বাংলা

মার্কিন হস্তক্ষেপ এশিয়া-প্যাসিফিকের স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ করবে: শাংরি-লা সংলাপ বিশেষজ্ঞ অভিমত

CMGPublished: 2023-06-04 19:13:22
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার এবং সমাধানের ওপায় অন্বেষণে শুক্রবার সিঙ্গাপুরে শুরু হয়েছে ২০তম শাংরি-লা সংলাপ। তিন দিনের নিরাপত্তা সম্মেলনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা প্রধানসহ ৪৯টি দেশের ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা, সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অংশ নিচ্ছেন।

চীনের স্টেট কাউন্সিলর এবং জাতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু ‘চীনের নতুন নিরাপত্তা উদ্যোগ’ বিষয়ে বক্তৃতা করেন এবং তার মার্কিন প্রতিপক্ষ, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব’ শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেন।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি ২০২২ সালে চীন কর্তৃক প্রস্তাবিত গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ- বা বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন। তিনি একে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক সংঘাতের মূল কারণগুলোকে দূর করার এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি ও উন্নয়নের প্রচারের একটি পদ্ধতি হিসাবে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন যথারীতি অভিযোগ করেন যে, দুই সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংকট ব্যবস্থাপনার জন্য আরও ভাল ব্যবস্থার বিষয়ে চীন সহযোগিতা করছে না। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি দৃশ্যত চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফু যে তার সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাই বোঝাতে চেয়েছেন। লয়েড অস্টিন চিরাচরিত পন্থায় ‘চীনা হুমকি তত্ত্ব আর চীনের অসহযোগিতাকে প্রধান করে তোলেন এবং অধিকতর শক্তিশালী জোট গঠনের কথা বলেন।

দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টতই দুটি বিপরীতমুখী নিরাপত্তা পন্থা খুঁজে পান।

চীনের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইয়ান চানইয়ো বলেন, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ কনসেপ্ট পেপারে বর্ণিত সাধারণ, ব্যাপক, সহযোগিতামূলক এবং টেকসই নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চীন। এটি অন্য দেশের নিরাপত্তার ব্যয়ে তার নিজস্ব নিরাপত্তা স্বার্থ অর্জন করবে না। পরিবর্তে, চীন তার নিজস্ব নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করে, সর্বশ্রেষ্ঠ ওপায়ে সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

শাংরি-লা ডায়ালগের কর্মকর্তা ও পণ্ডিতদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে এই অঞ্চলে মার্কিন হস্তক্ষেপ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে একটা ছোট বৃত্ত তৈরি করতে পারে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করবে।

সরকারি সংস্থা ইন্দোনেশিয়া ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউটের গভর্নর অ্যান্ডি উইডজাজান্তো বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরা এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আসিয়ান কেন্দ্রিকতার উপর নির্ভর করি। কিন্তু হঠাৎ করেই অন্য ধরনের বহুপক্ষীয়তা তৈরি করার জন্য অনেক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, আমরা একে মিনিপার্টারালিজম বলি। এর বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অংশীদারদের দ্বারা শুরু হয়েছে, তাই আমরা অনুভব করছি যে অঞ্চলটি শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠেছে’।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাবাদ এবং সুরক্ষাবাদ প্রচার করতে চাইছে এবং এটি ‘চীনা হুমকি’ তত্ত্বকে অতিরঞ্জিত করছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো অ্যালান চং বলেন, ‘কেন আপনি চীনের সাথে একটি খুব স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বিপর্যস্ত করতে চান? আমি মনে করি এশিয়ার অনেক অংশ, যদি আপনি বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখেন, উদাহরণ হিসেবে আপনি যদি কেবলমাত্র সাপ্লাই চেইনকেই দেখেন, এশিয়ার প্রত্যেকে চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। কারণ চীন এশিয়ার প্রতিটি দেশের সাথে অত্যন্ত উৎপাদনশীল সহযোগিতায় কাজ করেছে এবং এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও’।

শাং-রি লা সংলাপে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে, তবে এ পার্থক্য দেশ দুটির অভিন্ন স্বার্থে সহযোগিতা জোরদারে কোনো বাধা নয়

লি উল্লেখ করেন যে, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অত্যাবশ্যক, এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতার তিনটি নীতি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একে অপরের সঙ্গে চলার সঠিক উপায়।

চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যদি একটি ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ হয়, তবে তা বিশ্বের জন্য একটি অসহনীয় যন্ত্রণা হবে।

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি দায়িত্বশীল প্রধান দেশের মতো আচরণ করার এবং স্বার্থের কারণে বিভিন্ন মহলে সংঘর্ষের প্ররোচনা বনধ করার আহ্বান জানান। চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি নতুন ধরনের প্রধান-দেশের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে উল্লেখ করে লি বলেন, এ জন্য মার্কিন পক্ষকে আন্তরিকতা দেখাতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক এবং সামরিক সম্পর্কের অবনতি বন্ধ করতে এবং তাদের পুনরুদ্ধারে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn