বাংলা

২০২৩ সালে চীনের কূটনীতির প্রসারণ ও সফলতা

CMGPublished: 2024-01-10 13:59:15
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

গেল এক বছরে অর্থাত্ ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে দেখা যায় নানা পরিবর্তন। দ্বন্দ্ব ও ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। জটিল ও পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখে চীন কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতা ও উভয়ের জয় বাস্তবায়নের নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।

গতকাল (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হলো ২০২৩ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও চীনের কূটনীতি আলোচনাসভা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এ সভায় বলেছেন, গেল এক বছরে মানবজাতির ভাগ্য ও ভবিষ্যত এবং বিশ্বের উন্নয়ন সম্পর্কিত ব্যাপার নিয়ে চীনের কূটনীতি সবসময় ইতিহাসের সঠিক পথ ও যুগের উন্নয়নের পক্ষে রয়েছে। চীন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। সহযোগিতা ও দ্বন্দ্বের মধ্যে আমরা সবসময় সহযোগিতার পথ বেছে নিয়েছি, উন্মুক্তকরণ ও আবদ্ধতার মধ্যে আমরা উন্মুক্তকরণের পক্ষে থেকেছি। যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে আমরা শান্তি বেছে নেই, বহুপক্ষবাদ ও একতরফাবাদের মধ্যে আমরা বহুপক্ষবাদের পক্ষে থাকি। ন্যায়বিচার ও আধিপত্যের মধ্যে ন্যায়বিচার বেছে নিয়েছে চীন।

২০২৩ সালে চীনের কূটনীতি নানা ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। দেশের নেতাদের শীর্ষ বৈঠক বড় দেশ হিসেবে চীনের কূটনীতির নতুন স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছে। মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের সমাজ গড়ে তোলার ধারণা টানা ৭ বছরের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরাম এ প্রস্তাবের উচ্চ মানের উন্নয়ন নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ব্রিক্স ব্যবস্থার সদস্য বাড়ানো হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে সহযোগিতা করেছে। চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষসম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা সুপ্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্বের নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছ। চীনের উদ্যোগে সৌদি আরব ও ইরানের ঐতিহাসিক সমঝোতা বাস্তবায়ন হয়েছে; যা রাজনৈতিক পদ্ধতিতে আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষণালয়ের প্রধান ওয়াং ই ওয়ে মনে করেন, ২০২৩ সালে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উচ্চ মানের যৌথ নির্মাণ নতুন সোনালি এক দশকের উন্মোচন করেছে এবং বিচ্ছিন্নতা, নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মোকাবিলার শক্তিশালী একটি উদ্যোগ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। চীন ইতিবাচকভাবে বিশ্ব উন্নয়নের গণপণ্য প্রদান করেছে এবং বিশ্বের অভিন্ন উন্নয়ন এগিয়ে নিয়েছে।

চীনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষণা তহবিলের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের পরিচালক লি চেং ওয়েন মনে করেন, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে চীন যা এতদাঞ্চলের মানুষের শান্তি, উন্নয়ন ও সমঝোতার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছে।

২০২৩ সালের শুরুতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। কঠোর প্রচেষ্টায় দু’পক্ষের বিনিময় ও সংলাপ পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে স্থিতিশীল পথে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিশ্বায়ন থিঙ্ক ট্যাংকের পরিচালক ওয়াং হুই ইয়াও মনে করেন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। চীন-মার্কিন সম্পর্কের অনিশ্চয়তার মুখে দুটি দেশের উচিত্ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বিশেষ করে, সানফ্রান্সিসকোতে দু’নেতার মতৈক্য রক্ষা করা। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করলে উভয়ের কল্যাণ হবে; আর সংঘর্ষ হলে উভয়ের ক্ষয়ক্ষতি হবে। দু’দেশের উচিত্ যত বেশি সম্ভব সাংস্কৃতিক বিনিময়, আর্থ-বাণিজ্যিক আদানপ্রদান করা এবং বেসরকারি পদ্ধতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংবদ্ধ করা।

বড় দেশ হিসেবে চীনা বৈশিষ্ট্যময় কূটনীতি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। ২০২৪ সালের কূটনীতি বিষয়ক কাজ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, চীন আত্ববিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীল, উন্মুক্তকরণ ও সহনশীল, ন্যায়বিচার, সহযোগিতা ও উভয়ের জয়সহ কূটনৈতিক নীতিতে অবিচল থাকবে। নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে। চীন-আফ্রিকা ফোরাম, বোয়াও ফোরাম, চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা ও বিশ্বের অভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম ফোরামসহ নানা অনুষ্ঠান ভালভাবে আয়োজন করবে।

২০২৪ সালে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি’ উত্থাপনের ৭০তম বার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজ করবে চীন। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘর্ষ, ইউক্রেন সংকটসহ বিশ্ব ও আঞ্চলিক ইস্যুর সমাধানে গঠনমূলকভাবে অংশ নেবে। আরও বেশি চীনা পরিকল্পনা, চীনা বুদ্ধি ও বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে কল্যাণকর গণপণ্য প্রদান করবে চীন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn