বাংলা

২০২৩ বসন্তে চীনা প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক কার্যক্রম (১)

CMGPublished: 2023-05-15 15:26:43
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মে ১২: ২০২৩ সালের বসন্তকালে চীন ও বৈদেশিক বিনিময় সুশৃঙ্খলভাবে পুনরায় শুরু হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক কার্যক্রম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বেইজিং সময় ১০ই মার্চ মধ্যরাতে, একটি বড় সংবাদ বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে। "গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, সৌদি আরব ও ইরান বেইজিংয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। তিনটি দেশ ঘোষণা করেছে যে, সৌদি আরব ও ইরান উভয়ই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সম্মত হওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।"

৬ থেকে ১০ই মার্চ পর্যন্ত, চীনের দুই অধিবেশন চলাকালীন, সৌদি ও ইরানের প্রতিনিধিদল বেইজিংয়ে আলোচনা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুটি প্রধান দেশ, যারা ঐতিহাসিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংঘাতের মতো জটিল সমস্যাগুলির কারণে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধে জড়িয়ে ছিল এবং সাত বছর ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছে, তারা বেইজিংয়ে হাত মিলিয়েছে।

এই ঐতিহাসিক সমঝোতা প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত প্যাটার্নে এটি একটি বড় পরিবর্তন।

কিন্তু এ বড় পরিবর্তন সহজে হয়নি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সৌদি আরব সফর করেন এবং উভয় পক্ষ একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট চীন সফর করেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান ও আফ্রিকান বিষয়ক বিভাগের উপ-মহাপরিচালক ছাই ওয়েই মিং বলেন:

"এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ-পর্যায়ের বিনিময়ের সময়, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্যক্তিগতভাবে সৌদি আরব ও ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। যা প্রমাণ করে যে, ইস্যু যত জটিলই হোক না কেন এবং চ্যালেঞ্জ যতই তীব্র হোক না কেন, যতক্ষণ পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সমতাসম্পন্ন সংলাপ চলবে, ততক্ষণ একটি পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা যাবে।"

এই ঐতিহাসিক "বেইজিং সংলাপের" অল্প সময়ের মধ্যেই, ২৮শে মার্চ, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। গত ৬ এপ্রিল বেইজিংয়ে সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়। চীনের উপস্থিতিতে সৌদি আরব ও ইরান অবিলম্বে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ঘোষণা দিয়ে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে।

বেইজিংয়ে সৌদি আরব ও ইরানের সংলাপ হল শান্তির বিজয় এবং তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত ‘বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগের’ সফল অনুশীলনের পাশাপাশি, শান্তি স্থাপনে চীনের সক্ষমতা ও সাহস বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে।

২০ মার্চ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মস্কো যান। পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর সেটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর।

প্রেসিডেন্ট সি’র রাশিয়া সফর সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সফরের সময়, দুই রাষ্ট্রপ্রধান প্রাসঙ্গিক প্রধান ইস্যুতে দীর্ঘ সময় ধরে গভীর আলোচনা করেন এবং যৌথভাবে "নতুন যুগে সার্বিক কৌশলগত সহযোগী অংশীদারিত্ব গভীর করার বিষয়ে চীন-রুশ যৌথ বিবৃতি" এবং "২০৩০ সালের মধ্যে চীন-রাশিয়ান অর্থনৈতিক সহযোগিতার মূল দিকনির্দেশনা পরিকল্পনার যৌথ বিবৃতিতে" স্বাক্ষর করেন। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ নথি পরবর্তী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করে।

প্রেসিডেন্ট সি’র রাশিয়া সফর শুধুমাত্র বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার যাত্রা নয়, শান্তির যাত্রাও বটে। যা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে। চীনের প্রস্তাব এক বাক্যে সংক্ষেপে বলা যায়, শান্তি এগিয়ে নেওয়া এবং আলোচনা উন্নীত করা। প্রেসিডেন্ট সি আন্তরিকভাবে বলেছিলেন, "অবস্থা যত কঠিন হবে, শান্তির জন্য তত জায়গা রাখতে হবে; সংঘাত যত তীব্র হবে, সংলাপের প্রচেষ্টা তত বেশি হতে হবে।"

এ সফরের সময়, প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রেসিডেন্ট সিকে বলেছিলেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনের রাজনৈতিক মীমাংসার বিষয়ে চীনের প্রস্তাবগুলো তিনি যত্নের সঙ্গে বিবেচনা করছেন এবং শান্তি আলোচনার জন্য দেশটি উন্মুক্ত রয়েছে। এই বিষয়ে চীনকে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালনে স্বাগত জানায় মস্কো।

রাশিয়া সফরের মাত্র ৩৫ দিন পর, ২৬ এপ্রিল বিকেলে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ করেছিলেন। উভয় পক্ষ চীন-ইউক্রেন সম্পর্ক এবং ইউক্রেনের সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেছে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন যে, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক মীমাংসার বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে গভীর যোগাযোগের জন্য ইউক্রেন ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠাবে চীন। শান্তি পুনরুদ্ধার করা এবং কূটনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বাগত জানান জেলেনস্কি।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn