বাংলা

লাতিন আমেরিকায় অভিবাসী দুর্ঘটনার পিছনে আছে ‘আমেরিকান দুঃস্বপ্ন’

CMGPublished: 2022-09-20 13:02:55
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সেপ্টেম্বর ২০: ‘আমাদের সব শেষ’। মেক্সিকোর একজন মা হারমেলিন্ডা মন্টভের্দে এমন দুঃখ থেকে বের হতে পারছেন না। তাঁর ছেলে গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের সান অ্যান্টোনিও শহরে একটি অভিবাসী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে।

লাতিন আমেরিকান অভিবাসী যখন যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তখন সবার মনে একটি ‘যুক্তরাষ্ট্র স্বপ্ন’ ছিল। তবে তারা কল্পনা করতে পারে নি, এটি ছিল একটি ‘ওয়ান-ওয়েই টিকিট’। মার্কিন ফক্স নিউজ রোববারের খবরে জানায়, মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত রক্ষা ব্যুরোর কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ২০২২ অর্থবছরে (২০২১ সালের ১ অক্টোবর) থেকে এই পর্যন্ত ৭৮২জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন। এর আগে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিস্কো সীমান্তকে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক স্থল অভিবাসন রুট হিসেবে ঘোষণা করে।

লাতিন আমেরিকান অভিবাসী সমস্যা সমাধানের জন্য মার্কিন সরকার বেশকিছু পদ্ধতি নিয়েছে। যেমন, অনেক খরচ করে সীমান্তে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকানদের ধাওয়া করার জন্য হাজার হাজার নিরাপত্তা পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। তবে অভিবাসী সমস্যা প্রশমন না হলেও নিহতের ঘটনা ঘটছে।

মূল থেকে বলতে গেলে, লাতিন আমেরিকান অভিবাসী সমস্যা হল বহু বছর ধরে ‘মনরো মতবাদ’ মেনে চলা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের ফলাফল। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ বলেছিলেন, অভিবাসী সমস্যার কারণ হল দরিদ্রতা এবং কর্মসংস্থানের অভাব। যদি যুক্তরাষ্ট্র আরো বেশি অভিবাসী না চায় না, তাহলে মধ্য আমেরিকার রাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা উচিত। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় কথা বললেও কিছু করে না। লোপেজ গত মে মাসে বলেছিলেন, চার বছর স্থায়ী আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর উন্নয়নে কোনো অর্থ দেয় নি।

অন্যদিকে, অভিবাসী দুর্ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বিশৃঙ্খল অভিবাসী নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ট্রাম্প সরকারের সময়ে কঠোর অভিবাসী নীতি প্রয়োগ করা ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথগ্রহণের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, সার্বিকভাবে অভিবাসী প্রস্তাব সংস্কার করা হবে। তবে এখনো কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয় নি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে, ট্রাম্প সরকারের সময় ‘মেক্সিকোর থাকার’ নীতি উত্থাপিত হয়েছিল; তা আবারও চালু হয়েছে। মধ্য আমেরিকা দেশের অভিবাসীদের আবার মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দু’দেশের সীমান্তের অভিবাসী সমস্যা আরো অবনতি হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উচ্চপদস্থ উপদেষ্টা কৃষি ও’মারা ভিগ্নরাজ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভুল অভিবাসী নীতি এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র মানবিক আশ্রয় ব্যবস্থা বা কার্যকর অভিবাসী কাঠামো স্থাপন করতে পারে নি; এর ফলে অনেক প্রাণহানি হচ্ছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অভিবাসী সমস্যা ইতোমধ্যে দুই রাজনৈতিক পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাজনৈতিক যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যমেয়াদী নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। মার্কিন রাজনীতিক এক দিকে অভিবাসী সমস্যা সমাধানে নানা ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্যদিকে অভিবাসী ইস্যুর মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাধা দেওয়ার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। চলতি বছর, কিছু রিপাবলিকান পার্টির গভর্নর অনেকবার অভিবাসী ইস্যুকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাঁধে স্থানান্তর করেছে। রাজনৈতিক দলের লড়াইয়ে, এসব অভিবাসী যেন ফুটবলের মত এখানে-সেখানে যায়, তারা নিজের গন্তব্য খুঁজে পায় না। খাওয়া-দাওয়া এবং থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের মানবাধিকার মার্কিন রাজনীতিকের কাছে যেন স্বেচ্ছাচারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn