বাংলা

চীন-ফ্রান্স সম্পর্কের ভিত্তি, দু’দেশের মানুষের গভীর বন্ধুত্ব ও সাংস্কৃতিক বন্ধন

CMGPublished: 2024-01-28 19:38:09
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৬০তম বার্ষিকীয় উদযাপন করছে চীন ও ফ্রান্স। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের পারস্পরিক অভিনন্দনবার্তা বিনিময়, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের ভিডিও ভাষণসহ নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে ঐতিহাসিক এ ক্ষণটি।

এ উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট সি শনিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে অভিনন্দন বার্তা বিনিময় করেন।

অভিনন্দন বার্তায় সি চিন পিং বলেন, ৬০ বছর আগে, চীন ও ফ্রান্স স্নায়ুযুদ্ধের কঠিন বরফ ভেঙ্গে জোটগত দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিশ্বের পরিস্থিতিকে সংলাপ ও সহযোগিতার সঠিক দিকে এগিয়ে নিতে তা ভূমিকা রেখেছে। ঐতিহাসিক ঘটনাটি এখনও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকীতে দুই জনগণ এবং মানবতার কল্যাণে অবদান রাখতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর সঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। একটি নতুন ভবিষ্যত উন্মোচন করার এবং চীন-ফ্রান্সের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও দৃঢ় ও গতিশীল করার সুযোগ হিসেবে এ ক্ষণটিকে কাজে লাগাতে চান তিনি।

কূটনৈতিক সম্পর্কের দীর্ঘ এ সময় পার করে বর্তমানে ফ্রান্স ইইউ-তে চীনের তৃতীয় বৃহত্তম অংশীদার, তৃতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ উৎসদেশ, এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশ। আর চীন এশিয়ায় ফ্রান্সের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যক সম্পর্কের পাশাপাশি, কয়েক দশক ধরে, চীন ও ফ্রান্সের জনগণ তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অন্বেষণে গভীর বন্ধন তৈরি করেছে।

চীন-ফ্রান্স সংস্কৃতি ও পর্যটন বর্ষে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি উজ্জ্বল প্রমাণ চীনের বিশ্বখ্যাত হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ডে। আন্তর্জাতিক এ উৎসবে প্যারিসের নটর-ডেম ক্যাথেড্রাল এবং বেইজিংয়ের টেম্পেল অফ হেভেন এ’দুটি বিশ্ব-বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আলো ছড়াচ্ছে। এখানে দুটি বরফের ভাস্কর্য চীন এবং ফ্রান্সের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

গত ৫ জানুয়ারী হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ডে ২০২৪ সালের চীন-ফ্রান্স সংস্কৃতি ও পর্যটন বর্ষের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘোষণা করে ভাস্কর্যগুলো উন্মোচন করেন ফরাসি পর্যটন মন্ত্রী অলিভিয়া গ্রেগোয়ার।

সি’র অভিনন্দন বার্তার প্রতিধ্বনি করে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ শনিবার তার বার্তায় বলেন যে, তিনি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং যুব বিনিময়কে উন্নীত করতে চীনা প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ। ফ্রান্স-চীনের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ক্রমাগত গভীর করতে চান তিনি, যাতে উভয় পক্ষই আগামী ৬০ বছরের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করতে পারে।

এর আগে চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য বেইজিংয়ে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট সি দুই পক্ষকে সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান সম্প্রসারণ এবং দুই জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানান। এ জন্য ফ্রান্সের সংস্কৃতি ও পর্যটন বছর এবং প্যারিস অলিম্পিক গেমসের সুযোগকে কাজে লাগানোর কথা বলেন তিনি।

২০২৩ সালের নভেম্বরে, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন-ফ্রান্স উচ্চ-স্তরের সংলাপ প্রক্রিয়ার ষষ্ঠ বৈঠকে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সাংস্কৃতিক পর্যটন এবং স্বাস্থ্যসহ ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ-মানের সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রমের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয় সে সময়।

প্যারিস ২০২৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে, চাইনিজ অলিম্পিক কমিটি ইভেন্ট চলাকালীন একটি ‘চায়না হাউস’ স্থাপন করবে, যাতে ক্রীড়া কৃতিত্ব প্রদর্শন, চীনা ক্রীড়া সংস্কৃতি প্রদর্শন এবং চীনা ও ফরাসি ক্রীড়া মহলের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় হবে। এ সব কার্যক্রম প্যারিস অলিম্পিক গেমসে আরও আগ্রহ-উচ্ছ্বাস তৈরি করবে বলে মনে করেন ফ্রান্সে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লু শায়ে।

লু আরও উল্লেখ করেছেন যে, মহামারী পরবর্তী যুগে চীন এবং ফ্রান্সের মধ্যে জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান উষ্ণ হয়েছে। ফ্রান্সে প্রায় ৪৬ হাজার চীনা শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে এবং ফ্রান্সের প্রায় ১ হাজার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় চীনা ভাষা কোর্স চালু করা হয়েছে। এ সব স্কুলের এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী চীনা ভাষা শিখছে।

এরই মধ্যে চীন, ফ্রান্সসহ ছয’টি দেশের সাধারণ পাসপোর্টধারীদের জন্য ১৫ দিনের ভিসা-মুক্ত প্রবেশ নীতি চালু করেছে, যা জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানকে আরও সহজ করেছে।

রাষ্ট্রদূত লু মনে করেন, ‘চীন-ফ্রান্স সম্পর্ক যদি একটি বড় বৃক্ষ হয়, তবে দুই জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব এর দৃঢ় ভিত্তি’।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা ব্যুরো, সিএমজি বাংলা।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn