বাংলা

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া "প্যান্ডোরার বাক্স" খোলার পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে: সিএমজি সংবাদ পর্যালোচনা

CMGPublished: 2023-03-15 14:48:56
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মার্চ ১৫: স্থানীয় সময় ১৩ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার নেতারা বৈঠক করেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৪৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পুরো পরিকল্পনাটি ২০৫৫ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক সাবমেরিন খাতে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার কয়েকদিন আগে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার বোর্ড অফ গভর্নরদের মার্চের বৈঠকটি ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হয়। চীনের উদ্যোগে সংস্থাটি আন্তঃসরকারি আলোচনার আকারে টানা সপ্তমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে পারমাণবিক সাবমেরিন সহযোগিতার বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে। অনেক দেশ এই সহযোগিতার দৃঢ় বিরোধিতা করছে।

সব পক্ষের উদ্বেগ উপেক্ষা করে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন সহযোগিতা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারা বহুপাক্ষিক ঐকমত্যের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ভুল ও বিপজ্জনক পথে আরও সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, অনিবার্যভাবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ প্রচেষ্টা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে, এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা উত্সাহিত হবে। এটা অন্তহীন ঝামেলাসহ ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খোলার মতো ব্যাপার।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ (এনপিটি) চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী, কিন্তু তারা বিপরীত দিকে ছুটেছে। তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা এনপিটি-র লক্ষ্য ও নীতি, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সংবিধান এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় পারমাণবিক মুক্ত অঞ্চল চুক্তির প্রাসঙ্গিক বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, "পারমাণবিক ষড়যন্ত্র" হোয়াইটওয়াশ করার জন্য, এই তিনটি দেশ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় অনেকগুলো ব্ল্যাক-বক্স অপারেশন পরিচালনার চেষ্টা করেছে। এগুলোর মধ্যে ছিল সংস্থার সচিবালয়কে সুরক্ষা ছাড়ের ব্যবস্থা করতে বাধ্য করা, সংস্থার প্রাসঙ্গিক রেজোলিউশনে সংশোধন আনা, ইত্যাদি। কিন্তু এসব অপচেষ্টা বিফলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন সহযোগিতা নিয়ে তিন দেশের বেপরোয়া ঘোষণা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতের সম্পূর্ণ বিপরীত।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক কৌশলগত সুবিধার জন্য একটি ছোট বৃত্ত গঠন করতে চায়, আঞ্চলিক সংঘাত ও সংঘর্ষের উসকানি দেওয়ার ন্যাটোর রুটিন অনুসরণ করতে চায়। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা সত্ত্বেও, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন খাতে সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর্থিক দিক বিবেচনা করেও। শুরুতে, ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রায় ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রচলিত সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, কিন্তু মাঝখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন এ চুক্তি কেড়ে নিয়েছে। এখন প্রকল্পের পরিমাণ ২৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। এতে যে সকল আমেরিকান এবং ব্রিটিশ সামরিক উদ্যোগ সারা বিশ্বের রক্ত চুষছে, সেগুলো আরও চাঙ্গা হবে। চুক্তিটি আগামী ৩০ বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন খাতে সহযোগিতা কোনোভাবেই এসব দেশের নিজস্ব বিষয় হতে পারে না। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সকল সদস্যরাষ্ট্রের স্বার্থ এর সাথে জড়িত। এ ক্ষেত্রে আন্তঃসরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল সদস্যরাষ্ট্রের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের লোকেরা কখনই ভুলে যাবে না যে, তারা স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া থেকে সরে এসেছে বলেই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এই মূল্যবান পরিস্থিতি ধ্বংস করা যায় না, এবং এখানকার মানুষ তা কখনও হতেও দেবে না।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn