বাংলা

চীন ও বাংলাদেশ: ‘হৃদয় থেকে হৃদয়ে, ভবিষ্যতে’

CMGPublished: 2023-10-01 19:55:29
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। ক্রোড়পত্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের একটি সুলিখিত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে।

চীনা রাষ্টদূতের নিবন্ধটি দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। এর প্রথম অংশে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের গতিশীল নেতৃত্বে চীনের বিস্ময়কর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন। নিবন্ধের দ্বিতীয় অংশে তিনি চীন-বাংলাদেশ চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ ও সযোগিতামূলক সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।

নিবন্ধের শুরুতে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন লিখেছেন, ‘গত ৭৪ বছরে চীনের কমিউনস্ট পার্টির (সিপিসি) বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চীন যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে আর সৃষ্টি করেছে দুটি বিস্ময়, বিশ্বের অন্য কোথাও যার জুড়ি মেলা ভার, যেমন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক স্থিতিশীলতা’।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তার নিবন্ধে আরও বলেছেন, চীন যে শুধু চীনা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সমাজতন্ত্রের পথ ধরে নিজের জনগণ ও মাতৃভূমির গভীর উন্নয়ন সাধন করেছে তা নয়, বরং চীনের উন্নয়নের ফলে গোটা বিশ্ব লাভবান হয়েছে এবং এর মাধ্যমে চীন গোটা বিশ্বকেই একটি উন্নত স্থানে পরিণত করতে পেরেছে। সর্বক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থী সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের মাধ্যমে চীন তার প্রথম শতবর্ষী লক্ষ্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন এখন একটি মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার দ্বিতীয় শতবর্ষী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

করোনা মহামারির পর চীনের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন লিখেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলেও চীন তার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাত্তা উদ্যোগ ও বিশ্বসভ্যতা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের বিশ্বসম্প্রদায় গড়ে তুলতে চীনের এ সব প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মহল ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। এ সব প্রস্তাব বাস্তবায়নে একটি মূল হাতিয়ার ‘বেল্ট এন্ড রোড উদ্যোগ’-বিআরআই’র ১০ বছর পূর্তির কথাও তুলেও ধরেন তিনি।

নিবন্ধের দ্বিতীয় অংশে চীন-বাংলাদেশের গভীর সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম বিআরআই উদ্যোগে যোগ দেয়। আর এর সুফলও বাংলাদেশে পাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। বিআরআইয়ের আওতায় রেলসংযোগসহ বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, দাশেরকান্দি পয়য়োঃশোধনাগার, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আরও অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অনেকগুলো বাস্তবায়নাধীন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন নিবন্ধে লিখেছেন, দুই জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে। ১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা, যৌথ উন্নয়ন এবং উভয়ের জন্য সমান লাভজনক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২০১৬ সালে দু’দেশের সম্পর্ক কৌশলগত সহযোগিতার স্তরে উন্নীত হয় এবং ২০১৯ সালে তা আরও গভীরতর হয়।

গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই নেতা দু’দেশের সম্পর্কের অধিকতর উন্নয়নে কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় পুনরুজ্জীবনে চীন বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। অন্যদিকে, একচীন নীতির বিষয়ে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করে বেইজিং।

নিবন্ধের একটি আবেগঘন অংশে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশি কিশোরী আলিফা চীনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তার চিঠির জবাব দিয়েছেন। এ থেকে চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব যে দু’দেশের জনগণের মধ্যে অধিকতর যোগাযোগকে উৎসাহিত করে তা প্রমাণিত হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চীনের হাংচৌতে চলমান এশিয়ান গেমসের কথা উল্লেখ করে নিবন্ধের শেষ অংশে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন লিখেছেন, এ গেমসে প্রতিপাদ্য ‘হুদয় থেকে হৃদয়ে, ভবিষ্যতে’র মতোই চীন এবং বাংলাদেশ হৃদয় থেকে হৃদয়ে এবং হাতে হাতে রেখে পথ চলবে। এর মাধ্যমে চীনা জাতির মহান জাতির পুনরুজ্জীবন এবং বাংলাদেশের সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn