বাংলা

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে চীনের দুই অধিবেশন ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের খবর ফলাও প্রচার

CMGPublished: 2023-03-12 19:42:30
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

গত ৫ মার্চ থেকে চীনের জাতীয় গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন-সিপিপিসিসি ও জাতীয় গণকংগ্রেস-এনপিসির বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়। এ দুটি অধিবেশনকে একসঙ্গে ‘দুই অধিবেশন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

চীন ও গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ‘দুই অধিবেশনে’র কার্যক্রম এবং এতে চীনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও ফলাও প্রচার পেয়েছে। বাংলাদেশে প্রধান সব জাতীয় দৈনিক, বেতার-টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টালে দুই অধিবেশনের সচিত্র খবর প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। অধিবেশন শুরুর প্রথম দিন থেকেই এ দুটি সম্মেলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ আসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে।

এ সব খবর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যয়, তৃতীয় মেয়াদের সি চিন পিংয়ের চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়া, তার সামনে চ্যালেঞ্জ এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন সরকার গঠন।

সিপিপিসিসি’র অধিবেশন শুরু হয় ৫ মার্চ। ওই দিনই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো তাদের আন্তর্জাতিক পাতায় এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম করে ‘ক্ষমতার লাগাম সি’র হাতেই; আসছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী’।

সংবাদটিতে চীনের প্রায় তিন হাজার আইনপ্রণেতার উপস্থিতিতে এনপিসির বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রেসিডেন্ট সি’কে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই।

এ ছাড়া লি ছিয়াং যে নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে কেতাদূরস্ত ও ভালো পরিচালক হিসেবে প্রশংসা করা হয়। তিনি চীনের ব্যবসা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং দেশের ব্যবসায়ী মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সদ্য-বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াংয়ের সরকারি কর্মপ্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা ব্যয় সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করে। এ সব সংবাদে চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ নির্ধারণে বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়।

৬ মার্চ দেশের বাণিজ্য বিষয়ক অন্যতম সংবাদপত্র বণিক বার্তা এবং ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে বড় খবর প্রকাশ করে।

বণিক বার্তার খবরের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিরক্ষা ব্যয় ৭.২ শতাংশ বাড়িয়েছে চীন’। খবরে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছর চীন তার প্রতিরক্ষা ব্যয় ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি ইউয়ান বা ২২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে ৭.২ শতাংশ। চীনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং তার বক্তব্যে চীনের সশস্ত্রবাহিনীকে যুদ্ধপ্রস্তুতি জোরদার করার কথা বলেছেন বলেও সংবাদগুলোতে উল্লেখ করা হয়।

তবে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকা দুটির সংবাদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কী কী কারণে চীন তার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়েছে।

প্রথমত: ২০২৭ সালে চীনের গণমুক্তি ফৌজের শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের কথা লিখেছে পত্রিকা দুটি। এ ছাড়া, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দ্বীপগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান মহড়া, তাইওয়ানে যুক্তর‍াষ্ট্রের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসির বিতর্কিত সফর, ন্যাটো ও জাপানের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- এসব কিছুই চীনকে তার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে বাধ্য করেছে।

চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধিতে পশ্চিমা কোনো কোনো মহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও চীনের এ বরাদ্দ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেটের মাত্র একচতুর্থাংশ বলেও উল্লেখ করা হয় প্রকাশিত সংবাদে।

এভাবে প্রতিদিনই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে চীনের দুই অধিবেশনের সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করা হয়।

তবে, ১০ মার্চ সি চিনপিং চীনের প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হওয়ার খবরটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে।

দেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ১১ মার্চ এ বিষয়ে তাদের আন্তর্জাতিক পাতায় একাধিক শিরোনাম করে। তিন কলাম সচিত্র প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল- ‘তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্বে সি’। সংবাদটিতে বলা হয়, বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট সি।

সি’র সামনে চার চ্যালেঞ্জ শিরোনামের দ্বিতীয় খবরটিতে চীনের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এবং তাইওয়ান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলা হয়। তাইওয়ান ইস্যুতে সি ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়।

১১ মার্চ চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লি ছিয়াংয়ের নিয়োগও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভালোভাবে এসেছে। এ সব খবরে বলা হয়, সাংহাইয়ের সাবেক এই পার্টি প্রধান অবশ্যই যোগ্য, তবে প্রেসিডেন্ট সি’র প্রতি গভীর আনুগত্য তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটিতে আসীন করেছে।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn