথমত, আমাদের একে অপরকে সম্মান করতে হবে। এই সফরে, চীন তাইওয়ান, হংকং, সিনচিয়াং, তিব্বত ও দক্ষিণ চীন সাগরের মতো ইস্যুতে তার নীতিগত অবস্থানগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী আবানিজি জোর দিয়ে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া সবসময় এক-চীন নীতি মেনে চলে, যা অস্ট্রেলিয়ার দুই ক্ষমতাসীন দলের ঐকমত্য এবং তারা তা মেনে চলতে থাকবে। এছাড়া, চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের বিকাশও স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে। অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র, চীনের অংশীদার এবং একটি সার্বভৌম দেশ। চীন জোর দেয় যে, চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য তৃতীয় পক্ষ নয় এবং তৃতীয় পক্ষের দ্বারা এটি প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।

চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের উন্নয়নে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা হলো সবচেয়ে সক্রিয় চালিকাশক্তি। চীন টানা ১৫ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। চীন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং বৃহত্তম আমদানি উত্স। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির ফলে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্য আরও মসৃণ হয়েছে।

বর্তমানে, চীন ব্যাপকভাবে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য আরও সুযোগ প্রদান করবে। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, চীনে অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃত বিনিয়োগ ১৮৬ দশমিক ১শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চীনের ভবিষ্যতের উন্নয়নের প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আস্থার প্রতিফলন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং চীনা পক্ষের সাথে দেখা করার সময় বলেছিলেন, "আমি অস্ট্রেলিয়া-চীন সম্পর্কের সম্ভাবনার ব্যাপারে পুরোপুরি আস্থাশীল।”

চীন ও অস্ট্রেলিয়া উভয়ই এশিয়া-প্যাসিফিকের গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং তাদের কোনো ঐতিহাসিক অভিযোগ বা স্বার্থের মৌলিক দ্বন্দ্ব নেই। এখন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনঃসংগঠিত করা এবং এগিয়ে যাওয়া শুরু করা দরকার। এটি দুই দেশের জনগণের অভিন্ন স্বার্থ এবং আঞ্চলিক দেশগুলির অভিন্ন প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn