যুক্তরাষ্ট্র একদিকে বৈরী আচরণ করছে, অন্যদিকে সহযোগিতার কথা বলছে
জুন ৬: সম্প্রতি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নে আবারও পরস্পরবিরোধী আচরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কুড়িতম শাংরি-লা সংলাপে তাইওয়ান ইস্যুতে কথাকথিত ‘ন্যাভিগেশন স্বাধীনতা’-র কথা বলেছেন এবং মার্কিন সামরিক জাহাজ তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রমের সময় চীনের কাছ থেকে ‘বিপদজনক বাধা’ পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন; অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কূটনীতিবিষয়ক সহকারী সচিব গত ৪ জুন চীন সফর করেছেন, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতার উপায় অন্বেষণ করা।
একদিকে বৈরিতা, অন্যদিকে সংলাপ ও সহযোগিতার তথাকথিত উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন পরস্পরবিরোধী আচরণের সাথে সকলেই পরিচিত। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এহেন মার্কিন আচরণ দেশটির অন্যায্য কৌশলের অংশবিশেষ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্যবাদী তত্পরতা চালাতে অভ্যস্ত এমন এক পরাশক্তি, যার সত্যিকারের কূটনৈতিক সদিচ্ছা নেই।
বাস্তবতা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্যারাডক্সিকাল আচরণের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের বিকৃত রাজনৈতিক পরিবেশ ফুটে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ভুল করে নিজের ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই পটভূমিতে, ‘চীনের প্রতি কঠোর হওয়া’-র নীতি গ্রহণ করেছে ওয়াশিংটন। সেখানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মানসিকতা ও সদিচ্ছাসম্পন্ন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব নেই বলেই মনে হয়।
বস্তুত, ওয়াশিংটনের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ একদিকে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ তো রাখতে চান, আবার নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে চীনের ওপর চাপিয়ে দিতেও চান। এবারের শাংরি-লা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো তথাকথিত ‘চীনের হুমকি তত্ত্ব’ প্রচার করেছে। এতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী চিন্তা-চেতনায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অবস্থার সাথে এমন আচরণ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বর্তমানে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটজনক। দুই পার্টি দর কষাকষির মাধ্যমে ঋণ-সংকটের সাময়িক সমাধান করেছে বটে, তবে সমস্যার আসল সমাধান হয়নি। ব্লুমবার্গসহ বিভিন্ন মিডিয়া জানাচ্ছে, সম্প্রতি মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চীনের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতি; তাই, দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখা এবং যৌথভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার সাম্প্রতিক চীন সফরের গুরুত্বপূর্ণ কারণ মার্কিন ঋণসংকট নিয়ন্ত্রণের উপায় অন্বেষণ করা। তা ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তাররোধ, এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চালানোর প্রয়োজনও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মার্কিন পরস্পরবিরোধী নীতি দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের অনেকেই এখনও অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে শেখেননি; সহাবস্থানের নীতিও তাঁরা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না বা বুঝতে চান না। অথচ, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রকে সবার আগে মনে রাখতে হবে যে, তাইওয়ান হচ্ছে চীনের তাইওয়ান; তাইওয়ান ইস্যু কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তা চীনাদের নিজস্ব ব্যাপার। তাইওয়ান ইস্যুতে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ চীনারা কখনই মেনে নেবে না। বিদেশি সামরিক জাহাজ চীনের সমুদ্রাঞ্চলে অবাধে চলাচল করতে পারে না। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল দেশকে ‘জাতিসংঘ সামুদ্রিক কনভেশন’ মেনে চলতে হবে।