বাংলা

বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি থাকবে চীন

CMGPublished: 2024-03-03 18:54:35
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং অটল সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশের প্রভূত উন্নয়ন করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে চীন একটি উচ্চমানের উন্নয়ন ধারারও সূচনা করেছে। এ সব কারণে দেশটি বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হয়ে থাকার পাশাপাশি, বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে থাকবে। কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা এবং জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ, সকলেই এমনটা মনে করছেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন যে, চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি কিছুটা ধীর হলেও, এর ভোগ-বাজারসহ বিশাল বাজারের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং দেশটি এখনও প্রচুর ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। চীন সবুজ উন্নয়ন এবং প্রাণ-বিজ্ঞানের মতো উচ্চপর্যায়ের শিল্পে ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক এবং স্থানীয় উভয় উদ্যোগের জন্য আরও ব্যবসার সুযোগ নিয়ে আসবে।

তাদের মন্তব্যগুলো চীনকে নিয়ে কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল ধারনার সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে। ওই সব গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বা ভাষ্যে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এর বিকাশের আর কোনও সুযোগ নেই।

গত বৃহস্পতিবার চায়না ডেইলি আয়োজিত ‘সিইও: গ্রোয়িং উইথ চায়না’ শীর্ষক ফোরামে চেদরাস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও রানী জারকাস বলেন, ‘আপনি উৎপাদন বলুন, নির্মাণ খাতের কথা বলুন কিংবা দেশটির মানুষের জ্ঞান এবং শ্রমশক্তির কথা বলুন, আমারা মনে করি, কেউ চীনকে স্থানচ্যুত করতে পারবে না।’

চীন সরকার অনেক আগে অবকাঠামোতে বিনিয়োগে একটি আশ্চর্যজনক কাজ করেছিল এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন এটি থেকে সুফল ঘরে তুলছে দেশটি।

একটি উদ্ভাবন-চালিত মডেলের মাধ্যমে চীনের অর্থনৈতিক উত্তরণে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সুইস আন্তর্জাতিক আর্থিক গোষ্ঠী গত বছর বেইজিংয়ে একটি সদর দফতর স্থাপন করে এবং চীনের প্রাণ-বিজ্ঞান এবং কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য ১ বিলিয়ন ইউয়ান (১৪০ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের দুটি প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড চালু করে।

ভিওলিয়া, চায়নার সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুয়াং শিয়াওচুন বলেন, ‘ফরাসি পরিবেশগত সমাধান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি চীনে তাদের উপস্থিতি বাড়াবে। লিয়াওনিং প্রদেশের তালিয়ানে একটি উন্নয়ন অঞ্চলের সাথে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি স্বাক্ষর চীনা বাজারের প্রতি কোম্পানিটির আস্থারই প্রতিফলন।’

চীন এখনও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং এখনও বিশ্বের কারখানা, এ কথা উল্লেখ করে হুয়াং বলেন, উচ্চমানের উন্নয়নের জন্য দেশটির সাধনা, পরিবেশ সুরক্ষা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমনে ভিওলিয়াকে আরও বেশি সুযোগ করে দিয়েছে।

পিকিং ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ নিউ স্ট্রাকচারাল ইকোনমিক্সের ডিন জাস্টিন ইফু লিন, চায়না ডেইলির সাথে আগে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন চীনের অর্থনীতি এই বছর ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার অর্থ দেশটি বিশ্বের অন্যতম গতিশীল অর্থনীতির মধ্যে থাকবে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে।

এ ছাড়াও স্টারবাকস চায়নার সরকারী বিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ক্রিতে চৌ বলেন, চীন যেহেতু বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তার নীতিগুলোর ক্রমাগত উন্নয়ন করছে, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য পরিষেবাগুলোর ক্রমাগত মানোন্নয়ন করেছে, তাই এটা ভালো ফলাফল বয়ে আনছে।

চীনের বিপুল ভোগবাজারের দিকে ইঙ্গিত করে চৌ বলেন, ‘চীনে স্টারবাক্সের গল্প সবেমাত্র শুরু হয়েছে।’ কোম্পানিটি চীনে তার বিনিয়োগ বাড়াবে।

গত বছর, এটি কুয়াংতং প্রদেশের শেনচেনে স্টারবাকস চায়না ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার এবং চিয়াংসু প্রদেশের কুনশানে চায়না কফি ইনোভেশন পার্ক নির্মাণের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে।

লিয়াওনিং প্রাদেশিক বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক প্যান শুয়াং বলেন, চীনের উন্মুক্তকরণের ফলে দেশটিকে বিদেশী, ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগে ব্যবসার বিকাশের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

লিয়াওনিংয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ, অবস্থান এবং শিল্প ভিত্তির মতো অনেক অনন্য সুবিধা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত, ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কোম্পানির মধ্যে ১৬৫টি কোম্পানি এবং তাদের সহায়ক সংস্থা লিয়াওনিংয়ে ২৩৮টি বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত উদ্যোগে বিনিয়োগ করেছে।

তাদের মধ্যে, বিএমডব্লিউ ব্রিলিয়ান্সের মোট বিনিয়োগ রয়েছে ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান, যার শেনইয়াং উৎপাদন বেস বিশ্বের বৃহত্তম। বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী সৌদি আরামকো সেখানে বিনিয়োগ করেছে ৮৩.৭ বিলিয়ন ইউয়ান।

বিশ্বব্যাংকের উপ-প্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোস বলেছেন, এই বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এটি নিশ্চিত যে দেশটি ‘টেকসই, উচ্চ-মানের প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের পথে রয়েছে, যা আরও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে।

মাহমুদ হাশিম

বেইজিং।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn