বাংলা

বাংলাদেশের নদ-নদীর গুরুত্ব

CMGPublished: 2022-07-01 14:42:33
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বাংলাদেশ একটি নদী-নির্ভর দেশ। শত-সহস্র নদী-নালা, খাল-বিল জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা দেশে। কিছুকাল আগ পর্যন্ত নদীই ছিল দেশবাসীর যোগাযোগের প্রধান পথ। নদীই ছিল ছোট্ট এই দেশটির বিচ্ছিন্নতা ও যোগাযোগের উপায়। ধীরে ধীরে প্রধান নদীগুলোর ওপর সেতু তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়ে উঠছে। নিঃসন্দেহে যোগাযোগের সহজলভ্যতাই মানুষের উন্নয়নের পথ খুলে দেয়। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, মানুষের জীবনাচরণ বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে নদীগুলোকে কেন্দ্র করে। নদীর ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে যুগ-যুগান্তরের সভ্যতা। তাই নিতান্ত অবহেলায় ফেলে রাখা নদীর ওপর গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।

বিশ্ব নদী দিবস

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি ‘বিশ্ব নদী দিবস’ পালন করা হয়। নদী রক্ষায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় বিশ্ব নদী দিবস। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে নদী রক্ষায় সচেতন করা। নদী রক্ষার তৎপরতা গোটা পৃথিবী জুড়েই এমন কার্যক্রম দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে নদী ও মানুষের জীবন অবিচ্ছেদ্য হওয়ায় নদী নিয়ে পরিবেশবাদীসহ সাধারণ মানুষের উদ্বেগ রয়েছে। নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার পালন করা হয় বিশ্ব নদী দিবস। এর আগে থেকে ২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে।

বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন

নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌ-পরিবহনযোগ্য হিসাবে গড়ে তোলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠন করা হয় এবং কিছু আইনের খসড়াও তৈরি করা হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে দেখা যায়, ২ বছর আগে খসড়া তৈরি হলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন এখনো প্রণীত হয়নি। এই ২ বছরে জাতীয় সংসদে অনেক বিল পাস হলেও এই খসড়া আইনটি এখনো অচল রয়ে গেছে। সরকার যদি দেশের নদীগুলোকে বাঁচানোর ব্যাপারে সত্যিই আন্তরিক হয়, তাহলে নতুন জাতীয় নদী রক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আইন পাসের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিলম্ব আমাদের নদীগুলোর অবস্থা আরও খারাপ করে তুলবে। কেননা একেরপর এক আমাদের সব নদীই প্রতিনিয়ত নিরবচ্ছিন্ন দখল ও দূষণের কারণে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে।

প্রয়োজন নদী শুমারি

ইতিহাসের নানা তথ্য থেকে দেখা যায়- ১৯ শতকের দিকে গোটা অঞ্চলে ছোট বড় নানা ধরনের নদীর সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজার নদী ছিল্ । পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বর্তমানে নদীর সংখ্যা সাড়ে চারশ। বেসরকারি হিসেবে তা ৭ শ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নদী শুমারিই হয়নি। তাই দেশের প্রকৃত নদীর সংখ্যা কত তা আসলে বলা মুশকিল। নদী শুমারি ও নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করলেই কেবল দেশের নদ-নদীর সঠিক হিসেব বের করা আনা সম্ভব।

নদী গবেষকদের মতে, নদী কখনো একা মরে না। নদীর মৃত্যু হলে পাড়ের জনপদও একটু একটু করে মরতে শুরু করে। রাজধানী ঢাকা যদি বুড়িগঙ্গার মৃত্যুর কারণ হয় তবে নদীর মৃত্যুতে ঢাকার অবস্থাও এখন মুমূর্ষু প্রায়! বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বংশী, বালু এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দুধারে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় এসব নদী ধীরে ধীরে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে প্রয়োজন দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থা করা।

নদী শাসন কাকে বলে? বা নদী শাসন কি?

দেশের নদীগুলোতে সাধারণা দুপারেই ভুমি ক্ষয় হয় ও পার ভাঙ্গে। এতে বাড়ি-ঘর, জমি-জমা হারিয়ে যায়। এমন ক্ষয় রোধ করার জন্য নদীপৃষ্ঠ থেকে পাড়ের উচ্চতায় বড় বড় পাথর ফেলে বা কংক্রিটের তৈরী ব্লক দিয়ে জলের স্রোত এবং পারের মাঝে বাঁধের মত বানিয়ে পারের ক্ষয় রোধ করা যায়। এটা নদী শাসনের কার্যকর একটি পদ্ধতি।

পাশাপাশি, নদীর নাব্যতা ও গভীরতা বজায় রাখার জন্য নদীর তলদেশের বালি উত্তোলন করা, পানি প্রবাহ ও নদীর পরিবেশ ধরে রাখা নদীশাসনের আরেকটি রূপ।

সেই সঙ্গে বড় ধরনের জলাধার নির্মাণ করা, হাওড়-বাওড়গুলোর সংস্কার করে পানি ধারণ করা ও পানির গুণগত মান বাড়ানোর মতো নানা উদ্যোগ বেশ সহজেই গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে করে দেশে মরুকরণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির চাপ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যাও রোধ করা যাবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn