বাংলা

সমুদ্রে পারমাণবিক বর্জ্যপানি নিষ্কাশনের জাপানি পরিকল্পনা বৈধতা পাবে না

CMGPublished: 2023-05-23 15:40:31
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মে ২৩: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষসম্মেলনে ফুকুশিমার পারমাণবিক বর্জ্যপানির সমুদ্রে নিষ্কাশনের পরিকল্পনার বৈধতা আদায়ের জাপানি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য বিরোধিতার কারণে, শীর্ষসম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে জাপানের এই পরিকল্পনার পক্ষে কোনো বক্তব্য উল্লেখ করা হয়নি। এতে বরং শুধুমাত্র ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার স্বাধীন তদন্তকে সমর্থনের’ কথা বলা হয়েছে।

এটা মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাপানি গণমাধ্যম জানায় যে, জাপানি সরকার এপ্রিল মাসে জি-৭ গোষ্ঠীর জলবায়ু, জ্বালানি ও পরিবেশ মন্ত্রীদের বৈঠকের ফলাফল নথিতে সমুদ্রে পারমাণবিক বর্জ্যপানি নিষ্কাশনের পরিকল্পনার পক্ষে বক্তব্য যোগ করতে চাইলেও, তা সফল হবার সম্ভাবনা কম। কারণ, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশ শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। বাস্তবতা হলো, এপ্রিল মাসের ওই সম্মেলনে জাপানের ইচ্ছা পূরণ হয়নি।

তখন জার্মান পরিবেশমন্ত্রী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ‘সমুদ্রে পারমাণবিক বজ্যপানি নির্গমনকে স্বাগত জানানো উচিত্ নয়’। তবে জাপান সরকার হাল ছাড়েনি। তারা বরং অন্য একটি কৌশল অবলম্বন করে। এবারের জি-৭ শীর্ষসম্মেলনে জাপানি পক্ষ বিশেষভাবে অংশগ্রহণকারী রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের কর্মীদের জন্য ফুকুশিমা প্রিফেকচারে উত্পাদিত খাবার, অ্যালকোহল ও স্ন্যাকস সরবরাহ করে। এর উদ্দেশ্য, সমুদ্রে পারমাণবিক বর্জ্যপানি ফেলার পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন আদায় করা।

এর আগে ফুকুশিমার খাবারে বারবার অত্যধিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি ধরা পড়েছিল। তাই জাপানের পদক্ষেপের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। জাপানের কিয়োডো নিউজ এজেন্সি ২০ মে এক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে যে, জি-৭ শীর্ষসম্মেলনে ফুকুশিমায় উত্পাদিত খাদ্য ব্যবহার বিতর্কের সৃষ্টি করে।

জি-৭ সর্বত্র ‘ঐক্য’ দেখাতে চায়। অথচ এখানে সমুদ্রে পারমাণবিক বর্জ্যপানি নিষ্কাশনসংক্রান্ত জাপানের পরিকল্পনা বিশাল বিতর্কের সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক সমাজে এই পরিকল্পনা আরও বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। গত দুই বছরে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ জাপানের প্রতিবেশী দেশগুলো এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলো এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করে আসছে এবং জাপানি পক্ষকে সঠিক পন্থা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

এদিকে, জি-৭ শীর্ষসম্মেলন চলাকালে জাপানের অনেক জায়গায় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তাঁরা ‘সমুদ্রে পারমাণবিক বর্জ্যপানির নিষ্কাশন একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ’ বলে শ্লোগান দিয়েছে।

কেন জাপান সরকারের এই পরিকল্পনা জনসাধারণের সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে? কারণ, অধিক থেকে অধিকতর গবেষণায় দেখা গেছে যে, সামুদ্রিক বাস্তুশাস্ত্র এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর এই আচরণের ক্ষতি অপরিসীম। জাপানি পক্ষ দাবি করেছে যে, অ্যাডভান্সড লিকুইড প্রোসেসিং সিস্টেম বা এএলপিএস দ্বারা বিশুদ্ধ করার পর পারমাণবিক বর্জ্যপানি নিরাপদ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ফুকুশিমার পারমাণবিক দূষিত পানিতে কমপক্ষে ৬০ ধরণের রেডিওনুক্লাইড রয়েছে এবং এর ঘনত্ব এতো বেশি যে, এটি বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে সম্পূর্ণরূপে ফিল্টার করা সম্ভব নয়।

গ্রিনপিস সংস্থা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন যে, জাপান তার নিজের স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে "মিথ্যাচার করছে; অন্য উপায় গ্রহণ না করে, পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ”।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা, জাপানের সমুদ্রে পারমাণবিক বর্জ্যপানি নিঃসরণ পরিকল্পনার বিষয়ে, এখনও চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। অথচ, জাপান সরকার সমুদ্রে নিষ্কাশন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ জুন মাস শেষের আগে শেষ করার এবং জুলাই মাসের শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে বর্জ্যপানি ফেলার কথা ঘোষণা করেছে।

বস্তুত, জাপান কোনোভাবেই এ পরিকল্পনাকে বৈধতা দিতে পারে না। পুরো বিশ্বের জন্য তার এহেন আচরণ হবে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। এটা চরম স্বার্থপরতার নামান্তর। জাপানের উচিত পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলার পরিকল্পনা বাতিল করা। (লিলি/আলি

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn