প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তার তাৎপর্য
খ্রিস্টিয় নববর্ষ ২০২৪ উপলক্ষ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং একটি শুভেচ্ছা বার্তা দেন। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বিদায়ী ২০২৩ সালে চীনের মানুষের কঠোর পরিশ্রম মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি নতুন বছরে করণীয় সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দেন।
আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা বিশেষজ্ঞ বয়ানে, প্রেসিডেন্ট সি’র নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তার তাৎপর্য বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো।
প্রেসিডেন্ট সি তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, ২০২৩ সাল কঠিন ছিল, তবে চীন স্বস্তির পা ফেলেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও এর শীর্ষ নেতা সি চিনপিংয়ের দূরদর্শী নির্দেশনায় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চীনের মানুষ কঠিন সময়কে স্বস্তির সময়ে পরিণত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র প্রাক্তন সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কমরেড সি চিনপিং সত্য কথা তুলে ধরেছেন, বাস্তব কোনো পরিস্থিতিকে আড়াল না করে।
তার বিশ্লেষণে, চীন স্বস্তির পা ফেলেছে, এর মানে হলো, গত বছর আমরা দেখেছি চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দুনিয়ার একটা ষড়যন্ত্রের জাল প্রবল হয়ে উঠেছিল। সেটাকে অতিক্রম করে চীন যে তার স্বভাবিক স্ট্রাটেজিক লক্ষ্যগুলোকে অব্যাহত রেখে অগ্রসর হতে পেরেছে এবং কোনো রকম টার্নিং পয়েন্টে ভেতর ঘটনাবলীকে যেতে দেয়নি, এটাই হলো তার স্বস্তির ভিতরে অবস্থান করার প্রধান লক্ষ্মণ। আর চলতি বছরেও সেই ধারাটি অব্যাহত থাকবে তার ভিত্তি কিন্তু এরই মধ্যে রচিত হয়ে গেছে।
২০২৩ সাল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য খারাপ বছর হলেও চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি শুভেচ্ছা বার্তায়, গুণগত মানসম্পন্ন সবুজ স্মার্ট উন্নয়ন, চীনের বৈশিষ্টময় আধুনিকায়ন ও গ্রামীন পুনরুজ্জীবনের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন।
কিন্তু, কীভাবে চীন বিশ্ব অর্থনীতির এ দুর্দশার মধ্যেও অসাধ্য সাধন করলো?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, চীন যে অভূতপূর্বভাবে উন্নয়নের ধারায় অগ্রসর হতে পেরছে, এর মৌলিক কারণ চীনের সমাজ ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকূলে। চীন সাম্যের পথে, সমাজতন্ত্রের অভিমুখে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের পথে অবিচল থেকে অগ্রসর হয়েছে। এই আশ্চর্য ঘটনার কারণ হলো, চীনের সমাজ ব্যবস্থা এবং তার নেতৃত্বেৃ কমিউনিস্ট পার্টি, তার পলিট ব্যুরো এবং কমরেড সি চিনপিংয়ের নেতৃত্ব। তারা যে সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছেন, ভিন্ন একটা পথে অগ্রসর হচ্ছেন, সেটাই তার কারণ। তিনি এ প্রসঙ্গে চীনের গুণগত উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন।
২০২৩ সালে সি-পুতিন ও সি-বাইডেন শীর্ষ বৈঠকসহ বেশ কিছু সফর ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে যোগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সি। শুভেচ্ছা বার্তায় চীনের প্রেসিডেন্ট কূটনৈতিক সাফল্যের কথাও তুলে ধরেছেন।
এ প্রসঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এখন যেটা গ্লোবাল ইকোনমি বা গ্লোবাল পলিটিক্যাল সিচুয়েশন বলা হয় সেখানে পশ্চিমা দুনিয়ার আধিপত্য। মুনাফার জন্য তারা বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক রাখে অর্থাৎ তাদের কূটনীতি ‘প্রফিট মোটিভ’। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমটা হচ্ছে, তারা প্রকৃত আন্তর্জাতিকতাবাদী হিসেবে সমগ্র বিশ্ব সভ্যতাকে নিয়ে একসঙ্গে অগ্রসর হতে চায়। আর এই যে প্রসপারিটি (সমৃদ্ধি) শেয়ার করতে হবে, এটা শুধু দেশের ভিতরে না এটা গ্লোবালি, বিশ্বের সব দেশকে অংশীদার করার নীতির ভিত্তিতে চীন চলে।
প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগকে সুনির্দিষ্ট করেছেন, এটা শুধু আপ্ত বাক্য না, এবং সেই ধারায় চলার কারণেই তার কূটনৈতিক সাফল্যগুলো এসেছে।
চীন শুধু নিজেকে উন্নত করে না, বরং বিশ্বকেও আলিঙ্গন করে এবং বড় দেশের দায়িত্ব পালন করে- শুভেচ্ছা বার্তায় প্রেসিডেন্ট সি’র এ বক্তব্যের উচ্চমূল্যায়ন করেন সিপিবি সভাপতি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ যখন ব্রিটিশ কলোনি ছিল, তখন তারা বলতো হোয়াটম্যানস বার্ডেন- সাদা চামড়ার মানুষের বোঝা, আমাদের সিভিলাইজেশনকে সরিয়ে দিতে হবে। কমরেড সি চিনপিং কিন্তু উল্টো কথা বলছেন, তিনি বলছেন, বৈচিত্রের মধ্য দিয়েই আমরা বিশ্বসভ্যতাটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। সুতরাং এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যখন কেউ দেশ পরিচালন করে তখন স্বাভাবিকভাবেই সকলকে মিলিয়ে, সকলকে অংশীদার করেই যাতে উন্নয়নের সুফল সবার মাঝে বন্টিত সেই চেষ্টার ভিতরেই কিন্তু গণচীন নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা দেখবো সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
আগামী বছর গণচীন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে চীনের বৈশিষ্টময় আধুনিকায়ন বেগবান করা এবং চীনের মানুষের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট সি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, চীনের নবজাগরণের বার্তা এরই মধ্যে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। এটাকে আরও দৃঢ়ভিত্তি ও অপরিবর্তনীয় করার জন্য, এখন এর বৈরি শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কোনোভাবেই যাতে পিছপা হতে না হয়, সেটাকে নিশ্চিত করতে হবে। এবং সেই পথেই গণচীন অগ্রসর হচ্ছে বলে তিনি মনে করি।
সুতরাং যে পরিকল্পনা এবং যে স্বপ্ন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও তার নেতা কমরেড সি চিনপিং বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন, সেই স্বপ্নের পথ আরও নতুন নতুন সাফল্য বয়ে আনবে এবং সারাবিশ্ব এতে উপকৃত হবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা ব্যুরো
সিএমজি বাংলা।